তাই? ডিটেকটিভ বললেন। ওই অ্যাসিসটেন্ট নিশ্চয় আমাদের সিয়েটা।
হ্যাঁ, জবাবটা দিল মুসা। শুরুতে সব অস্বীকার করে সিয়েটা। বলে সে কিছু জানেই না। শেষে চাপে পড়ে বলে একজন আমেরিকান দোকানে ঢুকে ডায়রিটা নিয়ে চলে গেছে। জ্যাকেটের নিচে লুকিয়ে। একথাও বিশ্বাস করেনি পুলিশ। জেলে পাঠিয়ে দিল তাকে।
আসলে কি ঘটেছিল আন্দাজ করতে পারি আমরা, রবিন বলল। কিমের রান্নাঘরে হঠাৎ যেন এক ঝলক হাসির ঝড় উঠল। সেটা মিলিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত। অপেক্ষা করতে হল তাকে। এখনও কেউ মুখ খুলছে না, সিয়েটাও না, লিসটারও না। এলেনার কাছে তার বাবার সম্পর্কে যা শুনেছি তাতে একটা ধারণা করতে। পারি আমরা। এক সময় নাবিক ছিলেন লিসটার, দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতেন। বন্দরে জাহাজ থামলে বসে থাকতেন না। যতটা পারতেন ঘুরে বেড়াতেন দেশের ভেতরে। প্রচণ্ড উচ্চাকাভক্ষা ছিল তার। সব সময় সুযোগ খুজতেন। বোগোটায়। কোন ভাবে পরিচয় হয়েছিল সিয়েটার সঙ্গে। ডায়রিটা, পড়েই হোক কিংবা যে ভাবেই হোক সোগামোলোর পান্নার খনির কথা জেনে ফেলেছিল সিয়েটা। সেটা বলেছিল লিসটারকে। তারপর দুজনে মিলে চুরি করে ডায়রিটা। সিয়েটার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন লিসটার। ফলে সিয়েটা গেল জেলে আর তিনি দেশে ফিরে এলেন বিপুল টাকার মালিক হয়ে।
তার মানে পান্নার খনিটা তিনি পেয়েছিলেন, সাইমন বললেন।
তাই তো মনে হয়, কিশোর বলল। বিশপের ডায়রিতে যে পথের কথা লেখা আছে সে ভাবে চলে আমরাও পৌঁছতে পারব খনির কাছে। পড়া খুব কঠিন।
স্প্যানিশ না জানলে হবে না।
মাথা ঝাঁকালেন মনটাগো। কিছু কিছু জানা থাকলে অবশ্য পারতেও পার। ডিকশনারি আর রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিয়ে। আমার বিশ্বাস লিসটারও তাই করেছিলেন। গত চারশো বছরে স্প্যানিশ ভাষার ততটা পরিবর্তন হয়নি।
আইলিন লিসটারে গেল কি করে ডায়রিটা? জানতে চাইলেন সাইমন।
মনে হয়, রবিন বলল। পান্নার দরকার হলেই জাহাজ নিয়ে কলাম্বিয়ায় চলে যেতেন লিসটার। ওই ডায়রিটাই হল খনিতে যাওয়ার পথ নির্দেশক। তাই ওটা সঙ্গে রাখতেন। যদি ভুল হয়ে যায় দেখে মিলিয়ে নেয়ার জন্যে। শেষবার যাওয়ার পর আর অনেকদিন যাবেন না বুঝতে পেরেই হয়ত আসল পাতাগুলো ছিঁড়ে নিয়ে এসেছিলেন। লুকিয়ে রেখেছিলেন বাড়িতে। ডায়রিটা ফেলে রেখেছিলেন সাধারণ বইয়ের সঙ্গে। কারণ ওটার আর তখন দাম নেই। তবু কোন জিনিস ফেলে দেয়ার স্বভাব নয় তো, রেখে দিয়েছিলেন।
হুঁ। তাহলে বড় লোক হওয়ার পুঁজিটা তিনি পান্নার খনি থেকেই জোগাড় করেছেন। জানালা দিয়ে সাগরের দিকে তাকালেন সাইমন। আবার মুখ ফিরিয়ে বললেন, তারপর তার অপরাধের সঙ্গী এসে সেদিন মেয়ের পার্টিতে হাজির হল। দেখে ভীষণ চমকে যাওয়ারই কথা।
হয়েছেন মানে। একেবারে অ্যানজিনার অ্যাটাক হয়ে গিয়েছিল। অনেক বছর পরে দেখা। তবু তাকে চিনতে ভুল করেনি সিয়েটা।
মুসা বলল, আমি যখন লিসটারের কাছে বসে ছিলাম, ঘুমের ভান করে পড়ে ছিলেন তিনি। আসলে তার মনে তখন দুশ্চিন্তার ঝড়। বুঝে ফেলেছিলেন সিয়েটা প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করবেই। ডায়রিটা চাইবে। কিন্তু তখনও ওটা দেয়ার ইচ্ছে ছিল না লিসটারের। অন্তত আসল পাতাগুলো। তাই পয়লা সুযোগটা পেয়েই আমাকে বাথরুমে আটকে পাতাগুলো বের করে ফায়ারপ্লেসে ফেলে পুড়িয়েছেন। তারপর কমপিউটার রুমে গিয়ে একটা মেসেজ লিখলেন এলেনার জন্যে। খনিটার কথা মেয়েকে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি, যদি তার কিছু ঘটে যায় তাহলে এলেনা যাতে গিয়ে খুঁজে বের করতে পারে ওই সম্পদ।
শ্রদ্ধা চলে যাচ্ছে আমার লোকটার ওপর থেকে, বিরক্ত কণ্ঠে বললেন সাইমন। লিসটার ভীষণ লোভী। যা আনার তো এনেছিল, প্রয়োজনের অতিরিক্ত, আর কেন? ডায়রিটা সিয়েটাকে দিয়ে দিলেই হত। ..
ঠিকই বলেছেন, মাথা ঝাঁকাল মুসা। আমি বাথরুমে আটকা পড়ে আছি। নিশ্চয় ওই সময়টাতেই পা টিপে টিপে দোতলায় উঠে এসেছিল সিয়েটা। আমাকে বাথরুম থেকে বের করতে এসেছিলেন তখন লিসটার, সিয়েটার জন্যে পারেননি। একটা বালিশ এনে তার মুখ চেপে ধরেছিল সিয়েটা, যাতে চেঁচাতে না পারেন। ভয় দেখানোর জন্যেও হতে পারে। টানাটানিতে গেল ওটা ছিঁড়ে। তখন দ্বিতীয়। বালিশটা নিয়ে এল সিয়েটা। বেহুশ করে ফেলল লিসটারকে। বোধহয় খুন করে ফেলেছে বলে ভয় পেয়ে গিয়েছিল সিয়েটা। সে চেয়েছিল ভয় দেখিয়ে ডায়রিটার কথা বের করে নেবে। খুনের ইচ্ছে ছিল না। ঘাবড়ে গিয়ে লাশ সরিয়ে ফেলার। জন্যেই লিসটারকে সরিয়ে নিয়ে যায়, এমন ভাবে, যাতে সবাই ভাবে নিজে নিজেই। চলে গেছেন লিসটার।
বাড়ি থেকে বের করল কিভাবে? জানতে চাইলেন সাইমন।
ঠেলাগাড়িতে করে। ময়লা টেবিলক্লথ দিয়ে ঢেকে।
শেষ পর্যন্ত ময়লার গাড়ি? হাহ।
আগের কথার খেই ধরল কিশোর, পার্টি শেষে ডেকোরেটরের জিনিসপত্র। ফেরত দিয়ে আসার দায়িত্ব ছিল সিয়েটার ওপর। ভেবেছিল তখনই সুযোগ করে। লিসটারের লাশটা নিয়ে গিয়ে গুম করে ফেলবে কোথাও। কিন্তু লাশ বের করতে গিয়ে দেখে মরেননি লিসটার, বেহুশ হয়ে আছেন। অ্যানজিনার অ্যাটাক, এমনিতেই দুর্বল শরীর, তার ওপর ওই ধকলে একেবারে কাহিল হয়ে পড়েছিলেন।
এতে মস্ত সুযোগ পেয়ে গেল সিয়েটা, কিশোরের মুখের কথা টেনে নিয়ে বলল রবিন। লিসটারকে বন্দি করল নিয়ে গিয়ে ওই নির্জন বাড়িটায়। যত চেঁচামেচিই করুন, ওখানে কারও কানে যাবে না। আর পোড়ো বাড়িতেও মানুষ। থাকতে পারে, এতে সন্দেহের কিছু নেই। ভবঘুরেরা যেখানে সেখানে রাত কাটায়। কাজেই বাড়িটা থেকে সিয়েটাকে বেরোতে যদি কেউ দেখেও থাকে, কেয়ারই করেনি। খুঁজেপেতে ভাল বাড়িই বের করেছিল সিয়েটা। যে ঘরে লিসটারকে আটক করেছিল সে, সেটা নিশ্চয় মেশিরুম ছিল। কোন বড় ধরনের মেশিন ছিল ওখানে, যার জন্যে ওই আঙটার প্রয়োজন হত। সিয়েটা সেই আঙটায় শেকল লাগিয়ে বাঁধল লিসটারকে।