আরেকজনের পুরস্কার লিসটার রেখেছেন কেন? রবিনের প্রশ্ন।
এগিয়ে গেল কিশোর। ট্রফিটার দিকে চোখ। মেঝেতে স্তূপ করে রাখা জিনিসে পা বেধে হুমড়ি খেয়ে পড়ত আরেকটু হলেই। পেছনের দেয়াল থেকে টেনে সরিয়ে আনা হয়েছে একটা তাক। কাত হয়ে রয়েছে ওটা। বইপত্র মেঝেতে ছড়ানো। নিচু হয়ে স্কুপের সব চেয়ে ওপরের বইটা তুলে নিল কিশোর। অনেক পুরনো একটা বই। চামড়ায় বাধানো। শক্ত হয়ে গেছে পুট, ফলে খুলে ছেড়ে দিলেই ঝট করে বন্ধ হয়ে যায়, যেন স্প্রিং লাগানো রয়েছে।
আলো ফেলে ভাল করে দেখল কিশোর। ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইল কাভারের ডিজাইনটার দিকে। চোখা, উঁচু চূড়াওয়ালা একটা টুপির মত দেখতে। টুপিটার সামনের দিকে একটা ক্রস।
দুই সহকারীকে দেখাল ওটা সে। বিশপের টুপির মতই তো লাগছে। বিশপের বইটা বোধহয় খুঁজেই পেলাম অবশেষে।
দরজার দিকে ঘুরল সে। ডেকে ফিরে যাওয়ার জন্যে। বাধা পেল। দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে একজন মানুষ। চওড়া কাধ। নীল রঙের ওয়র্ক শার্ট পরা।
ভালুকের থাবার মত বড় একটা হাত বাড়াল লোকটা। ওটা নিয়ে যেতে পারবে না এখান থেকে। দেখি, দাও!
.
১২.
বারো বিশালদেহী লোকটার পেছনে এসে হাজির হল আরও দুজন। চুপ করে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই তিন গোয়েন্দার।
বইটা দিতে চাইল না কিশোর। তার হাত থেকে কেড়ে নিল বিশালদেহী লোকটা।
পেছনের একজনের হাতে একটা পাইপ। এক হাতে আলতো করে ধরে ওটার মাথা বাড়ি মারতে লাগল আরেক হাতের তালুতে। এমন ভঙ্গিতে কিশোরের দিকে। তাকাল, যেন তার মাথায় বাড়িটা মারতে পারলে খুশি হত।
বিরক্ত করে ফেলেছে, লোকটা বলল। কি করে যে বেড়া ডিঙিয়ে চলে আসে! আর এলেই কেবল চুরির তাল! এবার আর ছাড়ছি না। চুরির মজা এবার টের পাবে।
আমরা চোর নই, জবাব দিল কিশোর। মিস এলেনা লিসটারের অনুরোধে এসেছি। গেটে সই করেছি। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
সন্দেহ ফুটল লোকগুলোর চোখে। একজনও স্বীকার করতে রাজি নয়, ভুল করেছে।
আমাদের কিছু হলে মিস লিসটারের কাছে জবাব দিতে হবে আপনাদেরকে, গম্ভীর কণ্ঠে বলল আবার কিশোর।
এবং শুধু দিয়েই পার পাবেন না, আরেকটু ঘাবড়ে দেয়ার জন্যে বলল মুসা, আরও ভোগান্তি আছে।
সেটা বুঝতে পেরে রবিন বলল, পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচার আমাদের বন্ধু। যান। বিশ্বাস না করলে থানায় ফোন করে দেখতে পারেন। কিশোর পাশা, মুসা আমান আর রবিন মিলফোর্ডকে চেনে কিনা জিজ্ঞেস করুন।
কি বল, ডিক? পাইপওয়ালা লোকটার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল। একজন।
আমাদের বোকা বানাচ্ছে, বলল বিশালদেহী ভালুক। কিন্তু গলায় জোর নেই। তাকিয়ে রয়েছে গেটের দিকে, যেখান দিয়ে ঢুকেছে ছেলেরা।
শিওর হওয়া দরকার, বলল তৃতীয়জন। আগেই কিছু করা উচিত হবে না। গেটে যাওয়ার জন্যে রওনা হল সে।
অপেক্ষা করতে লাগল অন্য দুজন। কয়েক মিনিটের মধ্যেই ফিরে এল। লোকটা। সঙ্গে এসেছে দারোয়ান। ছেলেদের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, হ্যাঁ, এরাই। আধ ঘন্টা আগে ঢুকতে দিয়েছি।
তাই, সাংঘাতিক নিরাশ হল যেন বিশালদেহী লোকটা। কিছু কিলচড় দেয়ার জন্যে হাত নিশপিশ করছিল বোধহয়। সেটা আর পারল না। বেশ। কর, যা করছিলে।
বইটা দিন, হাত বাড়াল কিশোর।
সরি! বইটা ফেরত দিল লোকটা। ভুল হয়ে গেছে। অনেক চোরছ্যাচড়। আসে তো, বড় জ্বালাতন করে।
চলে গেল লোকগুলো। লোহালক্কড়ের জঙ্গলে ওরা হারিয়ে না যাওয়া তক অপেক্ষা করল ছেলেরা। তারপর লম্বা দম নিয়ে হাতের রইটার দিকে তাকাল। কিশোর।
তুমি কাঁপছ, মুসা বলল।
দূর! মনে মনে ধমক দিয়ে হাতটাকে কাঁপতে নিষেধ করল কিশোর। ধাপ্পা দিচ্ছিল লোকগুলো। কিছুই করত না।
বইটার মলাট ওলটাল সে। ভয় হল পাতা খুলে ছড়িয়ে যাবে, কিন্তু গেল না। শুকিয়ে খসখসে হয়ে আছে। বেশি জোরে চাপ লাগলে মুড়মুড় করে ভেঙেও যেতে পারে, এমনই মনে হল তার কাছে। বইয়ের মাঝের কয়েকটা পাতা নেই। কেটে নেয়া হয়েছে।
এটা একটা ডায়রি, ঘোষণা করল যেন গোয়েন্দাপ্রধান। কিংবা ডায়রির মতই কিছু। হাতে লেখা। তারিখ রয়েছে। শুরু হয়েছে এনিরো দিয়ে। স্প্যানিশে জানুয়ারিকে এনিরো বলে। জানুয়ারির পয়লা তারিখে বিশপ সান্তাফে বোগোটা নামে একটা জায়গায় গিয়েছিল…
বোগোটা! প্রায় চিৎকার করে বলল রবিন। ওটা তো কলাম্বিয়ায়! তাহলে সোগামোসোর সঙ্গে একটা যোগাযোগ পাওয়া গেল। সোগামোসোও কলাম্বিয়ায়।
ঠিক! শান্ত থাকার চেষ্টা করছে কিশোর, কিন্তু পারছে না, চকচক করছে চোখ। এখন আর স্বীকার করতে বাধা নেই ডেভিড লিসটারের গায়েব হওয়ার সঙ্গে ওই কমপিউটারের মেসেজেরও সম্পর্ক রয়েছে। হয়ত ওটাই আসল কারণ।
কিন্তু বইটার ব্যাপারে কি হবে? মুসার প্রশ্ন। কিশোর, কি আছে, বলত?
ভ্রূকুটি করল কিশোর। অনেক শব্দই অপরিচিত। লেখাও আবছা। আর এত ঘন, মাঝে মাঝে দুটো লাইন প্রায় এক হয়ে গেছে। আমার পড়ার সাধ্য হবে না, বলল সে। ইংরেজি হলেও পারতাম না, যা অবস্থা।
কিশোরের কাঁধের ওপর দিয়ে তাকাল রবিন। হ্যাঁ। পুরনো দলিলের মত। যেগুলোতে এস লিখলে এফ-এর মত লাগে।
তাহলে আর এখানে দাঁড়িয়ে আছি কেন? মুসা বলল, জলদি চল, প্রফেসর সাইনাসের কাছে চলে যাই। ডক্টর ওয়ালটার সাইনাস, রুক্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের প্রফেসর, স্প্যানিশ আর মেকসিকান ইতিহাস বিশেষজ্ঞ। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের বন্ধু। আগেও অনেক সাহায্য করেছেন তিন গোয়েন্দাকে।