আলো নেই। এবার দুজনেই সমান। অন্ধকারে চলল একে অপরকে পরাজিত করার চেষ্টা। কিশোরের গলা টিপে ধরতে চাইল লোকটা। সরে গেল গোয়েন্দাপ্রধান। পিছাতে গিয়ে কিসে যেন পা বেধে গেল। উল্টে পড়ত আরেকটু হলেই। সামলাতে কষ্ট হল।
হাত পড়ল তার কাঁধে। ঝাড়া দিয়ে সরানোর চেষ্টা করল কিশোর। ছাড়ল না তাকে আঙুলগুলো। খামচে ধরেছে। হাতটা খুজছে বোধহয় মুচড়ে ধরার জন্যেই।
আন্দাজে লোকটার চোয়াল সই করে ঘুসি চালাল কিশোর। লাগল না। পেট সই করে হাত চালাল। এবারেও লাগাতে পারল না। জোরে ঠেলা লাগল কাঁধে ] জোর আছে লোকটার গায়ে। হুমড়ি খেয়ে পড়ল কিশোর। সামলে নিতে পারত, একটা বাক্সে পা বেধে যাওয়াতেই পড়ে গেল।
নিচে দরজা খোলার শব্দ হল।
কিশোর! ডাক দিয়ে বলল রবিন। এনেছি। এসো।
বিড়বিড় করে উঠল আরেকটা কণ্ঠ। কিছু বুঝতে পারল না কিশোর। অন্ধকারে দরজা দিয়ে প্রায় ছুটে বেরোল রহস্যময় হামলাকারী। সিঁড়িতে পায়ের শব্দ দুপদাপ করে নেমে চলে গেল।
হাঁচড়ে পাঁচড়ে উঠে পড়ল কিশোর। দৌড় দিল সে-ও। লোকটাকে ধরার জন্যে। দোতলায় পৌঁছে পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল পেছনের সিঁড়িতে।
আবার ডাকল রবিন, এই কিশোর! কি হয়েছে?
জবাব না দিয়ে দৌড়ে নামল কিশোর। রান্নাঘরে ঢুকল। দড়াম করে লেগে গেল ঘরের পেছন দিকের দরজাটা। লোকটা বেরিয়ে গেল। ছুটে গিয়ে সে দরজা। খুলে তাকাতে তাকাতে, আঙিনা পার হয়ে গেল হামলাকারী।
.
০৬.
পুলিশকে খবর দিল এলেনা। এসে রিপোর্ট লিখে নিল ওরা। বাড়ির চারপাশে ঝোপগুলোতে খুঁজে দেখল। গ্যারেজে দেখল। তারপর এলেনাকে পরামর্শ দিল, আবার যদি কেউ হামলা করতে আসে নাইন ওয়ান ওয়ানে যেন ফোন করে।
লিসটারের আর কোন খবর আছে কিনা জিজ্ঞেস করল পুলিশ সান্ত্বনা দিয়ে বলল, ভয় নেই, অনেকেই ওরকম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়, আবার ফিরেও, আসে। র্যানসম নোটটার ব্যাপারে কিছুই বলল না এলেনা। দরজায় দাঁড়িয়ে পুলিশের গাড়িটা চলে যেতে দেখল। জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কে ওই লোক? সাধারণ চোর? নাকি কিডন্যাপার? চিন্তায়ই ফেলে দিল।
আমার ধারণা কিডন্যাপার, রবিন বলল। হয়ত বিশপের বইয়ের জন্যে তর সইছে না আর। অস্থির হয়ে নিজেই দেখতে চলে এসেছে।
হয়ত, কিশোর বলল। তবে তার চেয়ে আমাদেরই খুঁজে দেখার সুযোগ বেশি। আমাদের ওপর দায়িত্বটা ছেড়ে দিয়ে চুপ করে বসে থাকাই তার জন্যে সুবিধে। একটা ব্যাপার অবশ্য জেনে গেলাম, এ বাড়ির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।
ভয় ফুটল এলেনার চোখে। আজ রাতে মায়ের কাছে চলে যাব কিনা ভাবছি। এ বাড়িতে আমি একা থাকতে পারব না।
আপনার আম্মা কি কাছেই থাকেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
সান্তা মনিকায়। আব্বার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। হ্যাঁ, চলেই যাব। কিন্তু…থাকতে পারলেই ভাল হত। আবার ফোন করতে পারে কিডন্যাপার। আমি না থাকলে কথা বলবে কে? কডিকে ফোন করে অবশ্য থাকতে বলতে পারি। আব্বার সেক্রেটারি যখন, এটা তার ডিউটির মধ্যেই পড়ে। কিছু ওভারটাইম দিলেই হবে।
আপনার হবু বর আর তার মা এসে থাকতে পারেন না?
পারত। তবে বোস্টন থেকে নাকি খবর এসেছে, বাড়িতে জরুরী কাজ। আজ রাতেই চলে যেতে হবে ওদেরকে। গুঙিয়ে উঠল এলেনা। নিক অবশ্য থাকতে চেয়েছিল, আমি মানা করে দিয়েছি।
কিশোর বলল, আপনি চাইলে আমি আর রবিন থাকতে পারি।
চোখ মিটমিট করল এলেনা। এমন ভান করতে লাগল এলেনা যেন প্রস্তাবটায় খুশি হয়নি, কিন্তু চেপে রাখতে পারল না। অবশেষে বলল, বেশ। আমি তোমাদের মক্কেল। কাজেই আমার ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব এখন তোমাদের। হাসল। তোমাদের বাড়ি থেকে কোন আপত্তি আসবে না তো?
না। আমাদের এসব অত্যাচার বাড়িতে গা সওয়া হয়ে গেছে। রাতে না ফিরলে এখন আর কিছু মনে করে না। তবে একটা ফোন করে বলে দিতে হবে, বলল কিশোর।
বাসায় বলে দিল কিশোর আর রবিন। এলেনাকে পাহারা দেয়ার জন্যে লিসটারের বাড়িতে রাত কাটাতে অনুমতি মিলল দুজনেরই। ফোন করার পর মনে। পড়ল রবিনের পিজা খাওয়ার কথা। খাওয়া শেষ করে আবার বিশপের বই খোঁজায় মন দিল। দোতলার ঘরে অনেক বই, কাগজপত্র আর স্যুভনির মিলল, ম যেগুলো প্রমাণ করে তরুণ বয়েসে নাবিক ছিলেন লিসটার, সাগরে সাগরে; ঘুরেছেন।
অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় লেখক ছিলেন আপনার আব্বা, হাতির দাঁতের তৈরি একটা হাতির প্রতিকৃতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে রবিন। ভারত থেকে আনা হয়েছে জিনিসটা। দেশে দেশে ঘুরতে নিশ্চয় খুব ভাল লাগত তার।
অ্যাডভেঞ্চারটা তখন করতে হয়েছে পেটের দায়ে, বিষণ্ন কণ্ঠে বলল এলেনা। যেখানে কাজ পেত সেখানেই চলে যেত। তারপর কোন ভাবে কিছু টাকা। জমিয়ে কিনল লিসটার স্টীমশিপ লাইন। পুরনো মরচে পড়া দুটো মালবাহী। জাহাজ, হিউসটন থেকে ক্যারিবিয়ান বন্দরগুলোতে যাতায়াত করত। ওই দুটো লক্কড় মার্কা জাহাজের আয় থেকেই আরেকটু ভাল আরেকটা জাহাজ কিনল। আরও টাকা জমল। ভিজালিয়ায় ছোট একটা ব্যাংক কিনল। ঢুকে পড়ল স্টক মার্কেটে।
আম্মা বলে ওই সময়টাতেই টাকার জন্যে রীতিমত খেপে ওঠে আব্বা। ভাল একটা মানুষ চোখের সামনে পাকা জুয়াড়ি হয়ে গেল যেন, আম্মার কাছে তা-ই। মনে হয়েছে। আসলে আমার মনে হয় আম্মা আব্বাকে বুঝতে পারেনি।