প্রফেসর সাইনাস দরাজ হাসি হাসলেন তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে। যাও, পেয়ে গেলে আরেকটা রহস্য। পুরনো রহস্য খুঁচিয়ে বের করতে তো ওস্তাদ তোমরা। বেশি না, মাত্র চারশো বছরের পুরনো এই ঘটনা। সূত্রটুত্র এখনও নিশ্চয় কিছু পাবে।
স্বর্ণ জড়িত থাকতে পারে এতে, মনটাগো বললেন। ছেলেদের দিকে তাকালেন। দক্ষিণ আমেরিকায় এসে ঢুকল স্প্যানিশ সৈন্যরা। মার্চ করে এগিয়ে। চলল। চলার পথে যত জমি পড়ল, সব দখল করে নিল রাজা আর রানীর নামে। সোনাও পাওয়া যেত মাঝে মাঝে। জাহাজ বোঝাই করে সেসব সোনাচালান যেত স্পেনে। মূল্যবান, যা কিছু পেয়েছে নিয়ে গেছে স্প্যানিশরা। জোর করে ধরে এনে ইনডিয়ানদেরকে খনির কাজ করতে বাধ্য করেছে। শোনা যায় সোনার খনিতে যে। সব ইনডিয়ানরা কাজ করত তাদের ওপর ভয়াবহ অত্যাচার করেছেন বিশপ জিমিনিজ। সে জন্যেই তার নাম হয়ে গিয়েছিল রক্তাক্ত বিশপ…
ও, কথাটা শোনামাত্রই বিশপের ওপর থেকে শ্রদ্ধা চলে গেল রবিনের। এই ব্যাপার। তাহলে তো তার নাম রাখা উচিত ছিল রক্তখেকো বিশপ।
তবে সত্যিই তিনি অত্যাচারী ছিলেন কিনা জানা যায়নি, মনটাগো বললেন। হতে পারে রাজার লোকেরাই গিয়ে মিথ্যে কথা ছড়িয়েছে। খনির ওভারশিয়ার নিজেই হয়ত ওসব অত্যাচার করেছে, দোষ দিয়েছে বিশপের। শত শত বছর পরে এখন আর কে ঠিক করে করে বলবে?
যাই হোক, বিশপ নাকি পরে নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হয়েছেন। বৃদ্ধ বয়েসে ইনডিয়ানদের সঙ্গে ভাব করে অতীত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে চেয়েছেন। লোকে মানুষের ভালটার চেয়ে খারাপটাই বেশি দেখে। ভাল বেশি। হলেও দেখে না, খারাপ কম হলেও সেটা মনে রেখে দেয়। রক্তাক্ত বিশপের বেলায়ও এই ব্যাপারই ঘটেছে। তার কুকর্মগুলোর কথাই বেশি মনে রেখেছে লোকে।
নীরব হয়ে রইল ছেলেরা। ভাবছে সেই চারশো বছর আগের ঘটনার সঙ্গে বর্তমান লিসটার কিডন্যাপিঙের কি যোগাযোগ?
অবশেষে জিজ্ঞেস করল কিশোর, বিশপ জিমিনিজের জার্নালটা কি খুবই দামী কিছু? যেটা খোয়া গেছে?
দ্বিধায় পড়ে গেলেন ডক্টর মনটাগো। দামী? তা সবার জন্যে না-ও হতে পারে। স্কলার আর ঐতিহাসিকদের কাছে হয়ত অমূল্যই হবে, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে নয়। এই যেমন ম্যাগনা কার্টা-র লেখার খসড়া, কিংবা কলম্বাসকে লেখা রানী ইসাবেলার চিঠির মত অনেক দামে বিক্রি হবে না এটা।
বইটা বগলদাবা করলেন মনটাগো। কিন্তু একজন স্কলারের কাছে? অসাধারণ! আমি আর থাকতে পারছি না। এখনই গিয়ে অনুবাদে বসতে চাই…
না না! রবিন বলল।
সময় পাবেন না! বলল মুসা।
মানে? হাসি মুছে গেছে মনটাগোর।
এর বর্তমান মালিক কিডন্যাপড হয়েছেন, বুঝিয়ে বলল কিশোর। তাঁকে মুক্তি দেয়ার বিনিময়ে এই বইটা দাবি করেছে কিডন্যাপার। কালকের মধ্যে না দেয়া গেলে কি করে বসে ঠিক নেই।
ও, চিন্তায় পড়ে গেলেন যেন ডক্টর। পরক্ষণেই উজ্জ্বল হল মুখ। তাহলে…ফটোকপি করার সময়…নাহ, হবে না। এরকম বই সাধারণ জেরোক্স মেশিনে করা যাবে না। ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হবে। বিশেষ ব্যবস্থায় ফটোকপি করে নেবে ওরা।
বগলের নিচ থেকে বইটা বের করে ওটার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকালেন ডক্টর। যেন ওটা একটা মহামূল্যবান বস্তু। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়িয়ে দিলেন বলে কিশোরের দিকে।
আশা করি, বললেন তিনি। আর এটা নিখোঁজ হবে না। কোনভাবে বাঁচাতে যদি পার…।
চেষ্টা তো নিশ্চয় করব, স্যার, আশ্বাস দিল কিশোর। আর রাখতে পারলে অনুবাদের জন্যে আপনাকেই প্রথম দেব।
দরজার দিকে চলল তিন গোয়েন্দা। হঠাৎ ফিরে তাকাল কিশোর, আচ্ছা, ঈশ্বরের অশ্রুর কথা আপনি কিছু জানেন, স্যার?
ঈশ্বরের অশ্রু? ভুরু কোচকালেন মনটাগো। পান্নার ওই নাম রেখেছে ইনডিয়ানরা। কেন? তার সঙ্গে এই বইয়ের কোন সম্পর্ক আছে?
থাকতে পারে!
.
১৩.
পান্না! চেয়ারে হেলান দিয়ে হাসল রবিন। তাকিয়ে রয়েছে হেডকোয়ার্টারের ছাতের দিকে। স্প্যানিশ সৈন্য! চোরাই ডায়রি! নিরুদ্দেশ চাকর! সব মিলিয়ে। চমৎকার এক রহস্য! মিস্টার ক্রিস্টোফার শুনলে খুব খুশি হবেন। এরকম কাহিনীই তো তিনি চান ছবি বানানোর জন্যে।
কিশোরও হাসল। বানাতে চাইলে অপেক্ষা করতে হবে তাকে। সমস্ত রহস্যের জট খুলে পুরো একটা কাহিনী তৈরি করতে হবে, তার পর না ছবি।
মেসেজের কমপিউটার প্রিন্ট আউটটা ডেস্কে রেখে দেখছে গোয়েন্দাপ্রধান। ঈশ্বরের অশ্রু এলেনার জন্যে সূত্র। কিন্তু অশ্রুগুলো কোথায়? আর রক্তাক্ত বিশপের সঙ্গে এর কি সম্পর্ক ছিল?
কলাম্বিয়ায় প্রচুর পান্না পাওয়া গেছে, রবিন বলল। পান্নার খনি আছে। ওখানে। দুনিয়ার সব চেয়ে বড় পান্নার খনি, রেফারেন্স বইতে পড়েছি। মনে হচ্ছে, ওগুলো খুঁজে আনার জন্যে এলেনাকে সোগামোসোতে যেতেই হবে। পান্নার খনির সঙ্গে বিশপের কোন যোগাযোগ ছিল না তো? নাকি শুধুই সোনা?
ঘড়ি দেখল কিশোর। দেরি হয়ে যাচ্ছে। বিকেল তো শেয। ফোন করে এলেনাকে জানানো দরকার সব কথা। রিসিভার তুলল সে। লিটারের নম্বরে ডায়াল করল। দ্বিতীয়বার রিং হতেই জবাব দিল এলেনা। আমি, কিশোর বলল। কি ব্যাপার? উত্তেজিত লাগছে। ফোন করেছিল নাকি আবার?
না। তুমি করলে তো, ভাবলাম কিডন্যাপারই করেছে। রুক্সটনে গিয়েছিলে?