ফোন করে জিজ্ঞেস করবেন? মুসা জানতে চাইল।
ইয়ে…তাতেও সমস্যা আছে। আম্মা রেগে আছে আমার ওপর। এখানে। আসাটা একদম পছন্দ নয় তার। আমার হবু বরকেও দেখতে পারে না।…যাই হোক, চেষ্টা করে দেখি।
রিসিভার তুলে নিয়ে ডায়াল করল এলেনা। ওপাশের কথা শুনে কানের কাছ থেকে সরিয়ে এনে বলল, ঘরে নেই। জবাব দিচ্ছে অ্যানসারিং মেশিন। রিসিভারে কিচকিচ শুনে তাড়াতাড়ি আবার কানে ঠেকাল সে। কে? আম্মা? কোথায় গিয়েছিলে? আমি। আম্মা, শান, আব্বাকে মনে হয় কিডন্যাপ করা হয়েছে। তিনটে ছেলে আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে। ওরা তিন গোয়েন্দা, কিশোর পাশা, মুসা আমান আর রবিন মিলফোর্ড। তোমার সঙ্গে দেখা করতে চায়। কথা বলবে?…আচ্ছা।…কিছু জানা থাকলে ওদেরকে বলে দিও। আমি চলে আসতাম তোমার কাছে, কিন্তু আব্বা বাড়িতে নেই। খালি ফেলে যেতেও পারছি না। আব্বার ব্যাপারটা ফয়সালা হলেই চলে আসব।
মাকে গুড বাই জানিয়ে রিসিভার নামিয়ে রাখল এলেনা। যেতে পার। আমার আম্মা খুব ভাল। সবাইকেই সাধ্যমত সাহায্য করে।
যতগুলো প্রিন্ট আউট বের করেছে, সব একখানে করল কিশোর। মায়ের ঠিকানা লিখে দিল এলেনা। সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর ঠিক হল, মুসা থাকবে এ বাড়িতে। বাকি দিনটা। রাতটাও। মিসেস বেকার রাতে থাকে না, বাড়ি চলে যায়। তার স্বামী আছে। রবিন বাড়িতে যাবে, কিছু জরুরী কাজ আছে। সেখান থেকে মিউজিকের অফিসে গিয়ে টু মেরে দেখে আসবে একবার কি পরিস্থিতি। রকি বীচ লাইব্রেরিতে যাবে। অনেক দিন যায় না ওখানে। অথচ কত বছর কাজ করেছে। সময় পেয়েছে যখন লাইব্রেরিয়ানের সঙ্গে দেখা করে আসবে। আরও মা একটা কারণ আছে লাইব্রেরিতে যাওয়ার। রেফারেন্স বইতে সোগামোসো খুজবে।
সিয়েটার রেফারেন্স খোঁজার বোধহয় কোন প্রয়োজন নেই, কিশোরকে বলল সে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ফোন বুকে ওই নামের অভাব নেই। তবে সোগামোসোটা সাধারণ নাম নয়। এই রহস্য ভেদের শুরু এটা দিয়েও হতে পারে।
কোন লোকের নাম না-ও হতে পারে এটা, কিশোর বলল। কোন জায়গা। কিংবা কোম্পানির নাম হলে অবাক হব না।
কিশোর যাবে এলেনার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। এলেনা আর বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হল সে। সাইকেল নিয়ে চলল সান্তা মনিকায়। এই আরেকবার আফসোস হতে লাগল একটা গাড়ি নেই বলে। ভাল জিনিস ছাড়া তার মন ভরে না। আর ভাল কিনতে হলে নতুন দরকার। এত টাকা নেই। পুরনো ভাল জিনিস কে খুঁজে দেবে? মুসা তো কথা কানেই তোলে না। নিকভাইটারও দেখা নেই…
নির্জন একটা রাস্তার ধারে ভদ্রমহিলার বাড়ি। একতলা। লিসটারের বাড়ির ঠিক উল্টো। নতুন রং করা। ঝকঝকে তকতকে। সুন্দর বাগান। সবুজ লন। পায়ে চলা যে পথটা চলে গেছে বাড়ির দরজায়, সেটাতে একটা কুটোও, পড়ে নেই। দিনে অনেকবার করে ঝাট দেয়া হয়, বোঝা যায়।
ঘন্টা বাজাতেই খুলে দিলেন, এলেনার মা। সুন্দর চেহারা। কফি রঙের চুল। একই রঙের চোখ। মোটাই বলতে হবে তাকে। তবে চামড়া বেশ মসৃণ, কোথাও একটা ভাজ নেই। ডেভিড লিসটারের চেয়ে বয়স অনেক কম।
তুমি নিশ্চয় তিন গোয়েন্দার একজন, বললেন তিনি। বেরোতে হবে। বেশি। সময় দিতে পারব না, তোমাকে। এসো।
হলঘরের ভেতর দিয়ে কিশোরকে লিভিং রুমে নিয়ে এলেন মহিলা। নরম সবুজ কার্পেট। সোফা আর অন্যান্য আসবাবপত্রের কভার শাদা মখমলের তৈরি।
ফায়ারপ্লেসের কাছে বড় একটা চেয়ারে বসলেন ভদ্রমহিলা। কিশোর বসল। সোফায়। এলেনা ভাল আছে? জিজ্ঞেস করলেন তিনি। সত্যি বল তো, ও আসছে না কেন?
ফোন করে খবর জানতে চাইতে পারে কিডন্যাপার, জবাব দিল কিশোর। সে জন্যে রয়ে গেছে।
আমারও ওখানে যাওয়া উচিত, কিন্তু ভাল লাগে না। ওই বাড়িটাকে দেখলেই রাগ হয় আমার, ঘৃণা করি। ওখানে ঢোকার পর থেকে অশান্তি শুরু হল। আমাদের। তার আগে ভালই ছিলাম।…এলেনা কি একা রয়েছে?
না। আমার বন্ধু মুসা রয়েছে তার সঙ্গে।
তোমার বন্ধু? নিশ্চয় তোমারই বয়েসী। পুলিশ কোথায়? এরকম। পরিস্থিতিতে ওদেরকে দরকার। একটা ছেলে আর কতটা সাহায্য করতে পারবে। এলেনাকে।
বয়েস অল্প, কিন্তু কোন বয়স্ক লোকের চেয়ে কম নয় মুসা। কারাত জানে। গুলি চালাতে পারে। দুচারজনকে খালি হাতেই পিটিয়ে তক্তা করে দিতে পারে। পুলিশকে খবর দিতে মানা করেছে কিডন্যাপার। হুঁশিয়ার করে দিয়েছে তাহলে মিস্টার লিসটারের ক্ষতি করবে। বিশপের বইটা দিলেই তাকে ছেড়ে দেবে। বলেছে।
বিশপের বই? সামনে ঝুঁকলেন ভদ্রমহিলা। কিশোরের মনে হল অন্যমনস্ক হয়ে গেছেন তিনি। যেন কোন শব্দ শুনে কান খাড়া করেছেন। অপেক্ষা করছেন আবার শোনার আশায়।
কিশোরও কান পাতল। কিছুই শুনল না। বাড়িটা বেশি নীরব।
বিশপের বই সম্পর্কে কিছু জানেন আপনি?
মাথা নাড়লেন ভদ্র মহিলা। না। কিছুই জানি না। আজকাল ডেভিড কি করছে না করছে কোন খোঁজই রাখি না আমি। এ জন্যেই কি দেখা করতে এসেছ? বইয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিতে? হাজার হাজার বই আছে ডেভিডের। ওগুলো দেখেছ?
দেখেছি। কিডন্যাপার যেটা খুঁজছে সেটা পাইনি। আপনি সিয়েটা নামে কাউকে চেনেন? আর সোগামোসো?
সোগা-কি?
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর।
আমি খুব একটা সাহায্য করতে পারছি না, তাই না? বললেন ভদ্রমহিলা। সরি। জানলে অবশ্যই বলতাম। আবার বল তো নামটা। সিয়েটা বাদে আরেকটার কথা যেটা বললে?