তোমরা নিশ্চয় একটা ভুল ধারণা নিয়ে বসে আছ, পান্নার খনি থেকে পানা তুলে এনে বিক্রি করেই আমি আমার ব্যবসার পুঁজি জোগাড় করেছি। ভুল। আসলে, জীবনে যা করেছি আমি, যেখানে এসে উঠেছি, সব আমার নিজের চেষ্টায়। অনেক পরিশ্রম করে টাকা কামিয়ে দুটো ঝরঝরে স্টীমার কিনেছিলাম। সেই দিয়েই শুরু। বিশ্বাস না করলে এসে দেখে যেতে পার, খনি থেকে তুলে আনা পান্নাগুলো আজও আমার কাছেই আছে। একটাও নষ্ট করিনি কিংবা বিক্রি করিনি। সব সিয়েটাকে দিয়ে। দেব ঠিক করেছি।
ডায়রির পাতাগুলো আমিই পুড়িয়েছি। ঠিকই আন্দাজ করেছ। আর কেউ যাতে যেতে না পারে, সেজুন্যেই পুড়িয়েছিলাম পথের নির্দেশ। এখন ভাবি, ভালই করেছি। কেউ আর সে নির্দেশক পাবে না। পেলেই লোভ হত, আর লোভ থেকেই পাপ। আমি যে অন্যায় করেছি তা আর কেউ করতে পারবে না এখন।
ভাবছি, সিয়েটাকে ব্যবসার অংশীদার করে নেব। সে রাজি হবে। কিনা জানি না। যতদূর জানি, আমার চেয়ে তার আত্মসম্মানজ্ঞান বেশিই।
ও হ্যাঁ, আরনি ভিনসেনজোর সঙ্গেও দেখা করেছিলাম। তার পুরনো চাকরিটা ফেরত দিতে চেয়েছিলাম। রাজি হয়নি। নতুন একটা চাকরি। জুটিয়ে নিয়েছে। শেষে তার বাবার সঙ্গে দেখা করে যে ক্ষতি আমি করেছি তার জন্যে মাপ চাইলাম। ওখানে আমার টায়ারের দোকান বন্ধ। করে দিয়েছি। ভিনসেনজোর দোকানপাট আবার সাজিয়েগুছিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছি আমি। যা লোকসান হয়েছে সব পুষিয়ে দেয়ার কথাও বলেছি।
তোমাদের কাছে আরও একটা জিনিস নিশ্চয় খুব খারাপ লেগেছে। আমার কমপিউটারে সমস্ত কর্মচারীদের ব্যক্তিগত জীবনের গোপন ফাইল রেখে দেয়ার ব্যাপারটা। সব মুছে ফেলেছি আমি। ওরকম ব্ল্যাকমেল করে। মানুষকে দিয়ে কাজ হয়ত করান যায়, কিন্তু তাদের শ্রদ্ধা মেলে না। স্পষ্ট করে সব কর্মচারীকে জানিয়ে দিয়েছি, ঠিকমত দায়িত্ব নিয়ে আমার এখানে কাজ করলে, কারোরই কোন অসুবিধে হবে না। কাউকে অন্যায় ভাবে চাপ দিয়ে আর কাজ করাব না আমি। তবে যে ফাঁকি দেবে তারও জায়গা হবে না আমার এখানে।
সব শেষে আসি মেয়ের কথায়। তার বিয়েতে আমার কোন অমত নেই আর। জীবনটা তার, কাকে নিয়ে কাটাবে সেটাও তার পছন্দ, আমার নাক গলান ঠিক হয়নি। নিককে নিয়ে যদি সুখী হতে পারে, আমার আপত্তি কি?
কিশোর, তুমি বুদ্ধিমান ছেলে। স্বীকার করতে লজ্জা কিংবা দ্বিধা নেই, আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। আরও আগেই যদি তোমার মত ওভাবে কেউ আমার চোখ খুলে দিতে পারত, অনেক ভাল হত। জীবনটা অনেক সুন্দর হয়ে যেত আমার কাছে। তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শেষ কথা, মেয়ের বিয়ের এনগেজমেন্ট হবে, কার্ড পাঠালাম। আসবে, অবশ্যই। তিন গোয়েন্দার দাওয়াত রইল। খুব খুশি হব। না এসে বুড়ো মানুষটাকে আর দুঃখ দিও না, প্লীজ।
ইতি–
ডেভিভ লিসটার।