তাকে মারতে চায়নি সিয়েটা। তাই নিয়মিত খাবার আর পানি নিয়ে যেত। ডায়রিটার কথা জিজ্ঞেস করাও উদ্দেশ্য ছিল তার। কিন্তু লিসটার এমনই ধড়িবাজ, সিয়েটাকে দেখলেই বেহুশ হয়ে যাওয়ার ভান করতেন। নড়া নেই চড়া নই কোন প্রশ্নের জবাব দেয়া নেই। ভান যে করছেন সেটা সিয়েটাও বুঝতে পারত। কিন্তু বেশি চাপাচাপি করার সাহস পেত না সে, পাছে মরে যান। খুনের দায় তো চাপবেই ঘাড়ে, খনির ঠিকানাটাও চিরতরে মুছে যাবে।
এখন কেমন আছেন লিসটার? জিজ্ঞেস করলেন সাইমন।
সুস্থ হচ্ছেন, মুসা জানাল। একটা অলৌকিক ব্যাপারই বলা যায়। হাতটা ধসে পড়ল, অথচ একটা আঁচড়ও লাগেনি তার গায়ে।
হুঁ। ভাগ্যবানের বোঝা ভগবানে বয়, হাসলেন ডিটেকটিভ। তবে ভূমিকম্পটা তত বড় ছিল না, তাহলে আর বাঁচতে হত না তোমাদের কারোই। গত হপ্তায় নিউ ইয়র্কে ছিলাম আমি। এখানে যে ভূমিকম্প হয়েছে সেটাকে গুরুত্বই দেয়নি কোন কাগজ।
ওরা যা-ই বলুক, রবিন বলল। আমাদের বারোটা বাজতে যাচ্ছিল আরেকটু হলেই। ভাগ্যিস আমাদের বাড়িটা ধসেনি।
সেজন্যেই তো বলছি, বড় ছিল না। তাহলে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে ফেলত। কেউ বাঁচতে না তোমরা…
নাক কুঁচকালো মুসা। অদ্ভুত একটা গন্ধ আসছে রান্নাঘর থেকে। হঠাৎ করেই নীরব হয়ে গেল চুমাশ ইনডিয়ানদের কোলাহল। ভাগ্যিস ইনডিয়ান হয়ে জনুগ্রহণ করেনি সে। ওরকম বিদঘুঁটে গন্ধ-ওয়ালা খাবার খেয়ে বাঁচার কোন ইচ্ছেই তার নেই। কদিন ধরেই হাসপাতালে আছেন লিসটার, বলল সে। বেড়ালের জান। মরবেন না। ভাল হয়ে উঠছেন দ্রুত। তবে হওয়ার পর আরেকটা ধাকা খাবেন, এলেনা বলেছে আমাদেরকে। বাবা সুস্থ হয়ে উঠলে চিরদিনের জন্যে মায়ের কাছে চলে যাবে সে, আর থাকতে আসবে না। বাবার কাছে। সে বুঝে গেছে, কোন দিনই তার বাবার মেজাজ ঠিক হবে না। ওরকম একটা খেপা লোকের কাছে থাকলে যে কোন সুস্থ মানুষের মাথা খারাপ হয়ে যেতে পারে। এলেনার কথাঃ টাকাই জীবনে সব নয়। টাকার নেশা মানুষের সর্বনাশ করে ছাড়ে।
আর পান্নার খনির ব্যাপারে যা ভেবেছিলাম, রবিন বলল কিছুটা হতাশ কণ্ঠেই। আসলে তা নয়, গোপন নেই আর ওটা। বহু বছর আগেই আবিস্কার হয়ে গেছে। লিসটারই করেছেন। ওটা কোন রহস্য নয়। অযথাই এর পেছনে সময় নষ্ট করলাম।
আরও একটা খবর, মিটিমিটি হাসছেন মনটাগো। লিসটারও জানেন না। অনেক দিন আগে শেষ গিয়েছিলেন তো খনিটাতে, তাই। আমি খোঁজ নিয়ে। জেনেছি কয়েক বছর আগে আরেকটা লোক ওটা আবিষ্কার করে ফেলেছে। কলাম্বিয়ার সরকার দখল করে নিয়েছে এখন ওটা। লিসটার যদি সন্ধান বলতেনও আর সিয়েটা যদি যেতও, কিছুই পেত না। খনির কাছে ঘেঁষতেই দেয়া হত না। তাকে।
আহহা, এটা তাকে জানিয়ে দেয়া উচিত ছিল, জিভ দিয়ে চুকচুক শব্দ করল। মুসা। অযথাই কষ্ট করল বেচারা। খামোকা আবার জেলে গেল।
অপরাধীদের ওরকম সাজাই হয়, সাইমন বললেন।
লিসটারেরও একটা শাস্তি হওয়া উচিত।
আর কি হবে? হয়েছেই ভোস্ত্রী তালাক দিয়ে চলে গেছে। মেয়ে থাকে না। নিজে আধ পাগল। কোটি কোটি টাকা থাকলেই কি না থাকলেই কি। এটা একটা জীবন হল। কেউ তাকে দেখতে পারে না। সম্মান করে না।
আমরাও করি না, ফস করে বলে ফেলল মুসা। বলেই বুঝল কথাটা বলা ঠিক হয়নি। গাল চুলকাতে শুরু করল সে।
মুসার অস্বস্তি বুঝতে পারলেন সাইমন। আসলে সম্মান জিনিসটা জোর করে কাউকে করা যায় না। ভেতর থেকে আসে। তোমাদের আসে না, তো কি করবে।
হাসপাতালে গিয়ে কিশোর যা সব কথা বলে এসেছে না, রবিন বলল। ইজ্জত রাখেনি।
কি বলেছে?
কিশোর আর আমাদেরকে ধন্যবাদ দিচ্ছিলেন লিসটার, আমরা তাকে উদ্ধার করেছি বলে। মুখের ওপর বলে দিল কিশোর, তিনি ওরকম জানলে কখনোই কাজটা করত না। বলেছে, আমরা টাকা নিই না কাজের জন্যে। লোকের উপকার করাই আমাদের ব্রত। কিন্তু যারা অন্যায় করে তাদেরকে সাহায্য করার কোন ইচ্ছে আমাদের নেই।
লিসটার কি বললেন?
চুপ হয়ে গেলেন।
হু! বলবেন আর কি? বলার তো কিছু নেই। এক মুহূর্ত চুপ থেকে জানতে চাইলেন ডিটেকটিভ, আরনি ভিনসেনজোর খবর কি?
একটা ব্যাঙ্কে নতুন চাকরি নিয়েছে, রবিন জানাল। ডি এল ডিপার্টমেন্টাল স্টোরেই বহাল রয়েছে এনথনি, ভাবছে তার, শয়তানীর কথাটা ভুলে যাবেন লিসটার। এলেনার মায়ের সঙ্গে তার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে বহুদিন থেকেই, সেটা লিসটারকে জানাতে চায়নি বলেই কিশোরকে দেখে লুকিয়ে পড়েছিল। ভদ্রমহিলাও সে কারণেই ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলেন। কিশোরকে বের করে। দেয়ার জন্যে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। মহিলা অবশ্য বলেছেন, তার সঙ্গে…
থাক, হাত তুললেন সাইমন। ওসব কথা শুনতে চাই না। লোকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এইবার আসল কথাটা বল তো। ফাইলে লেখনি। চিলেকোঠার সেই ভুতের ব্যাপারটা। কি ব্যাখ্যা দেবে? কিশোরকে প্রশ্নটা করলেন তিনি।
আমি বুঝতে পারছি না, স্যার, মাথা নাড়ল কিশোর। এটা সত্যিই একটা বড় রহস্য। বের করব একদিন। মিসেস বেকার একটা গল্প বলেছে। মুসা বিশ্বাস করে, আমি করি না। মহিলা বুলে, সেই ছোট্ট মেয়েটা, যে তার ধনী ফুফুর কাছে, বড় হয়েছিল, তাকে একবার সাংঘাতিক মেরেছিল ফুফু। সোনার একটা পিন হারিয়েছিল বলে।
তারপর অনেক ভুগতে হয়েছে মেয়েটাকে। তার পরিবারের সবাই ভাবতে আরম্ভ করে, সে চোরই। আমরা চলে আসার পর চিলেকোঠায় গিয়েছিল মিসেস বেকার, খোঁজাখুজি করতে। যে কোন ব্যাপারে, বিশেষ করে ভূতের, তার খুব কৌতূহল। পুরনো একটা ট্রাঙ্কের ভেতরে লেপের মধ্যে আটকে থাকা এই জিনিসটা বের করে এনেছে, পকেট থেকে একটা সোনার ব্রোচ বের করে টেবিলে রাখল গোয়েন্দাপ্রধান। মিসেস বেকারের ধারণা, এই জিনিসটা চুরির অপবাদ দিয়েই মারধর করা হয়েছিল মেয়েটাকে। কিন্তু আসলে সে চুরি করেনি। ট্রাঙ্কে লেপ ভরার সময় নিশ্চয় টান লেগে বা অন্য কোনভাবে জিনিসটা লেপের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল। সেখানে আর খোঁজেওনি ফুফু, পায়ওনি। মহিলা ওই বাড়িতে থাকতেই মারা গেছে। তার অনেক পুরনো জিনিস এখনও রয়ে গেছে বাড়ির চিলেকোঠায় আর স্টোররুমে। ওই ট্রাঙ্কটাও তারই। বাড়িটা কেনার পর এখন মিস্টার লিসটারের সম্পত্তি হয়ে গেছে।