এটার ব্যাপারে কি মনে হয়? একটা বই তুলে ধরল রবিন। নাম দা ডে লিংকন ওয়াজ শট। লেখকের নাম জিম বিশপ।
মনে হয় না, কিশোর বলল। যাক। তাকে তুলো না। বাইরেই রাখ।
হতে পারে কোন বইয়ের দুর্লভ প্রথম সংস্করণ, আন্দাজ করল এলেনা। কিংবা প্রকাশই হয়নি এমন কোন পাণ্ডুলিপি চায়। নোট কিংবা বৈজ্ঞানিক গবেষণার নথিপত্রও হতে পারে। অথবা কোন লগবুক-অতীতের কোন গোপন ঘটনার কথা লেখা রয়েছে যাতে। সাংঘাতিক মূল্যবান কোন দলিল। কোন। কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ইতিহাস। হতে পারে না? কী
সবই খুঁজে দেখব, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর।
বুককেসগুলো দেখা শেষ করে পুরনো আলমারির তাকে রাখা বাক্স আর ফোল্ডারগুলোর দিকে দৃষ্টি দিল গোয়েন্দারা। ক্যানূসেল করে দেয়া ব্যাংক চেকের বাণ্ডিল দেখতে পেল। পুরনো টেলিফোনের বিল, পোস্টকার্ড কোন কোনটা সুদূর জিব্রালটার আর কায়রো থেকেও এসেছে। সব শাদা। লেখা নেই। বোঝা গেল। চিঠি লেখার জন্যে নয়, স্যুভনির হিসেবে আনা হয়েছে ওগুলো।
তরুণ বয়েসেই সাগর পাড়ি দিয়েছিল আব্বা, এলেনা জানাল। ইনডাস্ট্রির ব্যবসায় ঢোকার অনেক আগের কথা সেটা। ওয়াল স্ট্রীটে তো তার ডাকনামই দিয়ে ফেলা হয়েছে জলদস্যু। হয়ত পাইরেটই ছিল, কে জানে! নইলে একেবারে জিভারো থেকে শুরু করে এতটা ওঠে কিভাবে? শুরু যখন করে একটা ফুটো পয়সা ছিল না পকেটে। লোকে জানে, একথা। কিন্তু দেখতে দেখতে একটা শিপিং লাইনের মালিক হয়ে গেল। কয়েকটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর দিয়ে ফেলল। তারপর কিনল একটা পেপার মিল, গোটা তিনেক ব্যাংক। অথচ অতটা চালাক লোক নয় সে, সাংঘাতিক বুদ্ধিমান যে তা-ও নয়।
ততটা খারাপও ভাবতে পারছি না, কিশোর বলল।
এই সময় টেলিফোন বাজল। চমকে উঠল এলেনা। রিসিভার তুলে কানে ঠেকাল। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিছুই বলল না। তারপর চিৎকার করে উঠল, চেষ্টা তো করছি! শোন, কিছু কিছু পেয়েছিও। লাগলে নিয়ে যেতে পার। একটার নাম দা বিশপ মারডার কেস। আরেকটা বইয়ের লেখকের নাম জিম বিশপ…
থেমে গেল সে। ভ্রূকুটি করল। আবার বলল, তোমাকে ঠকানোর কোন ইচ্ছে আমার নেই। শোন, কি খুঁজতে বলছ সেটাই জানি না। জানলে আরে শোন শোন… রিসিভারটা নামিয়ে এনে তাকিয়ে রইল ওটার দিকে।
কিডন্যাপার? জানতে চাইল কিশোর।
হ্যাঁ। তার ধারণা আমি তার সঙ্গে ইয়ার্কি মারছি। পুরনো খুনের গল্পের বই চায় না সে। সে চায় বিশপের বই। আর কোন তথ্য না জানিয়েই লাইন কেটে দিল।
গলা শুনে কি মনে হল? রবিনের প্রশ্ন, চিনলেন?
মাথা নাড়ল এলেনা। খসখসে। হয় ঠাণ্ডা লেগেছে, নয়ত মুখে রুমাল দিয়ে নিয়েছিল। যাতে চেনা না যায়। কথায় এক ধরনের টান রয়েছে। তবে বুঝতে পারলাম না কোন দেশের।
আবার গিয়ে দেরাজে খোঁজায় মন দিল এলেনা। শেষ ড্রয়ারটা যখন খোঁজা শেষ করল সে, রবিন আর কিশোর তখন সবগুলো তাক দেখে শেষ করে ফেলেছে। অধৈর্য হয়ে উঠছে তিনজনই। এলেনার খিদে পেয়েছে। নার
ডিনার খাইনি, বলল সে। ফ্রিজেও কিছু নেই। পার্টির জন্যে খাবারের অর্ডার দেয়া হয়েছিল। খুব হিসেব করে। এখন পিজা কিনে এনে খাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
চলবে, হাসল রবিন।
রবিন, তুমিও যাও। একটু পনিরটনিরও নিয়ে এসো, কিশোর বলল। আর কোক।
রবিন গেল এলেনার সঙ্গে খাবার কিনতে। কিশোর রয়ে গেল। খোঁজা বন্ধ করল না। পরের বেডরুমটায় রওনা হল সে। চিলেকোঠায় যাওয়ার দরজাটার ওপর চোখ পড়ল।
কি মনে করে টান দিয়ে দরজাটা খুলল সে। সুইচ টিপে সিঁড়ির আলোটা জ্বালল। তারপর উঠতে শুরু করল ওপরে।
এককোণে ঠেলে সরিয়ে রাখা হয়েছে ট্রাঙ্কগুলো। বাক্স আর বুককেস আছে, তবে উপচে পড়ছে না অন্যান্য জায়গার মত। দরজার কাছের তাকগুলো থেকে খোঁজা শুরু করল কিশোর। পাতলা একটা বই টেনে বের করল। নাম দা সিক্রেট অভ টাইপরাইটিং স্পীড। ১৯১৭ সালে লেখা।
বইটা আবার তাকে রেখে দিল। কানে এল নিচে দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ। রবিন! ডাক দিল সে। তুমি?
জবাব এল না। তাকের দিক থেকে ঘুরে কান পাতল কিশোর। হঠাৎ বুঝতে পারল রবিন কিংবা এলেনা নয়। পিজা নিয়ে এত তাড়াতাড়ি আসার কথা নয়। ওদের।
কিন্তু কেউ একজন ঢুকেছে।
আর ডাকল না কিশোর। নড়লও না। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। পদশব্দ শোনা গেল। উঠে আসছে কেউ।
কাপড়ের খসখস শোনা গেল। সিঁড়ির মাথার কাছেই পৌঁছে গেছে বোধহয় লোকটা। ভারি নিঃশ্বাস পড়ছে।
কিট করে উঠল লাইট সুইচ। চিলেকোঠার আলো নিভে গেল।
হঠাৎ অনেক বেশি অন্ধকার লাগল কিশোরের কাছে। মনে হল যেন চারদিক থেকে চেপে এসে ধরতে চাইছে। বুককেসের কাছ থেকে সরে গেল সে। লুকোতে গেল আরেকটা বুককেসের আড়ালে। কিন্তু তার আগেই গায়ে এসে পড়ল উজ্জ্বল। আলো। টর্চ।
সরে যাওয়ার চেষ্টা করল কিশোর। সঙ্গে সঙ্গে এল আলোক রশ্মি। গায়ের ওপর থেকে সরছে না। ঘরে ঢুকল লোকটা। উজ্জ্বল আলো চোখে পড়ায় আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না কিশোর। লুকানোর উপায় নেই। বেরোনোর পথ নেই। দরজা আগলে দাঁড়িয়েছে লোকটা।
পিস্তল আছে কি লোকটার হাতে? চোখের ওপর হাত তুলে এনে দেখার চেষ্টা। করল কিশোর। দেখতে পেল না। যা থাকে কপালে ভেবে লাফ দিয়ে এগোল। দা চালানোর মত কোপ মারল লোকটার টর্চ ধরা হাতের কব্জিতে। উফ করে উঠল। লোকটা। টর্চ খসে পড়ল। ঝনঝন করে কাঁচ ভাঙল। গড়িয়ে সরে যাচ্ছে টর্চটা। কয়েকবার মিটমিট করে নিভে গেল আলো। আবার অন্ধকারে ডুবে গেল চিলেকোঠা।