দৌড়ে গিয়ে বড় একটা টেবিলের নিচে লুকিয়ে পড়ল কিশোর।
আসবাবের সারির মাঝের পথ দিয়ে এগিয়ে এল ওরা। এখানেই আছে, বলল একজন। আশোঁপাশে কোথাও লুকিয়ে পড়েছে।
কিশোর যে টেবিলের নিচে লুকিয়েছে তার কাছে এসে দাঁড়াল আরেকজন। মোটা গলায় বলল, কাল রাতে দেখলে না কেন? কারও চোখে পড়ল না?
সব কটা চেয়ার টেবিলের তলায় তো আর উঁকি দেয়া সম্ভব না, প্রথম লোকটা জবাব দিল। টহল দিই। তখন চোখে পড়লে তো ধরতামই।
লোকগুলো চলে গেলে বেরিয়ে এসে মাথা তুলে উঁকি দিল কিশোর। ডিসপ্লে উইনডোর কাছে দেখতে পেল ওদেরকে। সোফাটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, যেন ওটাই ওদেরকে বলে দেবে কিশোর কোথায় আছে।
পেছনে শব্দ হল। ফিরে তাকাল কিশোর। হাড়সর্বস্ব একজন মানুষ দাঁড়িয়ে রয়েছে দোকানের প্রধান প্রবেশ পথের কাছে। পরনে জলপাই রঙের জাম্প স্যুট। তালা খুলল লোকটা। তারপর টান দিয়ে তুলতে শুরু করল ইস্পাতের শাটার।
পথ পরিষ্কার হয়ে আসছে।
লাফিয়ে উঠে দৌড় দিল কিশোর। একছুটে লোকটার পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে এল বাইরে। চিৎকার চেঁচামেচি কিছুই করল না লোকটা। অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে শুধু তার দিকে।
চত্বরে বেরোল কিশোর। এই সময় শুনতে পেল চিৎকার। দেখার জন্যে থামল।, ফিরেও তাকাল না। ছুটে চতুর পার হয়ে অটোমেটিক দরজা দিয়ে বেরিয়ে চলে এল পার্কিং এরিয়ায়।
র্যাকে আগের জায়গাতেই বাঁধা রয়েছে সাইকেলটা। খুলতে গিয়ে তাড়াহুড়োয় হাত থেকে চাবিই ফেলে দিয়েছিল প্রায়। কাঁপা হাতে খুলল তালাটা। একটানে সাইকেলটা বের করে নিয়েই চেপে বসল। প্যাডাল ঘোরাতে শুরু করল। পেছনে ছুটে আসছে লোকজন।
এবারও ফিরে তাকাল না কিশোর। এখন একটাই করণীয়, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া, লোকগুলোর হাতে পড়ার আগেই।
.
১১.
ভূত বিশ্বাস করি না আমি, ঘোষণা করল কিশোর। ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে। মুসার দিকে।
তা তো বুঝলাম, মুসা বলল। কিন্তু ভূত না হলে কী?
বাতাসের কারসাজি হতে পারে। ইঁদুর হতে পারে, রবিন বলল।
হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা। কিশোর বসেছে তার নির্দিষ্ট ডেস্কের ওপাশে। চোখ লাল। ঘুম ঘুম দৃষ্টি। ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে রাতের ধকলের স্বাক্ষর। মুসার চোখেও ক্লান্তি। শুধু স্বাভাবিক দেখাচ্ছে রবিনকে। তিনজনের মধ্যে রাতে একমাত্র তারই ভাল ঘুম হয়েছে।
লাইব্রেরি থেকে যে বই দুটো পড়তে এনেছিল রবিন সেদুটো নিয়ে এসেছে। এখানে। পাতা ওল্টাতে শুরু করল।
ভূত হলেই বা কি? বইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল সে। লিসটারের বাড়িতে নিশ্চয় অনেক দিন ধরে বাস করছে সে। হঠাৎ করে লিসটারকে নিয়ে পরপারে চলে যাওয়ার ইচ্ছে নিশ্চয় তার হয়নি। আমাদেরকে এখন বিশপেরই বই খুঁজে বের করতে হবে। আর সেটা করতে পারলেই লিসটারকেও বের করে আনতে পারব। কাজেই ভূতের ওপর জোর না দিয়ে এখন বিশপের বইয়ের ওপরই জোর দেয়া উচিত। আর সেজন্যে কমপিউটারের মেসেজের মানে বের করতে হবে আমাদের। যাই হোক, তোমাদেরকে থ করে দেয়ার মত খবর আছে আমার কাছে। মুখ তুলল। রবিন। হাসল। হাততালি দেয়ার দরকার নেই। বাহবা দেয়ার দরকার নেই। শোন, আমি সোগামোসো খুঁজে পেয়েছি।
ঘুম থেকে যেন জেগে গেল কিশোর। একেবারে সজাগ। পেয়েছ! কে?
কে নয়, কি। দক্ষিণ আমেরিকার কলাম্বিয়ার একটা ছোট শহর। মাত্র, উনচল্লিশ হাজার লোকের বাস। এখন এলেনা গিয়ে যদি বৃদ্ধা মহিলাকে জিজ্ঞেস করে সে কি চায় তাহলে হয়ত জেনে আসতে পারবে। ওই মহিলা নিশ্চয় সোগামোসোরই বাসিন্দা।
আর সেটা করতে গেলে সিয়েটার ব্যাপারে হুশিয়ার থাকতে হবে তাকে,, মুসা মনে করিয়ে দিল। কমপিউটারের মেসেজে সেকথা বলা আছে।
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল রবিন। মহিলাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। হুশিয়ার থাকতে হবে যাতে সিয়েটার কানে এসব কথা চলে না যায়।
না, মাথা নাড়ল কিশোর। সিয়েটা কলাম্বিয়ায় নেই। লিসটার কমপিউটারে মেসেজ লেখার সময় অন্তত ছিল না। লিসটার জানতেন না সিয়েটা বৈধ কিনা। আই এন এস-এর কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। আই এন এস মানে ইমিগ্রেশন অ্যাণ্ড নেচারালাইজেশন সার্ভিস। সুতরাং ধরে নিতে পারি বেআইনী ভাবে আমেরিকায় প্রবেশ করেছে সিয়েটা, তার কাছে বৈধ কাগজপত্র নেই।
বেশ, রবিন বলল। তাহলে এখানেও হুশিয়ার থাকতে হবে এলেনাকে। যতক্ষণ সোগামোসোয় রওনা না হচ্ছে ততক্ষণ সাবধান থাকতে হবে যাতে সিয়েটার সামনে না পড়ে যায়। কিংবা সামনে পড়লেও কোন কথা ফাঁস না করে দেয়। কিশোর, তোমাকে চিলেকোঠায় যে আক্রমণ করেছিল সে-ই সিয়েটা হতে পারে। তোমার ওপর হামলা চালিয়েছিল একজন মানুষ, ভূত-প্রেত নয়।
ভূত তো হতেই পারে না, কিশোর বলল। মানুষ। জীবন্ত মানুষ।
টেলিফোন বাজল।
এলেনা হয়ত ভাবছে আমরা কি করছি, মুসা আন্দাজ করল। কাল রাতে মায়ের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। বাবার ওখানে থাকতে সাহস পায়নি।
তাকে দোষ দেয়া যায় না। রিসিভার তুলে নিয়ে কানে ঠেকাল কিশোর। এলেনার ফোন নয়। আরনি ভিনসেনজো ওরফে হোয়েরটার।
টেলিফোন লাইনের সঙ্গে লাগানো লাউডস্পীকারের সুইচ অন করে দিল কিশোর, সকলের শোনার জন্যে। আপনি ফোন করলেন, অবাকই লাগছে মিস্টার ভিনসেনজো। কাল তো বেরিয়ে চলে গেলেন…