সোগামোসো।
মাথা নাড়লেন তিনি। সরি।
মিস্টার লিসটারকে কি কখনও বৃদ্ধা মহিলার কথা বলতে শুনেছেন? স্প্যানিশে ওটার মানে মুজের ভিয়েজা।
বলতে পারলেন না তিনি। ঈশ্বরের অশ্রুর কথাও তিনি কিছু জানেন না। দ্রুত জবাব সারছেন। কিশোর চলে গেলেই খুশি হন।
ঈশ্বরের অশ্রু বেশ কাব্য করে বলা হয়েছে, বললেন তিনি। কিন্তু ডেভিড। কবিতা নিয়ে মাথা ঘামায় না। সরি, আমি কিছুই বলতে পারব না। আইলিন লিসটারে খোঁজ নিয়েছ? অনেক সময় ওখানে জিনিস রাখে ডেভিড।
আইলিন লিসটার?
ওর ইয়টের নাম। আমার আর ডেভিডের নামে জাহাজটার নাম রেখেছে ও। ওটা কেনার সময় সম্পর্ক ভালোই ছিল আমাদের।
উঠে দাঁড়ালেন ভদ্রমহিলা। যেতে হবে এবার, সে কথা আর মুখ ফুটে বলতে হল না কিশোরকে। সে-ও উঠল। মহিলার পিছু পিছু চলে এল দরজার কাছে। তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল, যদি কিছু মনে পড়ে আপনার, আমাদের তদন্তে সাহায্য হবে ভাবেন, তাহলে দয়া করে এই নাম্বারে ফোন করবেন।
করবেন, বললেন তিনি। বেরিয়ে এল কিশোর।
মোড়ের কাছে এসে থামতে হল তাকে। একটা বাসকে সরে যাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্যে। পেছন ফিরে তাকাল একবার, এলেনার মায়ের বাড়ির দিকে।
গাঁট্টাগোট্টা একজন লোক বেরিয়ে আসছে পায়েচলা পথ ধরে বড় রাস্তার দিকে। লোকটাকে আগে দেখেছে কিশোর। লিসটারের বাড়িতে। এলেনার পার্টির একজন মেহমান ছিল ওই লোক।
এনথনি! বিড়বিড় করল বিস্মিত কিশোর।
লিসটারকে সরিয়ে দেয়ার যথেষ্ট মোটিভ রয়েছে লোকটার। ও বাড়িতে কি করছে সে? কিশোর যখন মহিলার সঙ্গে কথা বলছিল তখন নিশ্চয় সে বাড়িতে ছিল ও। দুজনের কথা নিশ্চয় শুনেছে। কল্পনায় দেখতে পেল কিশোর, রান্নাঘরে ঝুঁকে রয়েছে লোকটা, দরজায় কান পেতে।
এ কারণেই উত্তেজিত হয়ে ছিলেন ভদ্রমহিলা। বার বার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছিলেন। তাড়াহুড়া করে বের করে দিতে চেয়েছিলেন কিশোরকে। বাইরে যাওয়ার কথা নয় তার। ঘরে লোক রেখে বাইরে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
ব্যাপারটা কি? এলেনার মা আর এনথনি মিলে ষড়যন্ত্র করেছে? মহিলার চেহারা দেখে মনেই হয় না এরকম একটা অপরাধ করতে পারেন। তবে বলা যায় না কিছুই। অপরাধ জগৎ এমনই একটা জগৎ, যেখানে যা খুশি ঘটতে পারে। চেহারা কোন ব্যাপার নয়। যেটা অসম্ভব বলে মনে হয়, সেটাই ঘটে যেতে পারে।
রাস্তা পেরোল এনথনি। কিছুদূরে পার্ক করে রাখা একটা গাড়িতে গিয়ে উঠল। জ্বলে উঠল ব্রেক লাইট। একজস্ট পাইপ থেকে এক ঝলক ধোয়া বেরোল। চলতে শুরু করল গাড়িটা।
সাইকেল ঘোরাল কিশোর। পিছু নিল গাড়িটার। দুশো গজ পেছনে থেকে অনুসরণ করে চলল। পায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে প্যাডাল করছে, যতোটা জোরে সম্ভব ঘোরাতে চাইছে চাকা।
.
০৯.
যে সময় আসবে আশা করেছিল তার চেয়ে অনেক পরে লাইব্রেরিতে আসতে পারল রবিন। কোনখান থেকে খোঁজা শুরু করবে?–ঢুকেই ভাবল। টেলিফোন ডিরেক্টরির কথা প্রথমেই বাদ দিয়ে দিল। লাভ হবে না। তবু একবার চোখ বোলাতে অসুবিধে কি?
লাইব্রেরিয়ানের সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করে এল প্রথমে। তারপর ডিরেক্টরিটা দেখতে বসল। লস অ্যাঞ্জেলেস টেলিফোন বুকে সিয়েটার অভাব নেই। তবে একটা সোগামোসোও চোখে পড়ল না।
লিসটারের কমপিউটারে করা মেসেজের প্রিন্ট আউটটা বের করে টেবিলে বিছাল সে। শব্দগুলো যেন ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। সোগামোসোকে দিয়ে শুরু কর…
কি করব? ভাবছে রবিন। মেসেজটায় সাঙ্কেতিক কথা রয়েছে। মানে বের করতে হলে আগে সিয়েটা আর সোগামোসাকে খুঁজে বের করতে হবে। শেষ শব্দ ইনস, আই এন এস। ইনিশিয়ালের সংক্ষেপও হতে পারে ওটা, কিংবা ইমিগ্রেশন অ্যাণ্ড নেচারালাইজেশন সার্ভিসের আদ্যাক্ষর। সিয়েটা হয়ত একজন ইলিগাল লোক এদেশে, অবৈধ ভাবে প্রবেশ করেছে। জানতে পারলে খুব সুবিধে হবে কি? সিয়েটার খোঁজ পেলে তাকে আই এন এস-এর হাতে ধরিয়ে দেয়ার কথা বলেননি তো এলেনাকে লিসটার? দূর! কিছু বোঝা না গেলে রাগই লাগে।
আর এরকম একটা নোটই বা কেন কমপিউটারের মেমোরিতে রেখে গেলেন। লিসটার? কমপিউটারে আগ্রহ নেই এলেনার। মেসেজটা যে দেখবেই এরকম কোন নিশ্চয়তা ছিল না।
হতে পারে, এর চেয়ে ভাল আর কোন উপায় বের করতে পারেননি লিসটার, তাড়াহুড়ায়। হয়ত হঠাৎ করেই আবিষ্কার করেছেন বিপদে পড়তে চলেছেন তিনি। যে লোকটা তাঁর হুমকির কারণ, কমপিউটার সম্পর্কে তার জ্ঞান না থাকলে নিরাপদে থাকবে মেসেজটা। কিন্তু এলেনাও যদি কিছু বুঝতে না পারে, ওই মেসেজ কোন উপকার করবে না তার।
রেফারেন্সের বই রাখা হয় যেসব তাকে সেখানে এসে দাঁড়াল রবিন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর অনেক ডিরেক্টরি রয়েছে এখানে। ডেভিড লিসটার ব্যবসায়ী। তার ব্যবসার সঙ্গে যোগামোসোর কোন সম্পর্ক থাকতে পারে। বড় একটা বইতে আমেরিকান কোম্পানিগুলোর তালিকা রয়েছে। নাম রাখা হয়েছে, স্ট্যাণ্ডার্ড অ্যাণ্ড পুয়োরস। সেটাতে সোগামোসো খুঁজল সে। পেল না। তারপর খুঁজল দা ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল এবং ফোর্বস ম্যাগাজিনে। সোগামোসোর চিহ্নও নেই। হজ হু-এর। যতগুলো সংস্করণ পেল, সবগুলোতে দেখল, কোনটাতেই পাওয়া গেল না ওই নাম।
বিখ্যাত লোক নয় সোগামোসো, বোঝা গেল। ব্যবসায় জড়িত নয়। পুরোপুরি অন্য কিছু। স্প্যানিশ কোন শব্দ নয় তো? স্প্যানিশ শব্দ ব্যবহার করেছেন লিসটার। স্প্যানিশ টু ইংলিশ ডিকশনারিটা নামিয়ে আনল সে। পেল না। ওটাতেও। বোকা হয়ে গেল। রেফারেন্স সেকশনের সব চেয়ে নিচের তাকটায় রয়েছে ম্যাপ। বড় একটা বই এনে ফেলল টেবিলে। অবশেষে দেখা মিলল সোগামোসোর।