আমাকে কডিই বলবে। ওটা ছদ্মনাম নয়। মিডল নোম। আরনি কডি ভিনসেনজো। বন্ধুরা আমাকে ওই নামেই ডাকে। আর কাল চলে না গিয়ে কি করতে পারতাম। এত বড় অপমান…থাক ওসব কথা। আজ থানায় গিয়েছিলাম। লিসটারের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহী নয় পুলিশ। তেমন মাথা ঘামাচ্ছে না। তবে কিডন্যাপের কথা জানলে হয়ত ঘামাত। আর তখন আমিও তাদের সন্দেহের তালিকায় পড়ে যেতাম।
কারণ লিসটারকে কিডন্যাপের মোটিভ রয়েছে আপনার, কিশোর বলল।
হ্যাঁ, স্বীকার করল আরনি। ওই বুড়ো ভামটাকে একটা শিক্ষা দেয়ার ইচ্ছে ছিল আমার। আমার বাবার সর্বনাশ করার জন্যে।
সহজ সরল স্বীকারোক্তি। বন্ধুদের দিকে তাকাল কিশোর।
সত্যিই বলছে মনে হয়, বিড়বিড় করল রবিন।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। বেশ, বিশ্বাস করলাম আপনার কথা। কিন্তু আমাকে ফোন করেছেন কেন?
তোমাদের ওপর এলেনার বিশ্বাস আছে, তাই আমারও হয়েছে। মিস্টার লিসটারকে খুঁজে বের করতে আমার কোন সাহায্য দরকার হলে, করব। এটা তার জন্যে দয়া নয়, আমার নিজেরই স্বার্থে। যতদিন লিসটার নিখোঁজ হয়ে থাকবে, আমার ওপর সন্দেহ থাকবে তোমাদের। এটা বয়ে বেড়াতে পারব না আমি। কাজেই, আমাকে দরকার হলেই ফোন করবে।
এখনই একটা কথা ভাবছি, কিশোর বলল। মোগামোসো সম্পর্কে কিছু জানেন?
সোগা…সোগা কে?
নামটা আবার বলল কিশোর। কিছু বুঝতেই পারল না আরনি, বলা তো দুরের কথা। সিয়েটার কথা শুনে বলল, ওই নামে কয়েকজনকে চিনি। খুব প্রচলিত এই নাম, অনেকেই রাখে। তাঁদের কেউই লিসটারকে চেনে না এটাও বলতে পারি।
কখনও ঈশ্বরের অশ্রুর কথা বলতে শুনেছেন মিস্টার লিসটারকে? ঈশ্বরের অশ? তা কি করে হয়? কি করে হয় জানি না। তবে ওটা মিস্টার লিসটারের কাছে খুবই জরুরী। সরি। শুনিনি। শুনলে ওরকম একটা কথা মনে না থাকার কথা নয়।
তা ঠিক। আরেকটা প্রশ্ন। সোগামোসোর কথা আমরা জানি। ওটা কলাম্বিয়ার। একটা ছোট শহর। কোকেনের প্রধান ঘাঁটিগুলোর একটা। মাদকদ্রব্য চোরাচালানের সঙ্গে মিস্টার লিসটারের কোন যোগ নেই তো?
মোটেই না, জোর দিয়ে বলল আরনি। মাদককে ঘৃণা করে লিসটার। নেশা করে শুনলেই যত ভাল কর্মচারীই হোক চাকরি থেকে বের করে দেয় সে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে এলেনাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার।
তাকে ধন্যবাদ দিল কিশোর।
যোগাযোগের জন্যে টেলিফোন নম্বর দিয়ে লাইন কেটে দিল আরনি।
অসংখ্য ছেঁড়া সুতো রয়েছে এই কেসে, কিশোর বলল। সব জোড়া দিতে। পারলে রহস্যের কিনারা করা যাবে না। অথচ কোনটার সঙ্গে কোনটার। যোগাযোগ দেখতে পাচ্ছি না এখনও{ দুদিন আগে যে অন্ধকারে ছিলাম এখনও তা-ই রয়েছি।
সোগামোসোও কোন সাহায্য করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না, মুসা বলল। ওখানে গিয়ে বৃদ্ধা মহিলার সঙ্গে এলেনা যোগাযোগ করার আগেই হয়ত এদিকে তার বাপ মরে ভূত হবে।
স্বাভাবিক মৃত্য যদি হয়, বলল রবিন। বয়েসের কারণে। ও-কে, এর পর কি করব?
এলেনার মা পরামর্শ দিয়েছেন আইলিন লিসটারে খোঁজ নিতে, কিশোর বলল। লিসটারের বাড়িতে তো আর খোঁজা বাদ রাখিনি। এখন জাহাজটায় গিয়ে খুঁজলে মন্দ হয় না। কোথায় আছে ওটা এলেনা নিশ্চয় জানে।
জানতে পারে, মাথা দোলাল রবিন। আর ওখানে বিশপের বইটা খুঁজে বের করতে পারলে তার বাবা মুক্তি পাবে। লিসটারই তখন বলে দিতে পারবে বৃদ্ধা। মহিলাকে কোথায় পাওয়া যাবে, কোথায় মিলবে ঈশ্বরের অশ্রু।
সান্তা মনিকায় এলেনার মায়ের বাড়িতে ফোন করল কিশোর। ফোন ধরল। এলেনা। সে ওদেরকে বলল সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিন করপোরেশনের ড্রাই ডকে রয়েছে ইয়টটা। ওটা একটা শিপইয়ার্ড, এলেনা বলল। বোটি ড্রাইভে। ফোন। করে আমি ওদেরকে বলে দিচ্ছি তোমরা যাচ্ছ। তোমাদের যাতে ইয়টে উঠতে দেয়া হয়।
মিনিট কয়েক পরেই কোস্ট হাইওয়ে ধরে সাইকেল চালিয়ে চলল তিন গোয়েন্দা। বিশ মিনিট একটানা প্যাড়াল করে এসে পৌঁছল বোটি ড্রাইভে।
তীর থেকে মাইলখানেকেরও বেশি সাগরের ভেতরে ঢুকে গেছে মানুষের তৈরি এক টুকরো জুমি। মাটি ফেলে ফেলে তৈরি করা। বিশাল এক দানবের আঙুল। যেন। আঙুলের মাথায় জেটি। একটা ইয়ট ক্লাব আর এক সারি দোকানপাট। জেটির দক্ষিণ পাশে। উত্তর পাশে কয়েকটা শিপইয়ার্ড। বড় রাস্তা থেকে প্রায়। কোয়ার্টার মাইল ভেতরে সেন্ট্রাল কোস্ট মেরিন করপোরেশন। ঝড়ের কবল থেকে রক্ষা করার জন্যে বেশ শক্ত বেড়া চারপাশ ঘিরে। গেটে পাহারা দিচ্ছে ইউনিফর্ম পরা দারোয়ান। গেটের পাশে ছোট গার্ডহাউসে বসে আছে সে।
গেটের কাছে এসে থামতে হল তিন গোয়েন্দাকে। পরিচয় দিল কিশোর।
হ্যাঁ, মিস লিটার ফোন করেছিলেন, দারোয়ান বলল। তবে বয়স্ক মানুষ আশা করেছিলাম আমি। যাকগে, মিস যখন বলেছেন, আমার কি এখানে সই করতে হবে। ঈশ্বরের অশ্রু
একটা নোটবুক বের করে দিল লোকটা। এক এক করে সই করল তিন গোয়েন্দা। তিনজনের নামের পাশে নোট লিখল দারোয়ান। তারপর তার পেছনের পেগবোর্ড থেকে একগোছা চাবি নিয়ে কিশোরের দিকে বাড়িয়ে ধরল, আইলিন লিসটারের কেবিন আর হুইলহাউসগুলোতে তালা দেয়া। এটা দরকার হবে।
ডানে দেখাল সে। ওদিক দিয়ে পথ। ওই যে স্কুনারটা, ওটার পাশ কাটিয়ে যেতে হবে। ওই যে, নিচের রঙ চেছে তুলে ফেলা হয়েছে যে। হ্যাঁ, তার পরেই রয়েছে আইলিন লিসটার। ড্রাই ডকে। বড় জাহাজ। কালো খেল। গলুইয়ের কাছে সোনালি রঙে নাম লেখা রয়েছে।