গিয়েছি। বইটা একজন লিশপের ডায়রি। কয়েক শো বছর আগে কলাম্বিয়ায় বাস করতেন। সোনার খানকে সাংসাতি অত্যাচার করতেন ইনডিয়ানদের ওপর, সে জন্যে নাম হয়ে গেছে রক্তাক্ত বিশপ। অসুখ হয়ে বিশপ মারা গেলে ডায়রিটা নিখোঁজ হয়ে যায়। সব কিছু পরিষ্কার বলা যাচ্ছে না, কারণ বইটার পুরো অনুবাদ করা হয়নি। উক্টর মনটাগোর কাছে রেখে আসতে পারলে, সময় দিতে পারলে, হত। আমরা তো সেটা করতে পারি না।
না, পার না।
আরেকটা কথা, ঈশ্বরের অশ্রু জিনিসটা কি জানতে পেরেছি। অ্যাডিজ পর্বতের ইনডিয়ানরা পান্নার ওই নাম দিয়েছে।
পান্ন? এক সেকেও চুপ করে থাকল এলেনা। তারপর আবার বলল, পান্না? আমাকে এতগুলো দামী জিনিস দান করে দিল আব্বা? মধ্য গ্রীস্মের দিন আর বৃদ্ধা টি মহিলা বলতেই বা কি বোঝাতে চেয়েছে? আরও যেসব সংকেত?
আপনার আব্বাকে উদ্ধার করে আনতে পারলে সমস্তই জানা যাবে। এখন যেটা জরুরী, বইটা কিডন্যাপারকে দিয়ে তাকে মুক্ত করে আনা। আজ রাতে কোথায় থাকবেন? ওখানেই? কাউকে আপনার সঙ্গে থাকতে হবে?
না, এলেনা বলল। দরকার নেই। আজ রাতে আম্মা এসে থাকবে বলেছে। কিছু জানতে পারলে তোমাদেরকে জানাব।
লাইন কেটে দিল এলেনা।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আবার বেজে উঠল ফোন। হেনরি বেসিন ফোন করছে। এলেনা লিসটার আমার সমস্ত পাওনা মিটিয়ে দিয়েছে। দোকানে আসতে পারবে? তোমাদের টাকাটা দিয়ে দিতাম।
নিশ্চয়ই, জবাব দিল কিশোর।
রিসিভার নামিয়ে রেখে বইটা আলমারিতে ভরে তালা দিল কিশোর। তারপর দুই সহকারীকে নিয়ে বেরিয়ে এল ট্রেলার থেকে। সাইকেল নিয়ে রওনা হল।
রকি বীচের একটা গলিতে বেসিনের দোকান। ছেলেরা পৌঁছে সামনের অংশে। কাউকে দেখতে পেল না। রান্নাঘরে চলে এল ওরা। ওখানে পাওয়া গেল বেসিনকে। টেবিলে খাতা বিছিয়ে গভীর মনোযোগে হিসেব করছে। কিশোররা ঢুকতে একটা মেয়ে বেরিয়ে গেল। সে-ও পার্টিতে কাজ করতে গিয়েছিল। পাওনা বুঝে নিয়ে গেল বোধহয়।
হাসল বেসিন। টাকা রেডিই রেখেছি। একটা করে খাম তুলে দিল তিনজনের হাতে। সবাইকেই দিয়েছি। বাকি রইল একমাত্র পিকো।
পিকো? কিশোর বলল। ওহহো, মনে পড়েছে। ধোয়ামোছার জন্যে যাকে নেয়া হয়েছিল।
হ্যাঁ। গত দুহপ্তা ধরে আমার এখানে কাজ করছে। অনেক সাহায্য হচ্ছে আমার।
নিজের খামটা খুলল রবিন। নোটগুলো গুণে বলল, বেশি দিয়ে ফেলেছেন।–
কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, বেসিন বলল। এত কম হাতে উঠছিল না। অনেক খেটেছ, দেখেছি তো। চকলেট কেক খাবে? কাল বিকেলে একটা বাচ্চার জন্মদিনে গিয়েছিলাম। অনেক কেক বেঁচেছিল, নিয়ে এসেছি। আমি মুখেও দিতে সাহস করিনি। এমনিতেই মোটা হয়ে যাচ্ছি। আমার গার্লফ্রেণ্ডও জানলে মাথায় বাড়ি দেবে।
কেকটা ভালই হয়েছে, না? জানতে চাইল কিশোর।
হাসল বেসিন। প্যানট্রিতে রয়েছে। ওই দরজাটার ওপাশে, তাকে।
প্যানট্রিতে এসে ঢুকল কিশোর। মেঝে থেকে ছাত পর্যন্ত রয়েছে অসংখ্য তাক। জিনিসপত্র বোঝাই। চকলেট, ময়দা, চিনি, তেল, খাবার বানাতে লাগে। এরকম নানা জিনিস।
চকলেট কেকটা নামাতে দরজাটা বাধা হয়ে দাঁড়াল। পাল্লাটা অর্ধেক ভেজিয়ে দিল কিশোর। কেকের পাত্রের পাশে যে ছুরিটা রেখে দিয়েছে বেসিন সেটা নেয়ার জন্যে হাত বাড়িয়েছে সে, এই সময় পায়ে লাগল কি যেন। নিচে চেয়ে দেখল দরজার পেছনে একটা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ ঠেলে রাখা হয়েছে। লাল ব্যাগ। উজ্জ্বল বেগুনী রঙে লেখা রয়েছে কোম্পানির নাম। ডি এল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে এসেছে জিনিসটা।
একটা মুহূর্ত ওটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। তাহলে লিসটারের দোকানে গিয়েছিল বেসিন। তা যেতেই পারে। জিনিস কিনতে যে কেউ যেতে পারে ওই দোকানে। ক্যাটারার গেলেও কোন দোষ নেই। কি কিনতে গিয়েছিল? শার্ট? জুতো? এন্থনির সঙ্গে নিশ্চয় ব্যবসার সম্পর্ক নেই বেসিনের।
এলেনার মায়ের বাড়ি থেকে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে আসছে এনথনি, দৃশ্যটা মনে পড়ে গেল কিশোরের। ঠিক কোন জায়গাটায় ছিল সে, যখন মহিলার সঙ্গে কথা বলছিল কিশোর?
লুকিয়ে ছিল। আর কোন ব্যাখ্যাই হতে পারে না। যদি কোন কুমতলব না থাকত, আর শুধুই দেখা করতে যেত তাহলে লিভিং রুমেই বসে থাকত, স্বাভাবিক ভাবে। কিশোরের সামনে থাকতে দ্বিধা করত না। কিন্তু সে লুকিয়েছিল। কেন?
তার সঙ্গে হেনরি বেসিনেরও কোন সম্পর্ক রয়েছে? লিসটারের কিডন্যাপের ব্যাপারে তারও হাত রয়েছে? নাহ, লোকটাকে দেখে সেরকম মনে হয় না। তবে মুখ দেখে সব সময় অপরাধীকে সনাক্ত করা যায় না। তাহলে মোটিভটা কি? লিসটারের কমপিউটারে বেসিনের নাম নেই। থাকার কথাও নয়। লিসটারের কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে না বেসিন। কিন্তু তাই বলে শত্রুতা থাকতে পারে না এমন কোন কথা নেই। কে যে কখন কিভাবে কার শত্রু হয়ে উঠবে বলা মুশকিল। এমনও হতে পারে রক্তাক্ত বিশপের ডায়রির কথাটা জানে বেসিন। কিংবা এনথনি জানিয়েছে। বেসিনের টাকার দরকার। কাজেই সাহায্য করতে রাজি হয়েছে। ঘুস নিয়েছে।
প্ল্যাস্টিকের ব্যাগের ওপর দিকটায় নীল রঙের কি যেন রয়েছে। ঝুঁকে ছুঁয়ে দেখল, কিশোর। একটা উইণ্ডব্রেকার। নাড়া লেগে কাত হয়ে পড়ে গেল ব্যাগটা, ভেতর থেকে বেরিয়ে পড়ল উইণ্ডব্রেকারটা। ওটার নিচে রয়েছে ভঁজ করা একটা খবরের কাগজ। চুলো না কিশোর। শুধু তাকিয়ে রইল।