তিন গোয়েন্দার মুখের দিকে তাকাল দারোয়ান। সত্যিই তাকে তোমরা চেন?
ডালিয়া ডিকসনের ছবিটা বের করে দেখাল কিশোর। ডলির বাবা-মা এটা দিয়েছে আমাদেরকে। কি মনে হয়?
সময় নিয়ে ছবিটা দেখল দারোয়ান। ভাবের পরিবর্তন হল না। এই বয়েসের একটা মেয়ে আমারও আছে।
আপনি নিশ্চয় চান, আপনার মেয়ে ভাল থাকুক?
মাথা ঝাঁকাল লোকটা। বেটির সঙ্গে আমি কথা বলব। ও-ই ডলি কিনা জানার চেষ্টা করব। এখন হবে না। মুখ খুলবে না ও। একে তো চোরের ভয়; তার ওপর পুলিশের ঝামেলা। টেনশনে আছে।
কাল সকালে আসি একবার, কি বলেন?
এসো। আমি বেটির সঙ্গে কথা বলে রাখব। কাল সকালে বাড়িতে যাতে থাকে, তারও চেষ্টা করব। অন্তত তোমরা যতক্ষণ না আসো, কাজে বেরোতে দেব না। আশা করি, আমার কথা রাখবে ও।
.
পরদিন সকালে চেশায়ার স্কোয়্যারে একা এল কিশোর। মুসা আর রবিনের সঙ্গে স্ত্র আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একা আসাই ভাল। বেশি মানুষ দেখলে হয়ত অস্বস্তিতে পড়ে যাবে মেয়েটা, তখন আর মুখ খুলতে চাইবে না।
কিশোরকে দেখেই বলতে শুরু করল দারোয়ান, ওর বাবা-মা যে তোমাদেরকে পাঠিয়েছে একথা বলিনি ওকে। নিজে নিজেই হয়ত আন্দাজ কবে নিয়েছে। আমি শুধু বলেছি, তোমরা তার ভাল চাও। দেখা করতে রাজি হয়েছে।
মিসেস লেসিঙের বাড়িটা দেখিয়ে বলল সে, ওই যে, পার্কের ওপাশের বড় বাড়িটা।
দারোয়ানকে ধন্যবাদ দিয়ে চত্বরে ঢুকল কিশোর। এসে দাঁড়াল ১১ নম্বর বাড়ির সামনে। দোতলা বাড়ি। ভিক্টোরিয়ান আমলের চেহারা। সে আবার পা বাড়াতেই একটা দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে এল বেটি। এসেছ। আমি তোমার জন্যেই বসে আছি।
কিশোর পাশা, হাত বাড়িয়ে দিল গোয়েন্দাপ্রধান।
হেসে হাতটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিল বেটি। তারপর ঘরে ঢুকে গেল ভেতরে। তাকে অনুসরণ করল কিশোর। ঢুকেই একটা ধাক্কা খেল। একলাফে যেন চলে। এসেছে অন্য এক যুগে। ঘরের চেহারাটা বানিয়ে রাখা হয়েছে একশো বছর আগের। চওড়া সিঁড়ি, দোতলার কাঠের গ্যালারি, দেয়ালের প্যানেলিং, আসবাবপত্র সব পুরানো আমলের। পুরু লাল কার্পেটে গোড়ালি দেবে যায়। দেয়ালে ঝুলছে ভারি ফ্রেমে বাঁধানো পেইনটিং।
কেমন জানি লাগে, তাই না? কিশোরকে বলল বেটি। এসো, রান্নাঘরে। এখানকার চেয়ে ভাল।
মেয়েটার পিছু পিছু সিঁড়ির পাশ কাটিয়ে এল কিশোর। রান্নাঘরটা ভালই। বোদ আসছে। পুরানো আমলের একটা স্টোভে পানি ফুটছে। চেহারাটাই প্রাচীন, জিনিসটা আধুনিক, ইলেকট্রিক হীটার।
দুটো জানালার মাঝের দেয়াল ঘেঁষে রাখা হয়েছে টেবিল। ওখানে চেয়ারে বসতে বলল কিশোরকে বেটি। কিশোরকে কোক বের করে দিল সে। নিজের জন্যে চা ঢেলে নিল।
বেটি কাজ করছে, আর চুপ করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে কিশোর। মেঝে ছুঁয়ে যাওয়া গাউনই পরেছে। কালে ফিতে দিয়ে চুল বাঁধা। তার মনে হলো, বাড়িটার সঙ্গে মানানোর জন্যেই বুঝি এ রকম করে কাপড় পরেছে মেয়েটা।
সত্যি, শুরু করল কিশোর। মিসেস লেসিং খুব ভাল। আপনাকে থাকতে দিয়েছেন।
হ্যাঁ। আসলেই ভাল।
তার সঙ্গে পরিচয় হল কি করে?
একটা বিউটি পারলারে।
পারলারটার নাম?
গোল্ডেন ড্রীম।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। চেনে। রকি বীচেই ওটা।
কাজকর্ম এখনও তেমন শিখতে পারিনি, মেয়েটা বলতে থাকল। কাটতে গিয়ে মিসেস লেসিঙের চুল নষ্ট করে ফেলেছিলাম। অনেকেই এ রকম করে অবশ্য। শিক্ষানবিস অনেক আছে ওখানে। অভিনেত্রী হতে চায় ওরা। যাই হোক, মিসেস লেসিং কিছু বলেননি আমাকে। অভিজ্ঞ একজন বিউটিশিয়ান এসে তখন তার চুল ঠিক করে দিয়েছিল। নিয়মিতই তিনি ওখানে যেতেন। কথা হত আমার। সঙ্গে। হপ্তা দুই আগে আমাকে বললেন, তিনি কিছুদিনের জন্যে ইউরোপে। যাচ্ছেন। হাউসকীপার একা থাকতে ভয় পায়। আমি চাইলে তার বাড়িতে থাকতে পারি। রাজি হয়ে গেলাম।
ভাল করেছেন। থাকাখাওয়ার জায়গা হয়ে গেলে সুবিধে। আপনি নিশ্চয় অভিনয় প্র্যাকটিস করার অনেক সুযোগ পাচ্ছেন।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইল মেয়েটা। তার মনের কথাটা কি করে বুঝে ফেলল ভেবে অবাক হয়েছে। লুই গনজাগা বলল তোমরা নাকি বেশ চিন্তায় আছ।
দারোয়ান?
হ্যাঁ। সতর্ক হয়ে কথা বলছে বেটি। কিশোর কে, কতটা জানে তার সম্পর্কে, না জেনে সব কথা ফাঁস করতে চায় না।
ডলির ছবিটা বের করল কিশোর। টেবিলে রেখে ঠেলে দিল বেটির দিকে।
একবার ছবিটা দেখল মেয়েটা। কিছু বলল না। ঘুরে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল।
ডলি, কিশোর বলল। তাহলে ধরে নিতে পারি…
বার বার আমাকে ওই নামে ডাকছ কেন? রাগ করে বলল মেয়েটা। আমি বেটি। বেটসি অ্যারিয়াগো।
অভিনেত্রীরা ওরকম গালভরা নামই বেছে নেয়।
তাতে তোমার কি? কে তুমি?
আমাকে আর আমার দুই বন্ধুকে অনুরোধ করেছেন আপনার বাবা-মা, আপনাকে খুঁজে বের করে দিতে। সাগর সৈকতে পাওয়া ব্যাগটার কথা জানাল। কিশোর। সারা রাত গাড়ি চালিয়ে আমাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন তাঁরা। আপনার মা খুব কাঁদছিলেন।
ওদেরকে তো আমি বলেছি আমি ভাল আছি। চিৎকার করে উঠল ডলি।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। যাক, স্বীকার করল এতক্ষণে! আসলে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা দরকার ছিল আপনার। তাহলেই আর দুশ্চিন্তা করতেন না।
যোগাযোগ! জোর করে ধরে নিয়ে যাবে তাহলে!