জবাব দিল না কিশোর।
চ্যাপার্যাল ক্যানিয়নে পৌঁছে ব্রেক করল বেসিন। ডানে মোড় নিল। হাইওয়ে থেকে তিন ব্লক দূরে একটা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স। ওটার সামনে গাড়ি রেখে গিয়ে সামনের দরজায় উঠল সে। বেল বাজাল।
ভ্যানের পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেল আরনি। পরের ব্লকের কাছে গিয়ে থামল। পেছনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ছেলেরা। বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেখল বেসিনকে। কয়েক মিনিট পরে একটা মেয়েকে সহ বেরিয়ে এল। সুন্দর চেহারা মেয়েটার, কালো চুল। দুজনে এসে উঠল ভ্যানে। যেদিক থেকে এসেছিল সেদিকে ফিরে চলল আবার গাড়িটা।
কিন্তু এবারেও গতি কমাল না শিপইয়ার্ডের কাছে।
নাহ, যাচ্ছে না তো, নিরাশ হয়ে বলল রবিন। আজ রাতে আর যাবে না।
সত্যিই গেল না বেসিন। সোজা দক্ষিণে মেরিনা ডেল রে-এর কাছে একটা রেস্টুরেন্টের পার্কিং লটে গিয়ে ঢুকল।
বুঝলাম, আরনি বলল। গার্লফ্রেণ্ডকে নিয়ে গেছে ডিনারে। এতে কোন দোয নেই। ক্রাইম করেনি। ও শিপইয়ার্ডে ঢুকলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেত আমার।
আরনি কথা বলছে, বেসিন তখন রেস্টুরেন্টের সামনের দরজায় গিয়ে দড়িয়েছে। দরজা ঠেলে খুলে ধরে রাখল যাতে মেয়েটা ঢুকতে পারে। তারপর ফিরে তাকাল। যেন আরনির গাড়িটার দিকেই তার নজর। একই মুহূর্তের জন্যে। ডেভিড লিটারের দাঁড়ানোর ভঙ্গি মনে পড়ে গেল কিশোরের। গেলাস ভাঙার পর রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন লিসটার, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে ছিলেন বেসিন আর পিকোর দিকে। কল্পনায় দেখতে পেল পিকোর চেহারা, তাকিয়ে রয়েছে লিসটারের দিকে। আরনির বলা হার্ট অ্যাটাক শব্দটা যেন প্রতিধ্বনি তুলল। কিশোরের মনে।
আমি একটা গাধা! কপালে চাপড় মারল কিশোর। বেসিন কি করে হয়? ও হতেই পারে না। এখন আমার মনে পড়ছে। রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে। দাঁড়িয়েছিলেন লিসটার, বেসিনকে শাসানোর জন্যে, তার ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া। একটা মেয়ে গেলাস ভেঙে ফেলেছে বলে। তখন থেকেই সমস্ত ঘটনা শুরু।
নীরব হয়ে গেল সে। তাকিয়ে রয়েছে সামনের দিকে। চোখ মুদে ফেলল ধীরে ধীরে। ওখানে হেনরি বেসিনও ছিল। ট্রেতে খাবার রাখছিল। পিকো কাজ করছিল। সিংকে। সাবান দিয়ে বাসন ডলছিল। হাত ভেজা। ওই মুহূর্তের আগে। কিডন্যাপিঙের প্লটই তৈরি হয়নি। বাজি ধরে বলতে পারি। নিরাপদেই ছিলেন লিসটার, হঠাৎ করেই পরিস্তিতি বিপজ্জনক হয়ে উঠল তার জন্যে। মারাত্মক বিপদ। সেটা বুঝতে পেরেছেন তিনি। আমি দেখেছি সেটা। অথচ তখন বুঝতে পারিনি।
সামনে ঝুঁকল রবিন। কেন পারলে না? কি ঘটেছিল?
কি রকম রেগে গিয়েছিলেন লিসটার মনে আছে? চিৎকার করছিলেন। তাকে থামানোর চেষ্টা করছিল এলেনা। তারপর পিকো তাকিয়েছিল তার দিকে। হাত থেকে বাসন ফেলে দিয়েছিল। আরেকটু হলেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাচ্ছিল লিসটারের।
তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই, আরনি বলল। কোন জিনিস ভাঙলে ভীষণ খেপে যায় বুড়োটা। চোখের সামনে একগাদা বাসন ভাঙতে দেখলে শান্ত থাকার কথা নয় তার।
আসল কারণ সেটা নয়, কিশোর বলল। বাসনগুলো ভাঙার পর প্রথম ভালমত পিকোর ওপর নজর দিয়েছিলেন লিসটার। তাঁর দিকে তাকিয়েছিল পিকো। লিসটারের মুখ দেখতে পাচ্ছিলাম না আমি, কিন্তু পিকোর পাচ্ছিলাম। অদ্ভুত দৃষ্টি ফুটেছিল তার চোখে। আমি তখন ভেবেছিলাম বুঝি ভয় পেয়েছে। এখন বুঝতে পারছি ভয় নয়, ঘৃণা। কেঁচোর দিকে যে দৃষ্টিতে তাকায় মানুষ, সেই দৃষ্টি। লিসটারকে চিনতে পেরেছিল পিকো। আগে থেকেই পরিচয় ছিল। লিসটারও চিনতে পেরিছিলেন তাঁকে। এ কারণেই অ্যানজিনার অ্যাটাক হয়।
হাঁ করে শুনছে রবিন। পিকো…পিকোই সিয়েটা!
হতে পারে, কিশোর বলল। ওর ব্যাপারেই এলেনাকে হুঁশিয়ার করেছেন হয়ত লিটার। আমার ভুল না হয়ে থাকলে এ মুহূর্তে আইলিন লিসটারে বিশপের বই খুঁজতে চলে গেছে পিকো। আমি বেসিনের সঙ্গে যখন ইয়টটার সম্পর্কে কথা বলছিলাম, ওই সময়ই সে ঢুকেছিল। নিশ্চয় শুনে ফেলেছে। প্যাস্ট্রিতে যে ব্যাগটা পেয়েছি ওটা বেসিন রাখেনি ওখানে, পিকো রেখেছে।
চল তাহলে! তাড়াতাড়ি গাড়ি ঘোরাল আরনি। তীব্র গতিতে ছুটল বোটি ড্রাইভের দিকে।
সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনে পৌঁছতে পৌঁছতে অন্ধকার হয়ে গেল। মুসার ভয় হতে লাগল, দারোয়ান ওদেরকে কিছুতেই ঢুকতে দেবে না।
গেট দিয়ে যাওয়ার দরকারও নেই, কিশোর বলল। ওই দেখ।
দেখল সবাই। আরনির গাড়ির হেডলাইটে ধরা পড়েছে পিকো। শিপইয়ার্ডের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে আছে সে। বেড়ার এক জায়গায় বেশ বড় একটা ফোকর কাটা হয়েছে।
থামবেন না! প্রায় চিৎকার করে বলল রবিন। আমরা যে দেখেছি বুঝতেই যেন না পারে। আগে হাতেনাতে ধরি, তারপর জিজ্ঞেস করা যাবে লিসটারকে কি করেছে।
চলে যান, কিশোর বলল। পরে নেমে তার পিছু নেব।
এগিয়ে গেল আরনি। পেছনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইল গোয়েন্দারা। দেখল, বেড়ার কাছ থেকে সরে যাচ্ছে পিকো। দৌড় দিল হাইওয়ের দিকে।
পুরো আধপাক ঘুরে গাড়ির মুখ আবার ঘুরিয়ে ফেলল আরনি। হেডলাইট নিভিয়ে দিয়ে এগোল। আরেক বার পাশ কাটাল পিকোর। লোকটা তখন হেঁটে চলেছে। আরনির গাড়ির পার্কিং লাইট শুধু জ্বলছে। অন্য গাড়ি মনে করল পিকো। হাত তুলল থামানোর জন্যে। লিফট চায়।