আমার বিশ্বাস, চিলেকোঠার প্রথম অনুপ্রবেশকারী হল সিয়েটা। এলেনার ওপর ভরসা রাখতে পারেনি সে, তাই নিজেই খুজতে এসেছিল বিশপের বই। দুবার আমার সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। একবার বিরোধ বাধে। আরেকবার এসে এলেনার জিসিনপত্র ঘাটাঘাটি করে যায়। কিন্তু দ্বিতীয়জন যে এসেছে সে কে? সেটার জবাব দিয়েছে মিসেস বেকার। খোঁজ নিয়েছিল সে, ব্রোচটা পাওয়ার পর। মোটর দুর্ঘটনায় নাকি মারা গেছে মেয়েটা। এলেনার পার্টি যেদিন হয় সেদিন। মিসেস বেকার জোর গলায় বলছে, নিশ্চয়, সেই মেয়েটার অশান্ত আত্মাই এসে ঢুকেছে চিলেকোঠায়, ব্রোচটা খুঁজে বের করে মানুষকে দেখানোর জন্যে যে সে সত্যিই ওটা চুরি করেনি, চোর ছিল না।
নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্যে, অন্যমনস্ক হয়ে গেলেন ডিটেকটিভ।
মাথা, ঝাঁকাল কিশোর। সে চোর ছিল না এটা বিশ্বাস করছি। কিন্তু ভূত সেজে চিলেকোঠায় এসেছে একথা আমি বিশ্বাস করব না কিছুতেই। ভূত, প্রেতাত্মা এসব থাকতেই পারে না। ওই শব্দের অন্য কোন ব্যাখ্যা আছে।
আমারও তাই ধারণা। বাতাসের কারসাজি হতে পারে। অনেক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটায় বাতাস, বিশ্বাস করা যায় না। ইঁদুরও হতে পারে। ঠিক আছে, আমিও নাহয় একদিন যাব তোমাদের সঙ্গে। রহস্যটার সমাধান করতে। অবশ্যই যদি লিসটার অনুমতি দেন।
হঠাৎ প্রতিবাদের ঝড় উঠল রান্নাঘরে। থেমে গেল আবার। একটু পরে দরজায় উঁকি দিল কিম। ঘোষণা করল, খাবার তৈরি। উদ্ভট একটা গন্ধ এসে ঢুকছে রান্নাঘর থেকে, সবার নাকেই লাগছে সেটা। সেদ্ধ করা কাঠের গুডোর গন্ধ মনে হল মুসার কাছে।
অ্যাক্রন কেক খেতে চাইছে না বাচ্চারা, বিষণ্ণ কণ্ঠে জানাল কিম। ওসব খেয়ে চুমাশ ইনডিয়ান সাজার কোন ইচ্ছেই ওদের নেই। কাপড় পরেছে যে এই বেশি।
তাই! ঘাবড়ে গেলেন মিস্টার সাইমন। ওঁদেরকেই না আবার চেখে দেখতে বাধ্য করে কিম। চোখ ফেরালেন আরেক দিকে।
রবিও ঘাবড়ে গেল।
ভয়ে ভয়ে আবার চোখ ফেরালেন সাইমন। তাহলে এগুলোর কি গতি হবে? আর বাচ্চাদেরকেই বা কি খাওয়াবে? ওদেরকে তো অভুক্ত রাখা যায় না।
ওদের নিয়ে ভাবনা নেই, হাসল কিম। হাইওয়েতে একটা পিজার দোকানে নিয়ে যাব। আমেরিকান অ্যাক্রন না খেতে চাইলে কি হবে, আমেরিকান পিজা খুবই পছন্দ ওদের।
ভাল। তাই নিয়ে যাও। আর অ্যাক্রনগুলো ফেলে দাও, কিংবা কোন চুমাশ ইনডিয়ানের সঙ্গে পরিচয় থাকলে তাকে দিয়ে দাও।
চোখে অনেক আশা নিয়ে মুসার দিকে তাকাল কিম।
এদিক ওদিক তাকাল মুসা। আবার তাকাল কিমের দিকে। না, তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে বাবুর্চি, কোন সন্দেহ নেই। খাইছে! বিড়বিড় করল সে। কিমকে জিজ্ঞেস করল, আমার দিকে তাকিয়ে আছেন কেন? আমি কি চুমাশ নাকি?
না, চুমাশ নও। তবে চুমাশের বাপ। পায়ে পায়ে এগিয়ে এল কিম। আচমকা মুসার দুহাত চেপে ধরল। মুসা, প্লীজ, লক্ষ্মী ভাই আমার, একটি বার! শুধু একটা চামচ! তার বেশি বলব না…
মানে?
অ্যাক্রন এই নতুন রান্না করলাম। কেউ না চাখলে তো বুঝতে পারব না কেমন হয়েছে। শুধু এক চামচ…
মাথা চুলকাল মুসা। রাজি হয়ে গেল, বেশ। তবে এক শর্তে।
কি শর্ত? যে কোন শর্তে রাজি কিম।
প্রচুর পরিমাণে স্যাণ্ডউইচ, মাংসের বড়া, ডিম ভাজি, পনির, কেক, সালাদ, আইসক্রীম…
আছে, সব আছে। থালা ভর্তি করে দেব। যত চাও দেব…
ঠিক আছে। নিয়ে এস তোমার অ্যাক্রন, এমন একটা ভঙ্গি করল মুসা, যেন অ্যাক্রনেরই একদিন কি তারই একদিন। দেখে নেবে আজ।
হাসি ফুটল অন্যদের মুখে। নিস্তার পেয়েছে।
নাচতে নাচতে রান্নাঘরের দিকে চলল নিসান জাং কিম।
.
আরও পনের দিন পর। ট্র্যাকে মোটা একটা খাম এসে হাজির হল কিশোরের নামে। ইয়ার্ডের কাজ করছিল সে। এই সময় পিয়ন দিয়ে গেল চিঠিটা। কাজ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে গোয়েন্দাপ্রধান। বিশ্রাম নেয়ার কথা ভাবছিল অনেকক্ষণ থেকেই। পেয়ে গেল ছুতো এবং সুযোগ দুটোই। অফিসের সামনের বারান্দায় এসে বসল। ধীরেসুস্থে খুলল খামটা।
ভেতরে বেশ বড় একটা চিঠি। টাইপ করা। আর একটা কার্ড, দাওয়াতের। অবাক হল সে। কে দাওয়াত করল? আগে তাই কার্ডটাই দেখল। পড়ে আরও অবাক। লিসটার দাওয়াত করেছেন। আরেকটা পার্টি দিচ্ছেন তিনি। মেয়ের বিয়ের কথা ঘোষণা করবেন, এনগেজমেন্ট করা হবে, হ্যাঁ, নিক ভিশনের সঙ্গেই। আশ্চর্য!
তিন গোয়েন্দাকেও দাওয়াত করা হয়েছে।
চিঠির নিচের সইটা দেখল কিশোর। লিটারের। ব্যাপার কি? পড়তে আরম্ভ করল সে। তাকেই লেখা হয়েছেঃ
কিশোর,
সেদিন তুমি হাসপাতাল থেকে যাওয়ার পর অনেক ভেবেছি। আসলেই, খারাপ লোক আমি। তুমি আমার চোখ খুলে দিয়েছ। জীবনে। অনেক অন্যায় করেছি। সেসব কথা ভেবে ভীষণ, অনুশোচনা হচ্ছে এখন। অনেকগুলো বছর পেছনে ফেলে এসেছি, আর অনেক অন্যায়, সবগুলোর প্রায়শ্চিত্ত তো আর করতে পারব না, তবু যতটা পারি করার চেষ্টা করছি। ঠিকই বলেছ তুমি, শুধু টাকা থাকলেই হয় না, জীবনে ইজ্জত-সম্মানের অনেক দাম। এবং সৎ থাকার।
তোমাকে কয়েকটা কথা জানানোর প্রয়োজন বোধ করছি। আমার মত একটা মানুষকে সাহায্য করেছ বলে রাগ হচ্ছে তোমার, দেখ এসব জানার পর রাগ কিছুটা কমে কিনা। সিয়েটার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করিনি আমি পুলিশের কাছে। বলেছি, আমাকে কিডন্যাপ করেনি সে, নিজের ইচ্ছেতেই আমি তার সঙ্গে গিয়েছিলাম। পুলিশ তখন জিজ্ঞেস করল, আমাকে শেকল দিয়ে বেঁধে রাখা হল কেন? বললাম, সেটা আমাদের দুই বন্ধুর ব্যাপার। পুলিশ অসন্তুষ্ট হলেও যেহেতু আমি কোন অভিযোগ করিনি, সিয়েটাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অনেক বুঝিয়ে-শুনিয়ে তাকে নিয়ে এসেছি আমার কাছে। পুরনো বন্ধুত্বটা আবার ঝালাই করার চেষ্টা করছি।