রাস্তার দিকে তাকাল তিন গোয়েন্দা। রকি বীচ পুলিশের গাড়িটা চিনতে অসুবিধে হলো না। মোড় নিয়ে চেশায়ার স্কোয়্যারে ওঠার গলিতে পড়ল। উঠে আসতে লাগল ওপরে।
বাড়ির ভেতরে তীক্ষ্ণ চিৎকার করে উঠল কেউ। রাগ আর ভয় মেশানো চিৎকার।
অ্যাই! অ্যাই! বলে চেঁচিয়ে উঠল রবিন।
দারোয়ানের ছোট ঘর থেকে লাফ দিয়ে বেরিয়ে এল প্রহরী। বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে দৌড়ে আসা লোকটার পথরোধ করে দাঁড়াল। গাঢ় রঙের শার্ট পরনে। একটা মোজা টেনে দিয়েছে মাথার ওপর, যাতে চেহারাটা চেনা না যায়। তবে মাথায় কালো চুল, এটা গোপন করতে পারল না।
ছুটে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল লোকটা। ঝট করে পা বাড়িয়ে দিল প্রহরী। তৈরিই ছিল লোকটা। পা-টা এড়িয়ে গিয়ে এক ঘুসিতে চিৎ করে ফেলল। প্রহরীকে।
মুসাও আটকাতে গেল ওকে। প্রচণ্ড ঘূসি এসে লাগল মুখে। তার মনে হলো হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মারা হয়েছে। বোঁ করে উঠল মাথা। রাস্তার ওপরই বসে পড়ল।
রবিন আর কিশোর কিছু করার আগেই ছুটে চলে গেল লোকটা। লাফাতে লাফাতে গিয়ে ঢুকল পাহাড়ের ঢালের ঝোপঝাড়ের ভেতর।
০৬.
ঘ্যাঁচ করে এসে গেটের কাছে ব্রেক কষল পুলিশের গাড়ি। লাফিয়ে গাড়ি থেকে নামল দুজন অফিসার, ছুটল লোকটাকে ধরার জন্যে। আরেকটা গাড়ি উঠে এল। ওপরে। আরও দুজন অফিসার নামল। দারোয়ানকে উঠতে সাহায্য করল একজন। আরেকজন ঝুঁকল মুসার ওপর। বেশি লেগেছে?
দাঁত বোধহয় বারো-চোদ্দটা খসে গেছে।
টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল মুসা। দারোয়ানের ঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। এই সময়ে চোখে পড়ল মেয়েটাকে। সেই লম্বা ঝুলওয়ালা স্কার্ট আর দোমড়ানো ব্লাউজ পরা। হাঁপাতে হাঁপাতে এসে পুলিশকে বলতে লাগল, জোর করে ঢুকল!…আমি সবে বাড়িতে এসেছি।… দোতলায় উঠে হলের দিকে যাচ্ছি, এই। সময় টের পেলাম কেউ আছে!
সাদা হয়ে গেছে মেয়েটার মুখ। গলা কাঁপছে। পায়ে ব্যথা পেয়েছে দারোয়ান। খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে বসল তার ঘরের সামনে রাখা চেয়ারে।
কোন বাড়িটায়? জিজ্ঞেস করল অফিসার। কোথায় থাকো তুমি?
ছোট পার্কটার দিকে দেখাল মেয়েটা। তারপর হঠাৎ করেই কাঁদতে শুরু করল।
লেসিঙের বাড়ি, হাত তুলে দেখিয়ে বলল দারোয়ান। ওইটা। এগারো নম্বর। পার্কের ওধারের ওই যে বাড়িটা।
মাথা ঝাঁকাল অফিসার। সঙ্গীকে নিয়ে গিয়ে উঠল আবার গাড়িতে। মেয়েটা দাঁড়িয়েই আছে। ডিকসনদের দেয়া ছবির মেয়েটার চেয়ে এই মেয়েটা রোগী, তবে চোখের রঙ মিলে যাচ্ছে। ডালিয়া ডিকসনই? নাকি প্রায় একই রকম দেখতে অন্য কোন মেয়ে?
খানিক বাদেই ফিরে এল পুলিশের গাড়িটা। লোকটার পিছু নিয়েছিল যে, দুজন অফিসার, তারাও ফিরে এল। হাঁপাচ্ছে। কপালে ঘাম। যে অফিসার মেয়েটার সঙ্গে কথা বলেছিল, সে নেমে আবার বলল, এখন একটু ভাল লাগছে, না? আমাদের সাহায্য করতে পারবে? কিছু চুরিটুরি গেল কিনা দেখা দরকার।
ক্লান্ত ভঙ্গিতে ধপ করে বসে পড়ল মেয়েটা।
ঠিক আছে, ঠিক আছে, হাত নেড়ে বলল অফিসার। অত তাড়াহুড়া নেই। জিরিয়ে নাও। পুরো ঘটনাটা খুলে বলতে পারবে?
হলের দিকে যাচ্ছিলাম, মেয়েটা বলল। এই সময় মনে হলো পেছনে কেউ আছে। ফিরে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই। তখন মনে হলো, শোবার ঘরে শব্দ হয়েছে। তারপর…
হ্যাঁ হ্যাঁ, বলো।
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল মেয়েটা। ভয় পেয়ে গেলাম। যদি চোরটোর হয়? মিসেস লেসিঙের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলাম। আমার গলা ও শুনে ফেলতে পারে, এ জন্যে রেডিওটা জোরে চালিয়ে দিয়ে পুলিশকে ফোন করলাম।
বুদ্ধিমানের কাজ করেছ। ওসব সময়ে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হয়। তারপর?
তারপর আর কিছু না। পুলিশের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম। সাইরেনের শব্দ শুনে পালানোর চেষ্টা করল লোকটা। ওর পায়ের আওয়াজ শুনে মাথা খারাপ হয়ে গেল আমার, পালাতে দিতে চাইলাম না। সিঁড়িতে গিয়ে জাপটে ধরলাম। ওকে।
এটা বোকামি হয়ে গেছে। লোকটা কি করল?
ঝাড়া দিয়ে আমাকে ফেলে দিয়ে দৌড় দিল।
ভাগ্যিস ছুরিটুরি মারেনি। ওরকম বোকামি আর করবে না।
উঠে দাঁড়াল মেয়েটা। চলুন। এখন যেতে পারব।
দারোয়ান বলল, তোমার সঙ্গে কারও থাকা উচিত। বন্ধু-বান্ধব কেউ নেই? খবর দাও না।
মাথা নাড়ল মেয়েটা। আমার বন্ধুরা সব শহরের বাইরে।
এগিয়ে গেল কিশোর। ডলি, আপনার মাকে খবর দিতে পারি আমরা।
থমকে গেল মেয়েটা। তারপর আস্তে করে ঘুরে তাকাল কিশোরের দিকে। ডলি? আমার নাম ডলি নয়। বেটসি। বড় জোর বেটি বলতে পারো।
ওকে বিরক্ত কোরো না! কড়া গলায় বলল দারোয়ান। এমনিতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে মেয়েটা। ভয়ে কাবু।
পুলিশের গাড়িতে করে চলে গেল বেটি। একজন অফিসার তিন গোয়েন্দার কাছ থেকে ঘটনাটার বিবরণ লিখে নিতে লাগল।
মুসার চোয়ালের বেগুনী হয়ে যাওয়া জায়গাটার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়তে লাগল দারোয়ান। ব্যাটার গায়ে জোর আছে। তোমারই যখন এ অবস্থা করে দিয়েছে…নাহ, আজকাল আর শান্তি নেই। এত বড় বাড়িতে মেয়েটার একা থাকা একেবারেই উচিত না।
বাড়িটার মালিক কে? জিজ্ঞেস করল রবিন। কোথায় থাকে?
মিসেস আরনি লেসিং। কয়েকদিন আগে ইউরোপ গেছে। কয়েক হপ্তা হল এসেছে বেটি, মিসেস লেসিঙের সঙ্গে আছে। তিনি খুব ভাল। ছেলেমেয়েদের কষ্ট সইতে পারেন না। কেউ অসুবিধেয় আছে দেখলেই তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। বেটি বোধহয় কোথাও একটা পার্টটাইম কাজটাজ করে। এখানে মিসেস লেসিঙের বাড়িঘর দেখাশোনা করে যে মহিলা, তাকে সাহায্য করে। বাড়িতে কি একটা জরুরী কাজ পড়ে যাওয়ায় কাল থেকে আসছে না মহিলা। ফলে বেটি একা হয়ে গেছে।