দেখতে পাচ্ছে কাগজটার বিভিন্ন জায়গা কাটা। শব্দ! প্রথম পৃষ্ঠার হেডলাইন থেকে শব্দ কেটে নেয়া হয়েছে। ওগুলো কেটেই লাগিয়েছিল এলেনার কাছে। পাঠানো নোটে…
কিশোর? রান্নাঘর থেকে ডাকল বেসিন। কি করছ? পাওনি?
ভীষণ চমকে গেল কিশোর। তাড়াতাড়ি ব্যাগের ভেতরে উইণ্ডব্রেকারটা ঢুকিয়ে আগের মত করে রেখে দিল। দ্রুত হাতে তিন টুকরো কেক কেটে নিয়ে বেরিয়ে এল প্যান্ট্রি থেকে।
আপনার জন্যে আনলাম না, বেসিনকে বলল সে।
না, খাব না। ঠিকই করেছ।
খেতে শুরু করল রবিন আর মুসা। একটা টুল টেনে নিয়ে নিজের টুকরোটায় কামড় বসাল কিশোর।
তারপর? যেন নিছকই আলোচনার জন্যে বলল বেসিন। এলেনার সঙ্গে কেমন কাটছে তোমাদের? কিছু পেলে? বাবাকে মুক্ত করতে পারবে মেয়েটা?
চেষ্টা তো নিশ্চয় করবে। কিন্তু খুব কঠিন কাজ। কিডন্যাপার এমন একটা জিনিস চাইছে যেটার মাথামুণ্ড কিছুই বোঝা যায় না। টাকাটুকা কিছু না, লোকটা। চাইছে বিশপের বই।
খাওয়া থামিয়ে দিয়েছে রবিন আর মুসা। কিশোরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দুজনে। মুসা বলেই ফেলতে যাচ্ছিল, কিন্তু আমরা তো জানি!
কি ভেবে বলল না সেকথা। বলার জন্যে মুখ খুলে ফেলেছে, কিছু একটা বলতেই হয়, লিসটারের বাড়ির হাজার হাজার বই ঘেঁটে ফেলেছি আমরা। আরও কত জিনিস যে ঘেঁটেছি। কোন কিছুই ফেলে দেয় না লোকটা। এক অদ্ভুত চরিত্র।
হাসল বেসিন। হ্যাঁ। বেশির ভাগেরই কানাকড়ি দামও নেই।
ভাবছি, কিশোর বলল, সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিনেও যাব। বোম্প্রিট ড্রাইভের শিপইয়ার্ডটার কথা শুনেছেন? সেখানে ড্রাই ডুকে লিসটারের একটা ইয়ট তুলে রাখা হয়েছে। আইলিন লিসটার। দেখা যাক, বিশপের বই মেলে কিনা ওখানে। ওখানেও নিশ্চয় বাড়ির মতই জঞ্জাল বোঝাই করে রেখেছেন লিটার।
রাখলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিশোরের কাঁধের ওপর দিয়ে দরজার দিকে তাকাল বেসিন। এসেছ। এস। টাকা রেড়ি। যা বলেছিলাম তার চেয়ে বেশিই পাবে।
ফিরে তাকিয়ে কিশোরও দেখতে পেল পিকোকে। ছেলেদের দিকে একবার মাথা নুইয়ে এগিয়ে গেল বেসিনের কাছে।
তোমাদের হল? রবিন আর মুসাকে বলে শেষ টুকরোটা মুখে পুরল কিশোর।
বেসিনকে গুডবাই জানিয়ে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। দাঁড়িয়ে রয়েছে বেসিনের ভ্যান। সেটার পাশ কাটাল ওরা। গলি পার হয়ে এসে পড়ল বড় রাস্তায়। ফিরে তাকাল কিশোর।
ব্যাপারটা কি বল তো? জিজ্ঞেস করল রবিন। ওরকম না জানার ভান করলে কেন?
নিশ্চয় কিছু বের করেছ, মুসা বলল।
প্যানট্রিতে একটা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ আছে, কিশোর বলল। লিসটারের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের জিনিস। তার মধ্যে একটা খবরের কাগজ আছে। কিছু কিছু শব্দ কেটে নেয়া হয়েছে।
বল কি! হাঁ হয়ে গেল রবিন।
ঠিকই বলছি।
বেসিন? বিশ্বাস করতে পারছে না মুসা। ও কিডন্যাপার? যত যাই বল আমার বিশ্বাস হয় না! তোমার দাদা ড্রাকুলা ছিলেন একথা বললে যেমন বিশ্বাস হবে না
বিশ্বাস না হলেও ব্যাপারটা সত্যি হতেই পারে, বাধা দিয়ে বলল কিশোর। বেসিনের ব্যাপারটাও অসম্ভব কিছু নয়। নিজের চোখকে তো আর অবিশ্বাস করতে পারি না।
তার মানে তার জন্যে একটা ফাঁদ তৈরি করে এলে, রবিন বলল।
করে এলাম। সে ভাববে শিপ ইয়ার্ডে ইয়টের মধ্যে থাকতে পারে বিশপের, বই। জানল তো। দেখা যাক এখন কি করে।
উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল মুসা। তার পিছু নিতে হলে একটা গাড়ি এখন জরুরী। আমাদেরগুলো তো জাহান্নামে গেছে। কোথায় যে পাই…
আরনি ভিনসেনজোর কাছে, সমাধান করে দিল কিশোর। আমাদেরকে সাহায্য করবে কথা দিয়েছে সে।
.
১৪.
পনেরো মিনিটেই পৌঁছে গেল আরনি। ধূসর রঙের একটা সিডান নিয়ে এসেছে। বাম্পারে মরচে পড়া। রঙ চটে গেছে জায়গায় জায়গায়। পাশের বাড়ির একজনের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছি, জানাল সে। ইচ্ছে করেই আনলাম। এত পুরনো গাড়ির ওপর নজর দেয় না কেউ। তা কার পিছু নিতে হবে?
হেনরি বেসিন, কিশোর বলল। ওদিকটায় তার দোকান। বেরোবে। এখনই।
বেসিন? অবাক হল আরনি। সে এতে জড়িত? এত ভাল একটা লোক?
বিশ্বাস করা শক্ত, স্বীকার করল কিশোর। কিন্তু আমি প্রমাণ পেয়েছি-ওই যে, বেরোল।
ক্যাটারিং শপের পেছন দিকে তাকাল সবাই। ছিটকানি লাগাচ্ছে বেসিন।
ইঞ্জিন স্টার্ট দিল আরনি।
ভ্যানে উঠল বেসিন। চলতে শুরু করল গাড়িটা।
মাথা নিচু করে ফেলল ছেলেরা।
মোড়ের কাছে গিয়ে ব্রেক করল বেসিন। ডানে বায়ে তাকাল। তারপর মোড় নিয়ে কোস্ট হাইওয়ের দিকে রওনা হল।
একটা ব্লক তাকে এগোতে দিল আরনি। তারপর অনুসরণ করে চলল।
চৌরাস্তায় এসে থামতে হল বেসিনকে। লাল আলো জ্বলেছে। দূরে থাকতেই গতি কমিয়ে দিল আরনি। আরেকটা ভ্যান পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গিয়ে ঢুকে পড়ল মাঝের ফাঁকে। গাড়িটাতে কয়েকজন লোক, সার্ফ করতে চলেছে সাগরে।
বেশ সাবধানী লোক আপনি, প্রশংসা করল মুসা।
হাসল আরনি। ডিটেকটিভ ছবি দেখেছি অনেক। কি করে অনুসরণ করতে হয় শিখে নিয়েছি।
সবুজ আলো জ্বলল। হাইওয়েতে উঠল গাড়িগুলো। উত্তরে চলল, বোম্প্রিটের। দিকে। শেষ মোড়টার কাছে গিয়ে উত্তেজনায় টান টান হয়ে গেল কিশোরের স্নায়ু। কিন্তু তাকে হতাশ করে দিয়ে থামল না ক্যাটারারের ভ্যান, সোজা এগিয়ে চলল।
কিশোর, রবিন বলল। থামল না তো! তার মানে এসবে নেই?