রবিনের দিকে ঘুরল কিশোর। রিসিভারে হাত চাপা দিয়ে হোয়েরটা কি। বলেছে বলল। জিজ্ঞেস করল, যাবে নাকি?
যাব।
হাত সরিয়ে নিয়ে হোয়েরটাকে বলল কিশোর, আমরা আসছি।
বাইরে বেরিয়েই মুসাকে দেখতে পেল ওরা। সাইকেল স্ট্যাণ্ডে তুলছে সহকারী গোয়েন্দা। লিসটারের বাড়িতে যাবে কিনা জিজ্ঞেস করল তাকে কিশোর। বলল, এলেনা আমাদের সহ্য করে নিয়েছে।
আমি তাকে পারব কিনা জানি না, মুসা বলল। বাপের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।
কিন্তু রবিন আর কিশোর যখন রওনা হল ঠিকই ওদের সঙ্গে চলল সে।
কয়েক মিনিট পরেই লিসটারের বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়াল তিন গোয়েন্দা। বেল। বাজাল। মিসেস বেকার খুলে দিল দরজা। এক হাতে একটা স্প্রে, উইনডো। ক্লীনার, আরেক হাতে একমুঠো পেপার টাওয়েল, জানালা পরিষ্কার করছিল বোধহয়। খুশি খুশি গলায় বলল, এদ্দিন পরে সুযোগ পেলাম। সব ময়লা এবার ঝেটিয়ে বিদেয় করব। বুড়োটার জ্বালায় পারতাম না। ছুতেই দিত না কোন কিছু। তোমরা যাও। এলেনা আর কডি কমপিউটার রুমে অপেক্ষা করছে।
ঘুরে সিঁড়ির দিকে রওনা হল মিসেস বেকার। তার পেছনে চলল তিন গোয়েন্দা। সিঁড়ির মাথায় উঠে ইশারায় কমপিউটার রুমের দিকে যেতে বলে নিজে গিয়ে ঢুকল একটা শোবার ঘরে।
দুটো কমপিউটারের মধ্যে যেটা ছোট, সেটার সামনে বসে রয়েছে হোয়েরটা। চাবি টিপছে। প্রতিটি চাপের পর পরই টিইট টিইট শব্দ করছে কমপিউটার।
তার পেছনে দাঁড়িয়ে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে এলেনা।
এটা আব্বার ব্যক্তিগত কমপিউটার, ছেলেদেরকে জানাল, সে। আব্বার অফিসে যে কমপিউটার সিসটেম রয়েছে তারই একটা অংশ এই বড়টা। তবে ছোটটা একেবারে আলাদা। এটার সঙ্গে কোনটার যোগাযোগ নেই। মডেম নেই, কাজেই বাইরের কেউ ঢুকতে পারবে না এটাতে। সংকেতটা বের করতে পারলেই তার ফাইলগুলো দেখতে পারব। এমনও হতে পারে, বিশপের বই আসলে বইই। নয়, অন্য কোন কিছুর সংকেত। কোড নেম।
মাথা নাড়ল হোয়েরটা। বুই না ছাই। আসলে মিস্টার লিসটারের ওপর ভীষণ রাগ আছে কারও। শোধ তুলছে। তিনি নিখোঁজ হলে অনেকেরই সুবিধে হয়, অনেকেই খুশি হবে। কি জানি কি করেছেন। মাথায় ছিট আছে তো। হয়ত নিজেই বেরিয়ে চলে গেছেন।
উনি তোমার বস! কঠিন কণ্ঠে বলল এলেনা। ভদ্রভাবে কথা বল!
সরি, কীবোর্ডের দিকে ফিরল হোয়েরটা। কর্মচারীদের ব্যাপারে তথ্য জোগাড় করেন তিনি, তিন গোয়েন্দাকে বলল সে। তাদের অতীত জীবন, ব্যক্তিগত জীবন, সব। যেহেতু আমি তার সেক্রেটারি, তাই জানি। এসব জানতে হলে গোয়েন্দা লাগাতে হয়। প্রাইভেট ইনভেসটিগেটর। তাদের বিলগুলো আমাকেই করতে হয়। তবে রিপোর্ট আমাকে দেখতে দেয়া হয় না। সেটা শুধু মিস্টার লিসটারই দেখেন। আমার বিশ্বাস কিছু কিছু কর্মচারীর অতীত এত বেশি গোলমেলে, অফিসের ফাইলে সেগুলো রাখা যায় না। তাই ব্যক্তিগত কমপিউটারে ঢুকিয়ে রেখেছেন তিনি। কিন্তু বিশপের বই? কোন বিশপের সঙ্গে তাঁর আলাপ নেই।
কোড নেম, আবার বলল এলেনা। কোড নেম হতে পারে।
পাসওয়ার্ড নয়, এটা জেনে গেছি, হোয়েরটা বলল। দেখলামই তো টেস্ট করে।
মিনিট খানেক চুপ করে থেকে ভাবল সে। তারপর টাইপ করে লিখল হাসলার
পি এইচ ইউ এস টি এল ই আর, পড়ল মুসা। মানে কি?
হাসলার কি জান না?
আভিধানিক অর্থ জানি। তিনটে মানে হয়। কর্মতৎপর ব্যক্তি, যে লোক তাড়াহুড়ো করে কাজ করে এবং প্রতারক। কোনটা বোঝাতে চাইছেন?
=ভেঙে বলি। ধর ফুটবল খেলতে নামল কোন লোক। তাকে ভালমত চেনে না। অন্য খেলোয়াড়েরা। তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানে না। শুরুতে ভাল খেলতে না। পারার অভিনয় করে গেল সে। তারপর সুযোগ বুঝে কায়দা করে গোল দিয়ে। দিল। এমন সময় গোল, যখন প্রতিপক্ষের আর কিছুই করার থাকল না। ওই চালাকি অবশ্য মিস্টার লিসটারও পছন্দ করেন, তাই লিখলাম। চালাক লোক দরকার তার। আর এমন লোক যাদের অতীত রহস্যময়, কোন গোলমাল আছে। ওই ধরনের লোককে খাটানোর সুবিধে, তার দুর্বলতা জানা থাকলে।
আব্বা খুব চালাক, তাই না?
এলেনার কথার জবাব দিল না হোয়েরটা।
টিট টিট করছে কমপিউটার। মনিটরে লেখা উঠলঃ অশুদ্ধ সংকেত। আবার চেষ্টা করুন। এবার স্লাই ফক্স টাইপ করল হোয়েরটা।
আবার টিট টিট করল যন্ত্র। আবার মেসেজ দিল, অশুদ্ধ। আমার বাবা ধূর্ত শেয়াল? তুমি…তুমি একটা শয়তান! চেঁচিয়ে উঠল আচমকা এলেনা। সে জন্যেই এসব লিখছ!
তাহলে বন্ধ করে দেব? শীতল কণ্ঠে বলল হোয়েরটা। কমপিউটারে খোঁজার আইডিয়াটা কিন্তু তোমারই ছিল।
না, থামব না! জানতেই হবে আমাদের। কিন্তু আব্বার অপমান হয় এমন কিছু করতে পারবে না তুমি। ভাল করেই জান ব্যবসাটা তার কাছে একটা মজার খেলা। উঁচু মানের ফুটবল কোচ বলা যায় তাকে। ভীষণ চালাক। তাতে দোষটা কোথায়? চালাক না হলে কি ব্যবসা করা যায়? আর আব্বা চায় সব সময়। জিততে। জেতার জন্যে যা যা দরকার সবই করে।
নীরবে মনিটরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। ঢুলু ঢুলু চোখ, যেন তন্দ্রালু। হয়ে উঠেছে। হঠাৎ সজাগ হয়ে উঠল, খেলা? আপনার আব্বা ব্যবসাটাকে খেলা হিসেবে দেখেন? পাসওয়ার্ডের সূত্র এর মধ্যে নেই তো?
দ্রুত গেম শব্দটা টাইপ করে ফেলল হোয়েরটা। টিইট টিইট করে একঘেয়ে শব্দ করল যন্ত্র।