তুলে নেব? আরনির প্রশ্ন।
মাথা খারাপ? কিশোর বলল। চিনে ফেলবে না?
থামল না আরনি। দক্ষিণে এগিয়ে গেল ব্লক দুয়েক। তারপর একটা রেস্টুরেন্টের পার্কিং লটে ঢুকে থামল। এবারও পেছনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে গোয়েন্দারা। রাস্তায় একটা ভ্যানকে দেখল থেমে পিকোকে তুলে নিতে।
ডার্ক শেভি ভ্যান, বলল কিশোর।
বুঝেছি, আরনি বলল।
আবার অনুসরণের পালা। দুটো গাড়ির পেছনে রইল আরনি সর্বক্ষণ। চলে এল সান্তা মনিকায়। লিংকন বুলভারে পৌঁছে থেমে গেল ভ্যান। পিকে নেমে গেলে চলতে শুরু করল গাড়িটা।
আরেকবার পিকোর পাশ কাটাল আরনি। কোণের কাছে পৌঁছে- থামল। পেছনের জানালা দিয়ে চেয়ে রয়েছে ছেলেরা।
মাথা নিচু, কাঁধ বাঁকা করে হাঁটছে পিকো। ফিরে এল আরনি। পাশ কাটাল। দাঁড়াল। আবার ঘুরল। পাশ কাটাল। দাঁড়াল। এভাবেই অনুসরণ করে চলেছে। খেয়ালই করছে না যেন পিকো।
কয়েক ব্লক পরে একটা নির্জন জায়গায় চলে এল ওরা। জায়গাটা পতিত। যেন দানবীয় কোন রেজর ব্লেড দিয়ে চেঁছে তুলে নেয়া হয়েছে ওপরের মাটি।
পুরনো বাড়িঘর সব ভেঙে ফেলা হয়েছে এখানে, আরনি বলল। পার্ক বানাবে বোধহয়। রাস্তার এত কাছে, যা শব্দ, পার্ক কেমন হবে কে জানে। জায়গা সিলেকশন ভাল হয়নি ওদের। পার্ক হওয়া দরকার নীরব জায়গায় গাড়ি থামিয়ে তাকিয়ে রয়েছে পিকোর দিকে।
লোকটা এখন শুধু একটা ছায়া। কয়েকটা অন্ধকার আকৃতির দিকে হেঁটে চলেছে। আলো নেই এখানটায়। খোলা জায়গাটার ওপাশের আকৃতিগুলো। বাড়িঘরের। নির্জন, শূন্য, ধ্বংস হয়ে আসা সব বাড়ি। দুটো বাড়ির মাঝের গলিতে হারিয়ে গেল পিকো।
গাড়ি নিয়ে না গিয়ে, কিশোর বলল, হেঁটেই যাই। সুবিধে। দরজা খুলল সে।
বেরিয়ে এল চারজনেই। নীরবে পিছু নিল পিকোর। যেদিকে অদৃশ্য হয়েছে সে সেদিকে চলল দ্রুতপায়ে।
এখানে কোথায় এল? অন্ধকারে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছিল মুসা।
শশশ! হুঁশিয়ার করল কিশোর। দেখ!
সামনে ম্লান আলো। আলোর আভা বললেই ঠিক বলা হয়, পরিত্যক্ত একটা বাড়ির ভেতর থেকে আসছে। পা টিপে টিপে এগোল গোয়েন্দারা। আরও কাছে এলে দেখল জানালার ভেতর দিয়ে আসছে আলোটা। শাটার লাগানো। কিন্তু কয়েক জায়গায় ভাঙা, আলো বেরোচ্ছে ওই পথে।
অন্য পাশ দিয়ে বাড়ির একেবারে গা ঘেষেই চলে গেছে গাড়ি চলাচলের পথ। এত জোরে হর্ন বাজাল একটা লরি, চমকে উঠল ওরা।
গর্জন করতে করতে চলে গেল গাড়িটা। শাটারের একটা ভাঙা অংশে চোখ রাখল কিশোর। একটা ঘর। একটা বিছানা। পাশে একটা পুরনো আলমারি। তার ওপর হারিকেন জ্বলছে। বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে শুয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে পিকো। লোকটাকে মনে হচ্ছে বেহুশ। কাত হয়ে আছে। মুখটা জানালার দিকে ফেরানো। চোখ বন্ধ। এক গোড়ালিতে একটা আংটা, সেটার সঙ্গে শেকল লাগানো। শেকলের আরেক মাথা মেঝের বড় একটা পাথরের ফুলকে গাথা। আরেকটা আংটার সঙ্গে লাগানো। বেঁধে রাখা হয়েছে লোকটাকে।
পিছিয়ে এল কিশোর। সঙ্গীদেরকে ইশারা করল সরে যাওয়ার জন্যে।
বেশ কিছুটা সরে এসে ফিসফিস করে ওদেরকে জানাল কিশোর, ডেভিড লিসটারকে পেয়েছি। বের করে আনতে হবে এখন।
.
১৫.
আরেকটা পরিত্যক্ত বাড়িতে এসে ঢুকল গোয়েন্দারা। পরিকল্পনা করার জন্যে।
সোজা ঢুকে পড়তে পারি আমরা, আরনি বলল। পিকোর কাছ থেকে জোর করে চাবি আদায় করে খুলে নিয়ে আসতে পারি। তবে পিস্তল থাকতে পারে পিকোর কাছে। তাহলে মুশকিল হবে। রাগের মাথায় লিসটারকেই গুলি করে। বসতে পারে।
আমাদেরকেও করতে পারে, মুসা বলল। এত ঝুঁকির মধ্যে না গিয়ে পুলিশকে ফোন করতে পারি আমরা।
তা পারি। বেশ, আমি ফোন করতে যাচ্ছি। ওরা এসে হাতে নাতে ধরবে পিকোকে। আমি সন্দেহ থেকে বাদ যাব। বেঁচে যাই তাহলে। একটু থেমে আরনি বলল, তোমরা এখানেই বসে থাক।
ছেলেদেরকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে গেল আরনি।
আমাদের কারও যাওয়া উচিত ছিল ওর সঙ্গে আরনির পায়ের শব্দ মিলিয়ে গেলে আফসোস করল মুসা।
কেন? রবিনের প্রশ্ন। সে কি পুলিশকে ফোন করতে পারবে না?
তা পারবে। কিন্তু করবে কিনা সেটাই প্রশ্ন। লিসটারকে ঘৃণা করার তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মত বদলাতে পারে। চলে যেতে পারে। তাহলে আমরা এখানে বসেই থাকব বসেই থাকব, গাধা হয়ে।
থাকতে যাচ্ছে কে? মুখ খুলল কিশোর। আরনিও ভাল করেই জানে বেশিক্ষণ তার জন্যে এখানে বসে থাকব না আমরা। আর চলে গেলে তো সন্দেহমুক্ত হতে পারল না, বরং তার ওপর আমাদের সন্দেহ আরও বাড়বে। নাহ, সে যাবে না। পুলিশকে ফোন করবে। লিসটারকে এখন আর হাতছাড়া করতে চাইবে না। এক সেকেণ্ড চুপ করে ভাবল গোয়েন্দাপ্রধান। শোন, পিকোর হাবভাব একটুও ভাল লাগেনি আমার। মরিয়া হয়ে উঠেছে সে। খারাপ কিছু করে বসতে পারে।
অযথা বসে না থেকে বেরিয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দা। চলে এল স্লান আলোকিত জানালাটার কাছে। ফোকরে চোখ রাখল কিশোর। এখনও আগের জায়গাতেই। রয়েছে পিকো। ঝুঁকে তাকিয়ে রয়েছে লিসটারের দিকে। হারিকেনের আবছা আলোয় মনে হচ্ছে তার গালে মাংস নেই, গর্ত। আর সারাটা জীবনই যেন ক্ষুধার্ত রয়ে গেছে লোকটা।
বুড়ো ভাম, বিড়বিড় করে বল পিকো। আমাকে তুমি বোকা বানাতে পারবে। এইই, এইই! বলে, জোরে চিৎকার করে ডাকল সে। জানালায় কাঁচ নেই। তাই রাস্তার গাড়িঘোড়ার শব্দকে ছাপিয়ে সেই চিকরি কানে এল গোয়েন্দাদের।