শুরুতে এনথনির ওপরও রুটিন চেক করা হয়েছে। বিয়ে করেছিল, স্ত্রী মারা গেছে। ছেলেমেয়ে নেই। সার্চন্ট এলাকার একটা বাড়িতে বাস করে। ডি. এল. ডিপার্টমেন্ট স্টোরের ম্যানেজারের পদটা নেয়ার আগে অন্য মালিকের আরেকটা স্টোরের ডিরেক্টর অভ অপারেশনের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে। লিসটারের স্টোরটা সান্তা মনিকায়।
খানিক পরেই এনথনির ডোসিয়ার আর সাধারণ রুটিন চেকের আওতায় থাকল না। আরও গভীরে ঢুকতে লাগল। একবার গ্রেফতার হয়েছে। একটা বীমা কোম্পানিতে জালিয়াতির অভিযোগে। একটা বাড়ির মালিক ছিল সে। আগুন লেগে পুড়ে যাওয়ার পর বীমা কোম্পানি সন্দেহ করে বসল এতে এনথনির হাত রয়েছে। অ্যারেস্ট করা হলেও পরে তাকে সসম্মানে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ, কারণ কোম্পানি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। তারপর। প্রথম স্টোরটায় চাকরি নিল এনথনি। সেখানেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ। আছে। সরাসরি কেউ কিছু বলেনি। তবে কানাঘুষা হয়েছে, কন্ট্রাকটর আর। সাপ্লাইয়ারদের কাছ থেকে ঘুষ নিত সে।
ফাইলের শেষে দুটো শব্দে, খুব বাজে একটা মন্তব্য পেশ করা হয়েছেঃ উইমেন-চেজার। অর্থাৎ মহিলাদের পেছনে লাগার বদস্বভাব আছে।
লিটারের উকিল ডোপের ডোসিয়ারও কম মজার নয়। ডোপ ছিল একজন। জুয়াড়ি। রেসের খেলা আর পোকারে আসক্ত। স্টক মার্কেটেও বেশ বড় বড় ঝুঁকি নিয়েছে। লিসটারের সন্দেহ জরুরী কাজে খরচের জন্যে যে ফাণ্ড রাখা আছে তার কাছে সেটা থেকে সে নিজের প্রয়োজনে খরচ করে। বার অ্যাসোসিয়েশনে। যোগাযোগ করে তার অ্যাকাউন্ট চেক করানোরও হুমকি দিয়েছেন তিনি। এক হুমকিতেই কাজ হয়ে গেছে বলে লিটারের ধারণা।
ভিজালিয়া ব্যাংকের ম্যানেজারের ফাইল বলছে, ডোপ নেভিতে ছিল আগে। সেখান থেকে বের করে দেয়া হয়েছে তাকে, কি একটা অপরাধ করেছিল বলে। লিসটার যে একথা জেনেছেন, সেটা আবার জানিয়ে দিয়েছেন ম্যানেজারকে।
ফাইলের পর ফাইল দেখে চলল কিশোর। একের পর এক মজার তথ্য উঠে আসছে মনিটরের পর্দায়। মিসেস বেকারেরও একটা বড় রকমের দোষ রয়েছে। প্রতি হপ্তায়ই একটা বিশেষ জায়গায় জুয়া খেলতে যায়। নেশা হয়ে গেছে সেটা।
এসব দেখে কোন লাভ হবে না আমাদের, এলেনা বলল অবশেষে। এখানে। এমন একদল লোকের ডোসিয়ার যারা আব্বাকে দুচোখে দেখতে পারে না। ঘৃণা করে। তার কোন বন্ধু নেই। ভাবতেই খারাপ লাগছে আমার। লোকের ব্যক্তিগত জীবন ঘাটাঘাটি করেছে, এটাও ভাল্লাগছে না আমার।
কেঁদে ফেলবে যেন সে। এই একটি বার বাবার পক্ষে সাফাই গাইছে না।
কিশোরকেও স্বীকার করতে হল, এই সব গোপন ফাইল আসল কাজের কোন সাহায্য করছে না। প্রত্যেকেরই মোটিভ রয়েছে লিসটারের ক্ষতি করার। কিন্তু কোন একজন বিশেষ মানুষ বেরিয়ে আসছে না যাকে সন্দেহ করা যায়। সবাইকেই করা যায়, আবার কাউকেই করা যায় না।
আর একটা ফাইল আছে, বলল সে। এটাও দেখার দরকার। ফাইলটার। নাম মুজের/ভিয়েজা। স্প্যানিশ এই শব্দের মানে বৃদ্ধা মহিলা।
বাহ, ভাল কথা, মুসা বলল। হয়ত মিসেস বেকারের সম্পর্কে আরও কিছু লেখা রয়েছে। তার দুর্বলতা যাতে প্রকাশ না হয় সে জন্যে মিস্টার লিসটারকে গায়েব করে দিয়েছে।
কিন্তু আবার ফেরত দেবেও বলেছে, মনে করিয়ে দিল রবিন। বিশপের বইটা দিলে। প্রতিশোধ বলতে পার। দুর্বলতা ঢাকা দেয়ার জন্যে কিডন্যাপটা করেনি।
ওদের কথা শুনছে না কিশোর। আনমনেই বলল, মিসেস বেকারের ফাইল স্প্যানিশে লেখা থাকবে কেন? চাবি টিপে ফাইলটা কল করল সে।
অন্য ফাইলের চেয়ে এটা আলাদা। একটা চিঠি। এলেনাকে লেখাঃ
সোগামোসোকে দিয়ে শুরু কর। বৃদ্ধা মহিলার কাছে যাও। মধ্যগ্রীষ্মের দিনে সূর্যাস্তের সময় তার ছায়া স্পর্শ করে ঈশ্বরের অশ্রুকে। সব তোমার জন্যে। তবে সিয়েটার ব্যাপারে সাবধান থেক। সে কি লিগাল? চেক ইনস।
চমৎকার, এতক্ষণে খুশি হল কিশোর। চিঠিটার একটা প্রিন্ট আউট বের করে দিতে নির্দেশ দিল কমপিউটারকে। কাগজের ওপর ছোটাছুটি শুরু করল প্রিন্ট হেড। এই সুযোগে এলেনার দিকে তাকাল সে। চোখে জিজ্ঞাসা।
মাথা নাড়ল এলেনা।
কিছুই বুঝতে পারছেন না? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
একটা বর্ণও না।
সিয়েটার ব্যাপারে সাবধান থাকতে বলা হয়েছে। বলেই সরাসরি এলেনার চোখের দিকে তাকাল কিশোর। তাকে চেনেন?
শ্রাগ করল এলেনা। আব্বার আরেক ফেরেশতা হবে হয়ত। কর্মচারী। ব্যবসার সহযোগীও হতে পারে। পার্টিতে কোন সিয়েটাকে আসতে দেখিনি। মারাত্মক কিছু শত্রুকে মনে হচ্ছে দাওয়াত থেকে বাদই দিয়েছিল আব্বা।
কাঁদতে শুরু করল এলেনা। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল পানি। মোছার চেষ্টা করল না সে।
ঠিক আছে, কিশোর বলল। আর কোথাও কোন সূত্র আছে কিনা দেখা দরকার।
টেবিলের ড্রয়ার ঘাটতে শুরু করল সে। রবিনও তাকে সাহায্য করল। একটা ছোট নোটবুক পেয়ে তুলে, দেখাল। অ্যাড্রেস বুক। অনেক ঠিকানা আছে। হাতে লেখা।
প্রতিটি পৃষ্ঠার প্রতিটা ঠিকানা খুঁটিয়ে দেখা হল, কিন্তু কোন সিয়েটাকে পাওয়া গেল না।
আম্মা হয়ত জানতে পারে, এলেনা বলল। সামলে নিয়েছে। ইদানীং আর আব্বার সঙ্গে দেখা হয় না তার, কথাও হয় না। তবে অনেক পুরনো কেউ হতে পারে, একসাথে যখন ছিল দুজনে তখনকার কোন সিয়েটা থাকতেও পারে।