স্টোরের অফিসগুলো রয়েছে তিনতলায়। চিলড্রেনস ডিপার্টমেন্টের পেছনে। ডেস্কের ওপাশে বসা এক মহিলা কিশোরের দিকে তাকিয়ে হাসল। কি সাহায্য করতে পারে জিজ্ঞেস করল। তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড দিয়ে নিজের নাম বলে জিজ্ঞেস করল কিশোর মিস্টার এনথনির সঙ্গে দেখা করা যাবে কিনা।
কার্ডটার দিকে তাকাল মহিলা। গোয়েন্দা? কিছুটা অবাক হয়েই আবার কিশোরের দিকে মুখ তুলল।
মিস্টার লিসটারের নিখোঁজের ব্যাপারে কথা বলব, কিশোর বলল। গতকাল এলেনা লিসটারের এনগেজমেন্ট পার্টিতে ছিলাম। মিস্টার এনথনির সঙ্গে ওখানেই। দেখা হয়েছে।
মিস্টার লিসটার? হাসি চলে গেছে মহিলার মুখ থেকে। তিনি নিখোঁজ হয়েছেন?
মিস্টার এনথনি সব জানেন।
কিশোর আর কিছু বলতে চায় না এটা বুঝে ফোন তুলল মহিলা। এক্সটেনশনে ডায়াল করে বলল কিশোর পাশা এসেছে, মিস্টার এনথনির সঙ্গে দেখা। করতে চায়। তারপর বলল মিস্টার লিসটারের সম্পর্কে কথা বলবে।
ওপাশের কথা শুনল। রিসিভার নামিয়ে রেখে কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল, মিস্টার এনথনি খুব ব্যস্ত। আজ কথা বলতে পারবেন না।
তাই? অতীতে বহুবারই বহুজুন কিশোরের সঙ্গে দেখা করতে অসম্মতি জানিয়েছে, এটা নতুন নয় তার কাছে একটুও নিরাশ হল না। তবে একটা উপায় বের করতেই হবে দেখা করার। এবং আজই। লিটারের কমপিউটারের ফাইলের কথা হয়ত জানে না এনথনি। ওটার কথা শুনলে নরম হতেও পারে।
আমি জানি মিস্টার এনথনি ব্যস্ত মানুষ, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। কিন্তু তারপরেও আমার সঙ্গে তিনি দেখা করতে চাইবেন। তার জন্যে খবর আছে। মিস্টার লিটারের ব্যাক্তিগত ফাইলে লেখা রয়েছে তার নাম।
মোলায়েম হাসি হাসল গহিলা। বেশ, তোমার কার্ড আর মেসেজ রেখে যাও। তাকে দেব। দরকার মনে করলে ফোন করবেন।
বসকে পাহারা দেয়ার গুরু দায়িত্ব নিয়েছেন যেন মহিলা। কিছুতেই দেখা করতে দেবে না। কিশোরকে সরাতে সর পরিকর। ঘড়ি দেখল কিশোর। পাঁচটার। বেশি। আরেকটু পরেই শেষ হয়ে যাবে, অফিসের সময়। ঠিক আছে, বসি, বলল সে। তিনি বেরোলেই নাহয় কথা বলব।
অনেকক্ষণ বলতে হবে তাহলে। দোকান বন্ধ হতে নটা।
অফিস থেকে বেরিয়ে এল কিশোর। এসকেলেটর, অর্থাৎ চলমান সিঁড়ি নেমে যাচ্ছে নিচে। তাতে উঠল। হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরে যাবে? নাকি অপেক্ষা করবে এনথনির জন্যে? কাপড় আর পারফিউমের দোকানের পাশ দিয়ে নামতে নামতে এসব কথা ভাবছে সে। দোতলা থেকে একতলায়, নামল, আসবাব আর নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দোকান ওখানে।
এনথনির জন্যে অপেক্ষাই করবে ঠিক করল কিশোর। অফিস বন্ধ করার। আগে নিশ্চয় তার মেসেজ পেয়ে যাবে ম্যানেজার। ঘাবড়ে গিয়ে কথা বলতে চাইবে। আর তা যদি না করে, লোকটার ওপর চোখ রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আইলিন লিসটার আর এনথনির মাঝে কোন একটা সম্পর্ক নিশ্চয় আছে। কি, সেটা বের করতে হবে। হয়ত লিটারের কিডন্যাপিঙের সঙ্গেও এর যোগাযোগ রয়েছে।
নিচে আঙিনায় নেমে এল কিশোর। এখন সময় কাটাতে হবে, কয়েক ঘন্টা। কয়েকটা ইলেকট্রনিকের দোকানের সামনে ঘুরল। বিভিন্ন মডেলের স্টেরিও সেট আর রেকর্ড দেখল,। একটা স্ন্যাকস শপে ঢুকে চিকেন বারগার আর কোক খেল। একটা কাপড়ের দোকানে ঢুকে ব্যায়ামের জন্যে কিছু পোশাক পছন্দ করল। একটা বইয়ের দোকানে ঢুকে বই বের করে পড়তে শুরু করে দিল। দোকানদার বিরক্ত হয়ে তার দিকে তাকানো শুরু করতে করতে শেষ করে ফেলল অর্ধেকটা কাহিনী।
বার বার ঘড়ি দেখছে কিশোর। আরও এক ঘন্টার বেশি রয়েছে। একটা আসবাবের দোকানে ঢুকে চামড়ায় মোড়া একটা বড় সোফায় বসল হেলান দিয়ে। চুপ করে বসে থাকা ছাড়া আর কিছু করার নেই।
দোকানের এই কোণটা নীরব, বড় বেশি নীরব। খরিদ্দার বেশি নেই। নিঃসঙ্গ। একজন সেলসম্যান পায়চারি করছে আসবাবের সারির মাঝের লম্বা একটা ফাঁকে। তার পায়ের শব্দ ঢেকে দিচ্ছে মেঝেতে বিছানো কার্পেট। বসে থাকতে থাকতে ঘুম পেয়ে গেল কিশোরের। ঢুলতে শুরু করল। আগের রাতে লিটারের বাড়িতে ভাল ঘুম হয়নি। এখন সেটার খেসারত দিতে হচ্ছে।
চিলেকোঠায় অনুপ্রবেশকারীর কথা মাথায় ঢুকতেই তন্দ্রা টুটে গেল তার। যদিও মাথাটা ঝুলেই রইল বুকের ওপর। এই আরেকটা রহস্য। কি ঘটেছে। চিলেকোঠায়? ভূতে হাঁটাহাঁটি করেছে?
কিন্তু ভূত বিশ্বাস করে না কিশোর। র্যাপারটা অদ্ভুত হতে পারে, কিন্তু ভূত। নয়। কবর থেকে উঠে আসতে পারে না প্রেতাত্মা। গলা কেটে বললেও কিশোরকে অন্তত একথা বিশ্বাস করাতে পারবে না কেউ। ওই শব্দের অন্য ব্যাখ্যা আছে। হতে পারে সাগরের দিক থেকে জোরাল হাওয়া এসেছিল ওই সময়, কোনভাবে শব্দের সৃষ্টি করেছে। তবে এটা একটা সম্ভাবনা, অন্য কিছুও হতে পারে। এই যেমন, বড় ইঁদুর।
আবার ঢুলতে লাগল সে। হঠাৎ চমকে জেগে গেল। চোখ মেলল।
অন্ধকার। চারপাশে তাকিয়ে নানারকম আকৃতি দেখতে পেল সে। কালো কালো অদ্ভুত সব ছায়ামূর্তি যেন। চিনতে অবশ্য দেরি হল না। দোকানের আলমারি, চেয়ার, টেবিল, ওয়ারড্রোব এসব।
সতর্ক হয়ে গেল সে। দেরি করে ফেলেছে! দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। টেরই পায়নি সে কখন বন্ধ করে দিয়ে চলে গেছে সেলসম্যান।
উঠে দাঁড়াল কিলোর। কান পাতল। নিশ্চয় ঝাড়ুদার আছে বাইরে। কিন্তু বাড়ুর শব্দ কানে এল না। পাহারাদার থাকবেই। ওরা এসে তাকে জাগিয়ে দিল না কেন? সেলসম্যানই বা এভাবে দোকান বন্ধ করে দিয়ে চলে গেল কেন? তাকে জাগিয়ে বের করে দিতে পারত।