কিন্তু কি যে কষ্ট পাচ্ছেন। তারা কল্পনা করতে পারবেন না। একবার ফোন করেও তো বলে দিতে পারেন…
ঠিক আছে, বাবা, দেব!
ঝটকা দিয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে খানিকটা চা কাপড়ে ফেলে দিল ডলি। সিঙ্কের কাছে একটা দেয়াল টেলিফোন রয়েছে। সেটার বোতাম টিপতে লাগল দ্রুত।
চেয়ে রয়েছে কিশোর। তার কাজ শেষ।
হাল্লো!..হাল্লো! আম্মা?…আরে, হা হা, আমি! ডলি! যে ছেলেটাকে আমাকে খুঁজতে পাঠিয়েছ, এখানেই বসে আছে। …হ্যা…
থেমে ওপাশের কথা শুনতে লাগল ডলি। আবার বলল, না, আমি আসতে পারব না। খুব ভাল আছি। ছেলেটা বলল, তাই…
আবার কথা শুনতে লাগল ডলি। রেগে গেল হঠাৎ। যা বলার বলেছি! আমি আসব না! এখানে একটা চাকরি করছি আমি। থাকার চমৎকার জায়গা পেয়েছি। কিছুদিন ক্লাস করতে হবে আমাকে…
কিছুক্ষণ চুপ করে শুনুল আবার। কিসের ক্লাস জানো না? কতবার বলব! অ্যাকটিং ক্লাস, অভিনয় শেখায় যেখানে। ওসব অ্যালজেব্রা-ফ্যালজেব্রার মধ্যে কোনদিনই যাব না আমি আর।
ওপাশের কথা শুনে খেঁকিয়ে উঠল, আব্বার শরীর খারাপটা কি আমি করেছি। নাকি? তোমাকে ফোন করাটাই একটা গাধামি হয়ে গেছে। খটাস করে ক্রেডলে রিসিভার রেখে দিল ডলি। গজগজ করতে লাগল, যত্তসব! কারও কথা শোনাই উচিত না! কিশোরের দিকে চোখ পড়তে বলল, বাড়ি ফিরে যেতে বলে! গেলে কি হবে জান? আবার ধরে ইস্কুলে পাঠাবে। গলা টিপে মেরে ফেলার অবস্থা করবে। তারপর যখন কতগুলো ছাইপাশ হজম করে ইস্কুল থেকে বেরোব, ওদের পছন্দ করা কোন হাঁদার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেবে! ব্যস, গেল আমার লাইফ!
কি বলবে? জবাব খুঁজে পেল না কিশোর।
.
০৭.
সেদিন সন্ধেবেলা রকি বীচে পৌঁছলেন ডিকসনরা। মেরিচাচীর সঙ্গে ইয়ার্ডে কাজ করছিল তিন গোয়েন্দা, গাড়ির শব্দে ফিরে তাকাল। বাড়ি ফিরেই আগে নেসোতে ফোন করেছিল কিশোর। ডলির ঠিকানা দিয়েছিল, কি কি কথা হয়েছে বলেছিনা। তাহলে এখানে কেন ওরা?
খাইসে! মুসা বলল। কিছু একটা নিশ্চয় হয়েছে!
বেরিয়ে এলেন মিসেস ডিকসন। ডলিকে পেয়েছ! হাসছেন, কিন্তু চোখ লাল। অনেক কেঁদেছেন বোঝা যায়।
হ্যাঁ, জবাব দিল কিশোর। ফোনেই তো সব বললাম।
মুসার দিকে তাকালেন মিসেস ডিকান। চোয়াল এখনও নীল হয়ে আছে, যেখানে ঘুসি খেয়েছিল? আজেবাজে লোকের সঙ্গে মিশছে না তো ডলি?
না, মাথা নেড়ে বলল মুসা।
মিস্টার ডিকসনও বেরিয়ে এলেন। মেয়েটা এখন বাড়ি গেলেই হয়।
আপনাদের তো চেশায়ার স্কোয়্যারে যাওয়ার কথা, কিশোর বলল। কোন গোলমাল?
আসলে, হাসলেন মিসেস ডিকসন। তোমাদেরকে সঙ্গে নিয়েই যাব ভাবলাম। আমরা গেলে হয়ত ভাগিয়ে দেবে। তোমরা যদি একটু বলেকয়ে…
মেয়েকে ভয় পায় ডিকসনরা, বুঝে ফেলল কিশোর। তেতো হয়ে গেল মন। এদের সঙ্গে দেখা না হলেই ভাল হত, ভাবতে লাগল সে।
সরে গেল মুসা। জঞ্জালের কাছে গিয়ে অযথাই কি যেন খুঁজতে লাগল। রবিন একটা চেয়ার পরিষ্কারে মন দিল।
কিন্তু এমন অনুরোধ শুরু করল ডিকসনরা, গাড়িতে উঠতে বাধ্য হল তিন গোয়েন্দা। আবার চেশায়ার স্কোয়্যারে চলল।
লুই গনজাগা নেই গেটে। আরেকজন দারোয়ানের ডিউটি তখন। লেসিং হাউসের মেয়েটার মা-বাবা তাকে দেখতে এসেছেন শুনে খুশি হল সে।
দেখুন, বুঝিয়ে-শুনিয়ে নিয়ে যেতে পারেন কিনা। গেট খুলে দিল দারোয়ান।
ওরকম করে কথা বলল কেন লোকটা! ফিরে দারোয়ানের দিকে তাকিয়ে আছেন মিসেস।
কি বলার জন্যে মুখ খুলেও থেমে গেলেন, ডিকসন। সামনের ছোট পার্কটার দিকে নজর। আরও ডজনখানেক গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে ওখানে। ভিক্টোরিয়ান চেহারার বাড়িটার পাশে ছেলেমেয়েরা ভিড় করছে ওখানে। ষোলো থেকে উনিশের মধ্যে বয়েস।
সবখানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছেলেমেয়েরা। একটা ছেলে গিয়ে উঠেছে লেসিং হাউসের ছাতে। চিমনিতে পিঠ দিয়ে বসে পায়রাকে দানা খাওয়াচ্ছে। সামার হাউসের ওপরেও উঠেছে কয়েকটা ছেলে। ড্রাইভওয়েতে ব্রেকড্যান্স করছে একটা ছেলে, ওর দিকে তাকিয়ে চেঁচাচ্ছে ওরা। উৎসাহ দিচ্ছে।
সমস্ত কোলাহলকে ছাড়িয়ে গেছে মিউজিকের আওয়াজ। ড্রাম, বাঁশি, আর আরও নানারকম বাদ্যযন্ত্রের মিশ্র শব্দে কান ঝালাপালা।
পার্টি দিচ্ছে মেয়েটা, মিসেস ডিকসন অনুমান করলেন।
একে পার্টি বলো? মুখ বাঁকালেন ডিকসন। এ তো রায়ট লেগেছে!
লেসিং হাউসের কাছ থেকে চারটে বাড়ি দূরে গাড়ি রাখলেন তিনি। হেঁটে এগোলেন। বাগানে গিজগিজ করছে ছেলেমেয়ের দল। চত্বরে আর বাড়ির পাশেও একই অবস্থা। কয়েকজনকে চিনতে পারল তিন গোয়েন্দা, পিজা শ্যাকে দেখেছিল।
বিকট বাজনার তালে তালে নাচছে কয়েকজন। চিৎকার করছে। কাগজের মোড়ক খুলে পিজা খাচ্ছে। পোশাক-আশাকও উদ্ভট। কেউ কেউ গহনা পরেছে। পরেছে বলেই গহনা বলে মনে হচ্ছে ওগুলোকে, নইলে কি জিনিস চেনাই যেত না। একটা ছেলে শার্ট-প্যান্ট কিছু পরেনি। কতগুলো কাপড়ের টুকরো শরীরে জড়িয়ে নিয়ে একগাদা সেফটিপিন দিয়ে আটকে রেখেছে। গলায় পেঁচিয়ে রেখেছে একটা জীবন্ত সাপ। আরেকটা ছেলে এসব নাচানাচিতে নেই। সে গিয়ে চত্বরের পাশের সুইমিং পুলে ঢেলে, একটা মাছের অ্যাকোয়ারিয়াম খালি করছে।
সামনের সিঁড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠে বেলের বোতাম টিপলেন মিসেস ডিকসন। এই সময় আরও জোরালো হয়ে গেল মিউজিক। ছাগলের ডাকের মত মাআঁ মাআঁ করে উঠল কি একটা যন্ত্র।