না, জোর দিয়ে বলল এলেনা। আমার তা মনে হয় না। নিজে নিজেই চলে গেছে একথা ভেবে চুপ করে থাকতে পারব না আমি। ঝুঁকিটা নেয়া কি ঠিক আপনিই বলুন? কিডন্যাপাররা যদি কোন ক্ষতি করে তার?
মাথা নাড়তে লাগল মিসেস বেকার। বিচ্ছিরি অবস্থা। বাজারের থলেতে হাত ঢুকিয়ে একটা অ্যাপ্রন বের করে আনল। সেটা পরে নিয়ে নাস্তা বানাতে বসল। কথা বলে চলেছে একনাগাড়ে। বাড়ি হল এটা একটা? অভিশাপ আছে এর। ওপর। সব সময়ই খারাপ ঘটনা ঘটছে। বাড়িটা বানিয়েছিল ডিক ব্রাউন নামে এক লোক। আমার পড়শী শেলি টেনারের কাছে শুনেছি এসব। ব্রাউন খুব ধনী লোক ছিল। কিন্তু যেদিন বাড়িটা তৈরি শেষ হল সেদিনই সব কিছু খোয়াল। স্টক মার্কেট ধসে পড়ল, সেটা কবে যেন? হ্যাঁ, উনিশ শো উনত্রিশ সালে। ব্রাউন এখানে। থাকতে আসেনি। বহু বছর খালিই পড়ে রইল বাড়িটা। তারপর, আমি যেই নিউ : ইয়র্কে চলে গেলাম কার্পলি নামের এক পরিবার বাড়িটা কিনল। ওদের কথা মনে আছে আমার। দ্রলোক বেশ বড়সড় শরীরের মানুষ ছিলেন, একদিন পড়ে গেলেন সিঁড়ি থেকে। কোমর ভাঙলেন। জীবনে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি। হাটাচলা বাদ।
কার্পলিদের পরে এল মিস হ্যাঁমারসন। বৃদ্ধা। অনেক টাকার মালিক। একা মানুষ। সেজন্যেই বোধ করি তার এক ভাস্তিকে নিয়ে এল। মেয়েটাকে আমি দেখেছি। সুন্দর ছিল খুব। কিন্তু বিষণ্ণ। সারাক্ষণই মন খারাপ করে রাখত। এর জন্যে অবশ্যই মিস হ্যাঁমারসন দায়ী। বেশি কড়াকডি করত মেয়েটার সঙ্গে। ইস্কুল থেকে এসেই রাতের খাবার বানাতে সাহায্য করতে হত ফুফুকে। মিস হ্যাঁমারসন। বলত, কাজ করা ভাল, তাতে আখেরে উন্নতি হয়। চরিত্র ঠিক হয়। আমার বিশ্বাস, চাকরের পয়সা বাঁচাতেই মেয়েটাকে এনেছিল বুড়ি। সাংঘাতিক কিপটে ছিল তো। আহারে, বেচারি মেয়েটার জন্যে খুব কষ্ট হত আমার। ওর বয়েসী ছেলেমেয়েরা যখন খেলত, কিংবা গল্প করত, সে তখন খেটে মরত রান্নাঘরে।
মেয়েটার চোদ্দ বছর বয়েস তখন। একদিন একটা চুলের কাটা হারিয়ে গেল। মিস হ্যাঁমারসনের। দোষ দিয়ে বসল মেয়েটাকে। বলল সে-ই চুরি করেছে। রাগ করে তখন মেয়েটাকে তার বাবা-মার কাছে পাঠিয়ে দিল। শুনেছি, কয়েক বছর পর একটা শয়তান ছেলের সঙ্গে পালিয়ে গেছে মেয়েটা। তার পর যা হয় তা-ই হল। কিছু দিন পর মেয়েটাকে ফেলে রেখে পালাল ছোকরা। শেষ খবর যা জানি, স্যানফ্রানসিসকোয় আছে মেয়েটা। একটা মার্কেটে চাকরি করে।
ডিম, টোস্ট আর ভাজা মাংস এনে টেবিলে সাজিয়ে দিল মিসেস বেকার। এক কাপ কফি খাবার জন্যে নিজেও বসল সবার সঙ্গে।
এ বাড়িতে ভূতের উপদ্রব আছে, শুনেছেন কখনও? কিশোর জিজ্ঞেস করল। এখানে যেসব কাণ্ড হয়েছে তাতে নিশ্চয় অনেক কানাঘুষা করেছে লোকে। গুজব রটেছে।
লোকে তো বলেই, মিসেস বেকার বলল। আর পুরনো বাড়ির ব্যাপারে খামোকাই অনেক কথা বলে, কিছু না থাকলেও। তবে এ বাড়ি সম্পর্কে আমি। তেমন কিছু শুনিনি। কিছু দেখিওনি। বাড়িটা আনলাকি, একথাই শুধু বলতে পারি। আর মাঝে মাঝে, মেঘলা দিনে এমন মনে হয়…মনে হয় কি যেন তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে! লুকিয়ে আমাকে দেখছে। কেন যে এমন লাগে বলতে পারব না। রাতের বেলা আর কিছুতেই থাকতে রাজি নই আমি এখানে।
যত্তোসব ছেঁদো কথা! বিড় বিড় করল এলেনা।
চিলেকোঠায় ঘুরে বেড়ানো কোন কিছুর কথা আপনি শুনেছেন? জিজ্ঞেস করল রবিন।
চিলেকোঠায়? মাথা নাড়ল মিসেস বেকার। নাহ! ওরকম কিছুই শুনিনি, আমি। চিলেকোঠায় কিংবা কোনখানেই কিছু আছে বলে জানি না। শুধু শুধু আমার মনে হয়, আছে.। কোথাও কোন একটা ব্যাপার রয়েছে, ঠিক বুঝতে পারি না।
কফির কাপে ঘন ঘন কয়েকবার চুমুক দিল মিসেস বেকার। গম্ভীর হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গটা বদল করল দুই গোয়েন্দা। মিসেস বেকার তেমন কোন তথ্য দিতে পারল না ওদেরকে। তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গেল ওরা, গত রাতের ঘটনাটা এ বাড়িতে নতুন।
নাস্তা শেষ করে, এলেনার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ল ওরা। স্যালভিজ ইয়ার্ডে ঢুকতেই দেখা হয়ে গেল মেরিচাচীর সঙ্গে। কিশোর ভেবেছিল, তাকে দেখলেই নানা কথা জিজ্ঞেস করতে শুরু করবেন তিনি। কিন্তু করলেন না। ফুরসৎ নেই। কাজে ব্যস্ত। প্যাসাডেনায় একটা পুরনো বাড়ি ভেঙে নতুন করে ভোলা হবে। ওটার যত পুরনো জিনিসপত্র আছে সব কিনে নিয়ে এসেছেন রাশেদ পাশা। শুধু তাই নয়, পুরনো ইটও নিয়ে এসেছেন। সুড়কি লেগে রয়েছে। কিশোর আর রবিনকে দেখেই কাজে লাগিয়ে দিলেন মেরিচাচী। ইট পরিষ্কারের কাজ।
মেজাজ খিঁচড়ে গেল কিশোরের। কিন্তু কিছু করার উপায় নেই। মেরিচাচীর মুখের ওপর না বলার সাহস নেই তার। কাজ শেষ করতে করতে অনেক বেলা হয়ে গেল। ঘরে ঢুকে হাতমুখ ধুয়ে এল দুজনে। খেতে দিলেন চাচী। স্যাণ্ডউইচ। ডাইনিং রুমে বসে না খেয়ে সেগুলো নিয়ে ওয়ার্কশপে চলে এল ওরা।
বেঞ্চে বসে খাবার চিবুচ্ছে, এই সময় মাথার ওপরের লাল আলোটা জ্বলে নিভে জানান দিল হেডকোয়ার্টারে টেলিফোন বাজছে।
দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে এসে ট্রেলারে ঢুকল দুজনে। রিসিভার তুলে নিল কিশোর। ফোন করেছে ডেভিভ লিটারের সেক্রেটারি কডি হোয়েরটা।
এলেনা বলল তোমাকে ফোন করতে। সারা সকাল ধরে সেই রহস্যময় বইটা খুঁজেছি। পাইনি। তখন এলেনা বলল, তার আব্বার কমপিউটারে খোঁজ নিতে। ফাইল দেখলে হয়ত কিছু জানা যাবে। কিন্তু ফাইল বের করার সংকেত জানি না। এলেনা তোমাকে আসতে বলেছে। তার ধারণা, তুমি কিছু করতে পারবে।