তুলে নিয়ে কানে ঠেকাল কিশোর। বলুন।
রবিন কিছু শুনতে পাচ্ছে না। তাকিয়ে রয়েছে কিশোরের দিকে।
ও, কিশোর বলল, তাই!
আরও কিছুক্ষণ ওপাশের কথা শুনল। তারপর বলল, বেশ।
রিসিভার নামিয়ে রাখল কিশোর। এলেনা লিসটার। এখুনি যেতে বলেছে আমাদের। তার বাবাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে।
.
০৫.
পনের মিনিটের মাথায় লিসটারের বাড়ির দরজায় এসে দাঁড়াল দুই গোয়েন্দা। কলিং বেল বাজাল কিশোর।
দরজা খুলে দিল এলেনা। পুরনে এখনও সেই নীল পোশাক, পার্টিতে যেটা পরেছিল। তবে এখন আর তেমন ধোপদুরস্ত নেই, কুঁচকে গেছে। হাই-হলিও নেই পায়ে।
টাকার জন্যে নোট পেয়েছেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
নীরবে একটুকরো কাগজ কিশোরের হাতে তুলে দিল এলেনা। জোরে জোরে পড়ল গোয়েন্দাপ্রধান, বিশপের বই বদল করলেই শুধু ফেরত আসবে বাবা। পুলিশ ডাকা চলবে না। যা করার জলদি করতে হবে। দেরি করলে ভীষণ বিপদ হবে।
পেন্সিল দিয়ে বড় করে লেখা রয়েছে বিশপ শব্দটা। বাকি শব্দগুলো খবরের কাগজের পাতা থেকে কেটে সাটা হয়েছে।
বিশপ শব্দটা খবরের কাগজে হরহামেশা ছাপা হয় না, এলেনা বলল। সেজন্যেই পায়নি। হাতে লিখতে হয়েছে। খামে করে পাঠায়নি। শুধু কাগজটা। .. পেছনের দরজার নিচ দিয়ে ভেতরে ঠেলে দিয়েছে কেউ। তারপর ঘণ্টা বাজিয়ে দৌড়ে পালিয়েছে।
কিডন্যাপিংই, আপনি শিওর? কিশোরের প্রশ্ন। আজ বিকেলে কিন্তু আপনার সন্দেহ হয়েছিল, আপনার আব্বা পুরো ব্যাপারটা প্ল্যান করেই করেছেন।
নাহ্, আব্বা অতোটা খারাপ নয়। দরজার ঘন্টা বাজিয়ে দৌড়ে পালাতেও পারবে না। ক্ষমতা নেই। জোরে হাঁটতেই কষ্ট হয় ইদানীং। এটা কিডন্যাপিংই। এখন আমাকে বিশপের বই খুঁজে বের করতে হবে। কোন বই ওটা এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র ধারণা নেই আমার। তোমাদেরকে সেজন্যেই ডেকেছি। বইটা খুঁজতে আমাকে সাহায্য করতে হবে।
নোটটা তুলে ধরল কিশোর। এটার কথা পুলিশকে জানানো উচিত। জানিয়েছেন?
না। তোমরাও বলবে না। কারণ লোকটা বলতে নিষেধ করে দিয়েছে। এ ঝুঁকি আমি নিতে পারব না। এমনকি আমার আব্বার মত বদমেজাজি লোকের জন্যেও না। বিপদে পড়বে। আরও একটা কথা আছে, তার খারাপ কিছু হলে আমারও সাংঘাতিক ক্ষতি। সম্পত্তির একটা কানাকডিও পাব না। উইলে সে রকমই লেখা আছে। যদি অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় তার, কিংবা গায়েব হয়ে যায়। রহস্যজনকভাবে, তাহলে আমাকে ফকিরের মত ঘাড় ধরে এ বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া আছে। বোঝ এবার, কেমন বাপ আমার। আমার কোন দোষ না থাকলেও বঞ্চিত করা হবে তখন আমাকে।
হু! মাথা দোলাল কিশোর।
চমকে গেলে নাকি? আব্বা সব সময় খারাপ দিকটাই ভাবে, আর আমাকে সন্দেহ করে। আমার তা-ই মনে হয়। ভেবে দেখ, নিজের মেয়েকে অবিশ্বাস করে। নইলে ওরকম উইল লিখতে পারতো? থাক ওসব কথা। এসো, কাজ শুরু করিগে।
ঘুরে সিঁড়ির দিকে রওনা হল এলেনা। তাকে অনুসরণ করল ছেলেরা। মেয়ের মুখে লিসটারের অদ্ভুত চরিত্রের কথা শুনে অবাক হয়েছে।
ওপরের হলঘরে একটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনার লাগান হয়েছে। ছেঁড়া বালিশের পালক যতটা সম্ভব পরিষ্কার করে ফেলেছে এলেনা। তবে পুরোপুরি পারেনি। বিভিন্ন জায়গায় কিছু কিছু রয়ে গেছে এখনও। তা নিয়ে মাথাব্যথা নেই। গোয়েন্দাদের। যে কাজ করতে ডাকা হয়েছে ওদের সে কাজে মনোযোগ দিল। ডেভিড লিসটারের শোবার ঘর থেকে শুরু করল বইটা খোঁজা। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর লেখা বই রয়েছে এখানে। দর্শনশাস্ত্র, রসায়ন শাস্ত্রের মত কঠিন বিষয় যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে পাখি নিয়ে গবেষণার বই। তার পাশাপাশিই রয়েছে হালকা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী। অভিধান আছে, আছে মূল্যবান পাথরের ওপর লেখা বই। ঠিক তার কাছেই রয়েছে ডিকেনসের লেখা সুদৃশ্য চামড়ায় বাঁধানো একসেট বই।
এই যে একটা পেলাম, ধুলো পড়া নোংরা মলাটের একটা পেপারব্যাক বই। তুলে ধরল কিশোর। নাম দা বিশপ মারডার কেস। এস. এস. ভ্যান ডাইন-এর লেখা একটা রহস্যকাহিনী।
বইটা নিয়ে হলদেটে পাতাগুলো ওল্টাতে লাগল এলেনা। দূর! এটার জন্যে কিডন্যাপিঙের মত একটা অপরাধ করবে না কেউ। থাক এটা। খুঁজতে থাক।
নাকে ধুলো ঢুকেছে রবিনের। জোরে হাঁচি দিল। তাক থেকে বই নামিয়ে মলাট দেখছে, নাম পড়ছে, আবার তুলে রেখে দিচ্ছে আগের জায়গায়। বলল, অনেক পড়াশোনা করেন আপনার আব্বা, তাই না?
না, বই দেখে যতটা মনে হয় ততটা না। বই কেনেই শুধু। নেশা। বলে, সময় করে নিয়ে ভালমত পড়তে শুরু করবে একদিন। সব পড়ে শেষ করে। ফেলবে। কিন্তু সেই সময় আর করতে পারে না। কিনেই চলেছে, কিনেই চলেছে, তাকে তুলে রাখছে। নামানো আর হয় না। বইয়ের মালিক হতে পেরেই যেন খুশি। আব্বা। কোন বই কখনও হাতছাড়া করে না, ফেলে দেয়া তো দূরের কথা। শুধু বইই না, কোন জিনিসই ফেলে না।
বড় দেরাজটার দিকে ঘুরল এলেনা। দেখি, এর ভেতরে কি আছে। বিড়বিড় করতে করতে গিয়ে টান দিয়ে ড্রয়ার খুলল সে। কয়েক জোড়া মোজা, একটা মাফলার আর কাগজের বাণ্ডিল। কাগজগুলো বের করে তার ভেতরে বই খুঁজল। খবরের কাগজের কাটিং, ছেলেদেরকে জানাল। একটা প্রেসক্রিপশন। কিছু। ভ্রমণের ব্রশিয়ার।
কাগজগুলো আবার ড্রয়ারে ছুঁড়ে ফেলল সে। কি খুঁজছি জানা থাকলে অনেক সহজ হত। একটা রহস্যোপন্যাস চেয়ে পাঠিয়েছে একথা একদম বিশ্বাস করতে পারছি না। তাও আবার পুরনো।