নানা রকম খেলা চালিয়ে যান, রবিন পরামর্শ দিল। ফুটবল দিয়ে শুরু করুন।
ফুটবল দিয়ে লাভ হল না। বেজবল, বাস্কেট বল, হকি, কোনটা দিয়েই নয়।
খেলাধুলায় বিশেষ আগ্রহ ছিল না আব্বার, এলেনা বলল। অন্য কিছু দিয়ে। চেষ্টা করা যাক।
একচেটিয়া ব্যবসা করার খুব আগ্রহ, হোয়েরটা বলল। মনোপলি লিখে দেখা যাক।
তাতেও সুবিধে হল না।
পোকার লিখে দেখুন তো, মুসা বলল।
একে একে পোকার, জিন রামি, পিনোকল, ব্ল্যাকজ্যাক, সব কিছু দিয়েই দেখা হল। নিরাশ করল কমপিউটার।
তাসের নাম দেয়া শুরু করি, বলে এস লিখল হোয়েরটা। তারপর কিং। সেই একই অবস্থা। কোন মেসেজ দিতে পারল না যন্ত্র। কিন্তু যেই জোকার লেখা হল, অন্য মেসেজ দেখা দিল স্ক্রীনে। আসুন, আমরা খেলা করি! আমন্ত্রণ জানাল, কমপিউটার।
খাইছে! বলে উঠল মুসা।
কমপিউটারকে একটা নির্দেশ দিল হোয়েরটা।
নামের একটা লম্বা তালিকা ফুটে উঠল মনিটরে। ডোপের ওপর একটা ফাইল খুলেছেন লিসটার। এনথনির নামেও আছে একটা। ভিজালিয়া ব্যাংকের ম্যানেজার। আর বড় বড় অফিসারদের নাম চিনতে পারল হোয়েরটা। আরও অনেক নাম, এমনকি হাউসকীপার মিসেস বেকারের নামও রয়েছে ফাইলে।
আরেকটা ফাইল দেখা গেল কডি হোয়েরটার নামে।
আপনাকেও বাদ দেননি, মুচকি হাসল রবিন।
আড়চোখে সেক্রেটারির দিকে তাকিয়ে কিশোর দেখতে পেল হোয়েরটার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। এলেনারও নজর এড়াল না সেটা। আপনার ফাইলে কি আছে?
সাধারণত যা থাকে, কোনমতে বলল হোয়েরটা। বয়েস, শিক্ষা, এসব।
দেখি তো, খসখসে হয়ে গেছে এলেনার কণ্ঠ।
এলেনা, আমার ফাইল দেখে….
আমি দেখব!
শ্রাগ করল হোয়েরটা। একটা চাবি টিপল। লিস্টে তার নামের কাছে চলে এল কারসরটা। আরেকটা চাবি টিপল সে। মিলিয়ে গেল নামের তালিকা। পর্দায় ফুটল কডি হোয়েরটা। তার পরে দেখা দিলঃ আসল নাম আরনি ভিনসেনজো। বাবার নাম কার্লো ভিনসেনজো। আমাকে কিছু করার তালে আছে মনে হয়। আরও কিছুদিন কাছাকাছি রাখব। কর্মঠ লোক। আমার ভয়ে যখন কাপে, দরদর করে ঘামে, দেখতে খুব ভাল লাগে আমার।
লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল হোয়েরটা। কমপিউটারের দিকে পেছন করে দাঁড়িয়ে বলল, আমি যাচ্ছি! আর কখনও ফিরব না!
.
০৮.
সর্বনাশ! গলার কাছে হাত নিয়ে গেল এলেনা। কার্লো ভিনসেনজোর ছেলে কডি! সে-ই! কিডন্যাপ সে-ই করেছে।
একটা ভুরু উঁচু করল কিশোর। সহায়তা করে থাকতে পারে। তবে সে নিজে কিডন্যাপটা করেনি। সারাক্ষণ পার্টিতে ছিল, মনে আছে? আর সহায়তাইবা করবে কেন? কার্লো ভিনসেনজোই বা কে?
একজন লোক…ওয়েস্ট লস অ্যাঞ্জেলেসের একজন টায়ার ব্যবসায়ী। যে জায়গাটায় তার দোকান সে জায়গাটা আব্বার খুব পছন্দ। অফিসের জন্যে একটা। বহুতল বাড়ি বানাতে চায় ওখানে। অনেক টাকার অফার দিয়েছে আব্বা, বিক্রি করতে রাজি হয়নি ভিনসেনজো। তখন তার দোকানের পাশে আরেকটা টায়ারের দোকান দিয়েছে আব্বা। শস্তায় ভাল জিনিস বিক্রি করছে। তাতে তার লস হলেও কেয়ার করছে না। আসলে ভিনসেনজোর ব্যবসা খারাপ করে দিয়ে তাকে ওখান থেকে তোলার জন্যেই একাজ করেছে আব্বা। টিকে থাকার চেষ্টা করেছে। ভিনসেনজো। কম দামে টায়ার দেয়ার চেষ্টা করেছে। আব্বার সঙ্গে পারেনি, লস দেয়ার মত এত টাকা তার নেই। ছয় মাসের মধ্যেই কাবু হয়ে গেছে বেচারা।
কাজেই তার ছেলে ছদ্ম নামে চাকরি নিয়েছে এখানে, এলেনার কথার খেই ধরল রবিন। আপনার আব্বার ক্ষতি করার জন্যে। কিন্তু তার আগেই আপনার আব্বা জেনে গেছেন হোয়েরটার আসল পরিচয়। হোয়েরটা কি করে ভাবতে পারল। যে লোক অন্যের ব্যাপারে খোঁজ নেয়ার জন্যে গোয়েন্দা লাগান, তার বিরুদ্ধে সে। কিছু করতে পারবে?
হয়ত ভেবেছে তার কভার স্টোরি এত ভাল যে গোয়েন্দাকে বোকা বানিয়ে দিতে পারবে, কিশোর বলল। কীবোর্ডের সামনে বসে পড়ল। কডি হোয়েরটার ফাইলের ফুল প্রিন্ট দেয়ার জন্যে নির্দেশ দিল কমপিউটারকে। জীবন্ত হয়ে উঠল প্রিন্টার। কটকট কটকট করে আধ মিনিটের মধ্যেই বের করে দিল হোয়েরটার ফাইল। বের করে নিয়ে জোরে জোরে পড়ল কিশোর, সবাইকে শোনানোর জন্যে।
চাকরির দরখাস্তে যে ঠিকানা আর ফোন নম্বর ব্যবহার করেছে হোয়েরটা, সেটা তার হাই স্কুলের এক বন্ধুর। রুটিন চেক করে কিছু পাওয়া যায়নি। তারপর গোয়েন্দা লাগিয়েছেন লিসটার। জেনেছেন, কাজের শেষে ওশন পার্কে ভিনসেনজোর বাড়িতে রোজ যায় হোয়েরটা। প্রতিবেশীদের কাছে খোঁজ নিয়েছে গোয়েন্দা। বীমার দালাল পরিচয় দিয়ে। সত্যি কথাগুলো জেনে এসেছে।
হ্যাঁ, মাথা দোলাল রবিন। কিডন্যাপের একটা মোটিভ দেখা যাচ্ছে। লোকটাকে দেখে কিন্তু মনে হয় না এতবড় একটা অপরাধ করতে পারে।
তা অবশ্য হয় না, একমত হল এলেনা। আর এই বিশপের বই…এটার মাখামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। কডি হোয়েরটা:নাহ, আমার ভাল লাগছে না!
বড় কমপিউটারের সামনে বসে পড়ল সে। চোখ বন্ধ করে কপাল টিপে ধরল। কডি একাজ করেছে একথা বিশ্বাসই করতে পারছি না। করেওনি। তাহলে। এই কমপিউটারটা নষ্ট করে দিতই, যাতে তার নাম না জানতে পারি। নাহ, সে করেনি। অন্য কারও কাজ।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ও-কে। আরও কিছু ফাইল দেখা যাক। মিরহাম এনথনির ফাইলটার জন্যে নির্দেশ দিল কমপিউটারকে।