একটাই কারণ হতে পারে। এমন এক কোণে ঢুকে বসে আছে সে, যেখানে ভাল করে না তাকালে কারও চোখ পড়বে না। তার তিন ফুট দূর দিয়ে হেঁটে গেলেও না।
চোখ ডলল কিশোর। আলমারি আর কিছু উইং চেয়ারের ওপাশে একটা আলো জ্বলছে, ঘোলাটে লাল আভা ছড়িয়ে দিয়েছে শুধু। তার নিচে লেখা রয়েছে একজিট, তার মানে বেরোনোর পথ।
অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে সেদিকে এগোল কিশোর। একব্জিটের কাছে পৌঁছে আরেকটা নির্দেশ দেখতে পেলঃ ইমারজেন্সি একব্জিট ওনলি। অ্যালার্ম উইল রিং ইফ দিস ডোর ইজ ওপেনড। জরুরী অবস্থায় বেরোনোর পথ। দরজা খুললেই সতর্কীকরণ ঘন্টা বেজে উঠবে।
কল্পনায় দেখতে পেল কিশোর, ইমারজেন্সি তোর ঠেলে বাইরে বেরিয়েছে। প্রচণ্ড শব্দে বাজতে আরম্ভ করেছে অ্যালার্ম বেল। জ্বলে-নিভে সঙ্কেত দিতে শুরু করেছে বিশেষ আলো। কোন সন্দেহ নেই টিভি মনিটরের সামনে পাহারাদারও বসে রয়েছে, চোখ রাখছে সর্বত্র। পর্দায় কিশোরকে দেখামাত্র ছুটে আসছে ওরা। পিস্তল বের করে ফেলেছে। মার্কেটের সীমানা পেরোনার আগেই ধরে ফেলা হয়েছে তাকে। তার পরের ঘটনা আর মনে করতে চায় না সে।
কেঁপে উঠল কিশোর। কয়েক মাস আগে একটা ছেলেকে পাওয়া গিয়েছিল। আঙিনার ভেতরে। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে। ধরে তাকে প্রথমে ভালমত ধোলাই দিয়েছে পাহারাদাররা, যদিও সেটা আইন বিরুদ্ধ। তারপর পুলিশ ডেকে তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। জেলখাটা কিছুতেই এড়াতে পারেনি ছেলেটা। কিশোরের ক্ষেত্রে জেলটা না থাকলেও ধোলাইটা খেতেই হবে। ধরলে কিছু উত্তম মধ্যম না দিয়ে ছাড়বে না প্রহরীরা। তার ওপর রয়েছে লোকাল নিউজপেপারগুলো। ছবিসহ বড় করে ছাপবে সামনের পাতায়, হেডিং লিখবে সুপার মার্কেটে চোর। রাতের বেলা কি কারণে আসবাবের দোকানে ঢুকে লুকিয়ে বসেছিল কিশোর, কিছুতেই বোঝাতে পারবে না রিপোর্টারদেরকে।
ইমারজেন্সি একব্জিটের দিক থেকে ঘুরে দাঁড়াল সে। প্রধান প্রবেশ পথের দিকে চলল। ইস্পাতের মস্ত শাটার লাগানো রয়েছে সেখানে।
সাবধানে এগোল সে। সামান্যতম শব্দ না করে এসে খুঁজে বের করল কর্মচারীদের প্রবেশ পথটা। এই দরজাতেই সাবধান বাণী লেখা রয়েছে। জোর করে বেরোতে গেলেই অ্যালার্ম বেজে উঠবে।
দরজার পাশের একটা ঘড়িতে দেখা গেল রাত এগারোটা বাজে। বাড়িতে খবর দিতে পারেনি কিশোর। রেগে কাই হয়ে যাবেন মেরিচাচী।
খুঁজতে খুঁজতে একটা পে ফোন বের করল সে। স্লটে পয়সা ফেলে বাড়ির নম্বরে ডায়াল করল। মেরিচাচী ধরলেন। কণ্ঠ শুনেই কিশোর বুঝে ফেলল উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। সে নাম বললেই ফেটে পড়বেন এখন। তা-ই করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তুই কোথায়?
আমাদেরকে এলেনা লিসটারের প্রয়োজন, ঘুরিয়ে জবাব দিল, কিশোর। সত্যি কথাই বলল।
কি মাঝে মাঝে আমারও তোকে প্রয়োজন হয়! সেকথা কখনও ভেবেছিস? লিসটারের বাড়ি থেকে বলছিস নাকি? ওর বাপের কোন খোঁজ পাওয়া গেছে?
না। চাচী, শোন, আজ রাতেও থাকতে চাই। তোমার কোন অসুবিধে হবে না। তো?
রাতে আর কি অসুবিধে? ইয়ার্ডের কাজ তো দিনের বেলা। থাকতে চাইলে থাক। তবে সাবধানে থাকবি। বিপদ-আপদ ঘটাবি না।
লাইন কেটে দিলেন তিনি।
ফোন ছেড়ে দিয়ে আবার আসবাবের দোকানে ফিরে এল, ঘরের কোণে তার। সেই সোফায়। সোফাটাকেই এখন তার বাড়ি ভাবতে আরম্ভ করেছে। বসে পড়ল। সকাল হতে অনেক দেরি। কি করে যে রাতটা কাটবে কে জানে।
মোচড় দিয়ে উঠল পেট। খিদে জানান দিচ্ছে। একটা গল্পের কথা মনে পড়ল। একটা ছেলে ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে রাতের বেলা আটকা পড়েছিল। রেস্টুরেন্টের রেফ্রিজারেটর থেকে খাবার বের করে খেয়েছিল সে। কিন্তু বিকেলে ভেতরে কোন রেস্টুরেন্ট দেখতে পায়নি কিশোর। আছে বলেও মনে হয় না। রাখার কোন প্রয়োজন মনে করেননি লিসটার। কারণ স্টোরের বাইরেই চত্বরে অনেক খাবারের দোকান রয়েছে।
তবু, খাবার কি খুঁজবে? সুইট কাউন্টার কিংবা ছোটখাট স্ন্যাকস থাকতে পারে কোথাও।
বাতিল করে দিল ভাবনাটা। অতিরিক্ত ঝুঁকির কাজ হয়ে যাবে।
চোখ মুদল সে। আবার তন্দ্রা এসে গেল। ঢুলতে শুরু করল। স্বপ্ন দেখল। লিসটারের বাড়িতে রয়েছে আর কে যেন টোকা দিচ্ছে দরজায়। স্বপ্নের মধ্যেই বুঝতে পারল কে লোকটা, ডেভিড লিসটার। ভেতরে ঢুকতে চাইছেন। আসছি! চিৎকার করে সাড়া দিল কিশোর। যাবেন না! এখুনি আসছি!,
জোর করে যেন টেনে তুলল শরীরটাকে। আলোকিত হয়ে গেছে। লোকজন। দেখতে পেল সামনে। তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। হাসাহাসি করতে লাগল ওরা। সকালের খরিদ্দার। বিজনেস স্যুট পরনে, হাতে খবরের কাগজ। ওদেরই একজন টোকা দিচ্ছিল জানালায়।
জানালা! কাল সন্ধ্যায় যখন বসেছিল তখন তো ওটা ছিল না। এখন এল কোথা থেকে?
বুঝতে পারল অন্ধকারে অন্য জায়গায় এসে বসেছে। আগের দিন সন্ধ্যায়, শুরুতে যে সোফায় বসেছিল এটা সেটা নয়। ডিসপ্লে উইনডোতে জমায়েত হয়েছে লোকে দোকানের ভেতর তাকে ঘুমোতে দেখে। যেন এটা তাদের কাছে এক। সাংঘাতিক মজার ব্যাপার।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিলোর। যে কোন মুহূর্তে হাজির হয়ে যেতে পারে প্রহরীরা, চেপে ধরতে পারে তাকে। পুলিশ ডাকবে। তারা খবর দেবে মেরিচাচী আর রাশেদ চাচাকে।
প্রহরীদের গলা শোনা গেল। কর্মচারীদের ঢোকার দরজা খুলছে ওরা।