- বইয়ের নামঃ ঈশ্বরের অশ্রু
- লেখকের নামঃ রকিব হাসান
- সিরিজঃ তিন গোয়েন্দা সিরিজ
- প্রকাশনাঃ সেবা প্রকাশনী
- বিভাগসমূহঃ রহস্যময় গল্প, গোয়েন্দা কাহিনী
ঈশ্বরের অশ্রু
০১.
সাবধান! তিন গোয়েন্দাকে হুঁশিয়ার করল হেনরি বেসিন, একটু এদিক ওদিক হলেই কিন্তু খেপে যাবে বুড়োটা।
এমনিতে হাসিখুশি লোক বেসিন। রসিক। কিন্তু এখন ভুরু কুঁচকে রেখেছে। ওই শকুনটা, বললো সে। এমন কিপটের কিপটে, পয়সাই ছাড়তে চায় না। তাই তোমাদের ইউনিফর্ম ঠিকমত করে দিতে পারলাম না। কিশোর, জ্যাকেটটা ঢলঢলে হয়েছে।
হাতের ট্রেটা নামাল কিশোর। চীজ পাফ আর রুমাকিগুলো সরিয়ে রাখল। তারপর তাকাল গায়ের শাদা ওয়েইটারের পোশাকটার দিকে। তার চেয়ে অনেক মোটা লোকের পোশাক এটা। সব জায়গাতেই ঢোলা। বিশেষ করে দুই কাঁধ থেকে হাতা অনেকখানি ঝুলে পড়েছে।
এর বেশি আর কিছু দিতে পারছি না, বেসিন বলল। ছোট আরেকটা আছে অবশ্য, তবে সেটা গায়েই লাগবে না তোমার। নাহ্, এভাবে আর পারা যায় না।
কিশোরের পেছনে রয়েছে মুসা। তার হাতেও ট্রে। তাতে ক্যারট স্টিক আর ডিপ। তার জ্যাকেটটা এত খাটো হয়েছে, প্রায় কোমরের কাছে উঠে এসেছে। কনুইয়ের সামান্য নিচে হাতা, কবজি থেকে অনেক দূরে। অনেকটা কাকতাড়ুয়া পুতুলের মত লাগছে তাকে।
আর রবিনেরটা তো সব চেয়ে ঢোলা। এমনকি কিশোরেরটার চেয়েও। হাতা গুটিয়ে রাখতে হয়েছে। নইলে আঙুল সহ ঢেকে যায়। হাতে ট্রে। বেঢপ লাগছে। শরীরটা পোশাকের কারণে।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল বেসিন। আর কিছু করার নেই আমার। যাও, মেহমানদের খাবার দাও। লিসটারের সামনে না পড়লেই হবে। কিছু ভাঙলে নিজের দায়িত্বে ভাঙবে। আমি কিছু করতে পারব না। এক ফোঁটা চা ফেলে দিলেও মুণ্ডু চিবিয়ে খাবে বুড়োটা।
রান্নাঘরের দরজা খুলে দিল বেসিন। ট্রে নিয়ে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। লিভিং রুমের গেস্টদেরকে খাবার বিতরণ করতে লাগল। পুরনো আমলের ঘর। মানুষগুলোও পুরনো। পুরনো আসবাব আর তাক বোঝাই জিনিসপত্র কেমন অস্বস্তি জাগায়। বাগানের দিকের ফ্রেঞ্চ উইণ্ডোগুলো খোলা। ফুরফুর করে ঢুকছে জুনের উষ্ণ হাওয়া। গরম লাগছে তিন গোয়েন্দার। অস্বস্তিতে শক্ত হয়ে গেছে শরীর, নড়তে চাইছে না যেন হাত পা। শক্ত করে ধরে রেখেছে ট্রে, একটু খাবারও যাতে না পড়ে সেদিকে কড়া নজর। ভীষণ বদমেজাজী ডেভিড লিসটারের গালাগাল শুনতে চায় না।
মিস্টার লিসটারের সঙ্গে পরিচয় হয়নি ওদের। দেখাই হয়নি। তবে তার সম্পর্কে এত কথা শুনেছে, দেখা করার প্রচণ্ড ইচ্ছে। ওয়েস্ট কোস্টের একজন কোটিপতি তিনি। রকি বীচে তার প্রতিবেশী এবং তার সঙ্গে যাদের ব্যবসার সম্পর্ক আছে, তাদের কেউই ভাল বলে না। আর এমন কিপটের কিপটে, নব্বইটা সেন্ট পেলে না খেয়ে জমিয়ে রেখে দেয় এখনও, আরও দশটা সেন্ট জোগাড় করে পুরো একটা ডলার করার জন্যে।
পার্টিতে সাহায্য করার জন্যে তিন গোয়েন্দাকে ভাড়া করেছে হেনরি বেসিন। কিছুটা বেপরোয়া হয়েই। কারণ ওই খরচের টাকাটাও লিসটারের কাছ থেকে আদায় করতে ঘাম ছুটবে তার। শহরের নতুন এবং সবচেয়ে অল্প বয়েসী ক্যাটারার সে। এতদিন ছোটখাট কাজ করেছে। এই প্রথম লিসটারের বাড়িতে পার্টির মত বড় একটা কাজ পেয়েছে। কাজেই নাম করার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে সে। তার সঙ্গে মোটামুটি পরিচয় আছে তিন গোয়েন্দার। স্যালভিজ ইয়ার্ডে পুরনো জিনিস কিনতে যায়। লিসটারের নাম তিন গোয়েন্দাও শুনেছে। কেমন লোক দেখার ইচ্ছে কিশোরের অনেক দিনের। কথায় কথায় বেসিনের কাছে যখন শুনল, পার্টিতে সাহায্য করার জন্যে লোক খুঁজছে, ওয়েইটারের কাজটা দেয়ার জন্যে চেপে ধরল তাকে। লিসটারের বাড়িতে ঢোকার এইই সুযোগ। কম পয়সায়, কাজের লোক পেয়ে বেসিনও রাজি হয়ে গেল। ওরকম কিপটে লোকের বাড়িতে যেতে মুসা প্রথমে রাজি হতে চায়নি। অনেক বলেকয়ে তাকে রাজি করিয়েছে কিশোর। রবিনের ব্যাপারটা অন্যরকম। গানের কাজ একঘেয়ে লাগতে আরম্ভ করায় কিছুদিন ছুটি নিয়েছে সে। তাছাড়া বেশ কিছুদিন থেকে তিন গোয়েন্দার সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখতে পারছে না। দক্ষিণ সাগরে যেতে পারেনি। এখন আবার মনপ্রাণ দিয়ে লেগে গেছে পুরনো কাজে।
হেনরি বেসিনকে কন্ট্রাক্ট করেছে লিসটার খরচ বাঁচানোর জন্যে। বড় এবং নামী ক্যাটারার ভাড়া করতে চাইলে অনেক খরচ। কড়া হুকুম দিয়ে দিয়েছে যত, কম খরচে সম্ভব পার্টি শেষ করতে হবে। ওয়েইটার নিয়ে শুরু হয়েছে খেঁচাখেঁচি। কজন লাগবে সেটা নিয়ে। অনেক চাপাচাপি করে তারপর লিসটারকে রাজি করাতে পেরেছে বেসিন। তবে এক শর্তে, সব চেয়ে কমদামী ওয়েইটার নিয়োগ করতে হবে।
তা-ই করেছে বেসিন। আর এ কারণেই বাগানে যে মেয়েগুলো টেবিল সাজাতে ব্যস্ত, ওরা সব রকি বীচ হাই স্কুলের ছাত্রী। বারটেনডারের দায়িত্বে রয়েছে যে ছেলেটা, সে লস অ্যাঞ্জেলেসের কাপ অভ চিয়ার বারটেনডিং স্কুলের একজন শিক্ষানবিস। আর পিকো নামের যে ভবঘুরে লোকটা বাসন ধোয়ামোছার কাজ করছে, তাকে রাস্তা থেকে ধরে এনেছে বেসিন। একটা মিশনারির কাছে ঘুরঘুর করছিল খাবারের লোভে।
ওয়েইটার রাখা হয়েছে তিন গোয়েন্দাকে। টাকার জন্যে আসেনি। এত কম দামে কেউ ওয়েইটারের কাজ করতে রাজি হত না। ওরা হয়েছে শুধু কৌতূহল মেটানোর জন্যে।