আমার ভাল্লাগছে না! বলেই ফেলল মুসা।
শুনলই না যেন এলেনা। লাইনের অন্য পাশে ডিসপ্যাচারকে ঠিকানা বলছে।
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে শুরু করল মুসা। কাঁপছে সে। গলা এত শুকিয়ে গেছে ঢোকই গিলতে পারছে না। তবু উঠছে…এক ধাপ..আরেক ধাপ…আরও এক ধাপ…
চিলেকোঠায় পায়চারি চলছেই। ভূত? নাকি ভূতের চেয়েও ভয়ঙ্কর কিছু?
রিসিভার রেখে মুসাকে অনুসরণ করল এলেনা। সে-ও ভয় পেয়েছে। মুসার কাছাকাছি থাকতে চাইছে।
যখন ছোট ছিলাম, বলল সে। আমাদের বাড়িতে একজন বাবুর্চি ছিল। মানুষকে ভয় দেখানোর ওস্তাদ। বিশেষ করে ছোটদেরকে। ছাতি থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছিল ও। ও বলেছিল এ বাড়িতে ভূত আছে।
তাড়াতাড়ি হাত নেড়ে বাধা দিল মুসা। আর বলবেন না, প্লীজ!
ওপরের হলে উঠে দাঁড়াল দুজনে। পায়চারি বন্ধ হয়ে গেছে। কান পেতে রইল আবার শব্দ শোনার অপেক্ষায়।
ওপরেও কি কেউ কান পেতে রয়েছে? চিলেকোঠার সিঁড়িতে অপেক্ষা করছে, রেলিঙে হেলান দিয়ে, নিচের দিকে তাকিয়ে? শিকার দেখলেই ঘাড়ে এসে লাফিয়ে পড়ার জন্যে ওত পেতে রয়েছে?
এখানেই থাকি, যেতে চায় না মুসা। একটা চেয়ার নিয়ে এল কমপিউটার। রুম থেকে। বসার ইঙ্গিত করল এলেনাকে।
পুলিশ এসে যদি দেখে, এলেনা বলল। কিছুই নেই, সব সময়ই যেমন থাকে না, তাহলে কি ভাববে বলতো?
পাগল।
ঠিক। আর এরকম করে বাঘ এসেছে বাঘ এসেছে যদি করতে থাকি, এক সময় আসাই বন্ধ করে দেবে ওরা। আমি ফোন করলেই হাসবে। বলবে কিপটে লিসটারের পাগলা মেয়ে ডাকছে।
কিন্তু আমার মনে হয় যতবারই ফোন করুন না কেন পুলিশকে আসতেই হবে। বলা যায় না, কখন সত্যিকারের বিপদে পড়ে যাবেন আপনি। ওই ঝুঁকি ওরা নিতে চাইবে না। এসে কিছু না দেখলে বকাঝকা করবে হয়ত, কিন্তু আসতে ওদেরকে হবেই।
পুরো এক মিনিট চুপ করে থেকে ভাবল মুসা। কিশোর এখন এখানে থাকলে কি করত? প্রমাণ খুজত, যেটা দেখিয়ে পুলিশকে বিশ্বাস করানো যায়। ভাঙা তালা…পায়ের ছাপ! হ্যাঁ, পায়ের ছাপ!
লিসটারের বাথরুমে একটা জিনিস দৈখেছিল মনে পড়ল মুসার। গতকাল ওখানে আটকে ছিল, তখন দেখেছে। বেসিনের ওপরের তাকে রাখা ট্যালকম পাউডারের একটা টিন।
দৌড়ে এসে লিসটারের ঘরে চলে এল সে। বাথরুমে ঢুকল। সুইচ টিপে আলো জেলে, দেখল টিনটা আগের জায়গাতেই রয়েছে। থাবা দিয়ে ওটা নামিয়ে নিয়ে আবার দৌড়ে ফিরে এল হলে। চিলেকোঠার দরজার কাছে মেঝেতে পাউডার ছিটিয়ে দিল।
চোখে প্রশ্ন নিয়ে তার দিকে তাকাল এলেনা।
মানুষ হলে এপথে ছাড়া বোরোতে পারবে না। বুঝিয়ে বলল মুসা, আর এদিকে এলে তাকে দেখতে পাবই। এই পাউডার মাড়িয়ে যেতে হবে। পায়ের। ছাপ রেখে যাবে। পুলিশকে দেখাতে পারব তখন। প্রমাণ।
ঠিক! ঠিক বলেছ! হাততালি দিতে গিয়েও থেমে গেল এলেনা, কিন্তু যদি পায়ের ছাপ পড়ে?
জবাব দিল না মুসা। ড্রাইভওয়েতে ইঞ্জিনের শব্দ হল। দড়াম করে বন্ধ হল গাড়ির দরজা। বাড়ির চারপাশে ঘুরে দেখতে লাগল কেউ। শব্দ হচ্ছে। দেখছে। বোধহয় ঝোপঝাড়ে, কেউ লুকিয়ে আছে কিনা।
সিঁড়িতে অর্ধেক নেমে গেছে এলেনা, এই সময় বাজল কলিং বেল। দরজা খুলে দিল সে। রকি বীচ পুলিশ ডিপার্টমেন্টের দুজন অফিসার দাঁড়িয়ে আছে। এলেনাকে বলতে শুনল মুসা, ওপরে চিলেকোঠায় আসুন।
চলুন, বলল একজন অফিসার। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে লাগল।
আরেকটা শব্দও কানে আসছে মুসার। চিলেকোঠার সিঁড়িতে, নামছে বোধহয় রহস্যময় অনুপ্রবেশকারী।
ঝট করে দরজার দিকে ফিরল সে। এখান থেকেই সিঁড়ির গোড়াটা দেখা যায়।
হঠাৎ করেই থেমে গেল চিলেকোঠার সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ হল না আর। মেইন সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসতে লাগল একজন অফিসার।
সাহস পেয়ে চিলেকোঠার দরজার কাছে উঠে এল মুসা। যেমন পাউডার তেমনি রয়েছে। কোন ছাপ পড়েনি। মানুষের চিহ্নও চোখে পড়ছে না।
ভূত! কোলা ব্যাঙের স্বর বেরোল মুসার কণ্ঠ থেকে। ভূতের বাড়ি এটা!
সব শুনে এলেনা বলল, তোমরা থাকলে থাক! আমি আর এক মুহূর্তও না! মার কাছে চলে যাচ্ছি।
.
১০.
তিন ব্লক পেছনে রয়েছে কিশোর, এই সময় সান্তা মনিকা বুলভার ধরে পুবে মোড়। নিল এনথনির গাড়ি। চার ব্লক পেছনে পড়ে গেল যখন মেফিল্ডে ঢুকল গাড়িটা। গতি কমাল। একটা মার্কেটের পার্কিং লটে নিয়ে গিয়ে ঢোকাল। ডি. এল; ডিপার্টমেন্টাল স্টোর দেখা গেল কমপ্লেক্সের পশ্চিম প্রান্তে। এই ব্রাঞ্চেই লিসটারের ম্যানেজারি করে সে। র্যাকে সাইকেল তালা দিয়ে রেখে দোকানের দিকে এগোল কিশোর।
এখন কেনাকাটার সময় লোকের। দোকানদারী ফেলে এই সময়ে ওবাড়িতে কেন গিয়েছিল এনথনি? অবাকই লাগছে তার। দুজনে মিলে ষড়যন্ত্র করছে মিস্টার লিসটারের বিরুদ্ধে? এতে কি লাভ ওদের?
ঠোঁট কামড়াল কিলোর। এনথনির সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিল। তাকে– বলবে, সে আর তার বন্ধুরা মিলে এলেনা লিসটারকে সাহায্য করছে। বিশপের– বইয়ের ব্যাপারে কিছু জানে কিনা জিজ্ঞেস করবে। সিয়েটা আর সোগামোসোর। কথাও জানতে চাইবে। এসব প্রশ্ন অবশ্য নতুন নয় এনথনির জন্যে। এলেনার মায়ের রান্নাঘরে লুকিয়ে থেকে তো সবই শুনেছে। তবু তার প্রতিক্রিয়া দেখার কৌতূহল সামলাতে পারছে না কিশোর। এমনও হতে পারে মুখ ফসকে কোন তথ্য দিয়ে ফেলতে পারে এনথনি, যেটা তদন্তের সুবিধে করে দেবে।