খাবারের দিকে হাত বাড়িয়েই থমকে গেল কিশোর। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, পেয়েছি! তুড়ি বাজাল। ওই মেয়েটাই!
কোন মেয়েটা? বুঝতে পারল না মুসা।
ডলি। ডালিয়া ডিকসন! কোন সন্দেহ নেই।
লাফিয়ে উঠে দৌড় দিল কিশোর। হ্যাঁচকা টানে দরজা খুলে ছুটে বেরোল। পিজা শ্যাকের সামনের পার্কিং স্পেসে এসে দাঁড়িয়ে তাকাল ডানে বাঁয়ে। তারপর মেইন রোডের দিকে। দুদিক থেকেই চলাচল করছে গাড়ি। ওপাশে রাস্তার বাইরে। দাঁড়িয়ে-বসে রয়েছে কয়েকজন ভবঘুরে। কিন্তু পুরানো পোশাক পরা মেয়েটা নেই।
.
০৫.
এই শুনছ! এই ভাই, খেলাটা একটু থামাবে তোমরা? জরুরী কথা বলতাম। খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বলল কিশোর। আবার এসে পিজা শপে ঢুকেছে। খেলা থামিয়ে ফিরে তাকাল সবাই। অবাক হয়েছে। রান্নাঘরে যাচ্ছিল মোটা মহিলা, থমকে দাঁড়াল।
যে মেয়েটা এইমাত্র বেরিয়ে গেল, বলল কিশোর। তাকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি আমরা।
পরস্পরের দিকে তাকাতে লাগল খেলোয়াড়েরা। কারও কারও চোখে সন্দেহ ফুটেছে এখন। অস্বস্তি বোধ করছে। একজন জানতে চাইল, কেন?
ডলির ছবি বের করে দিল কিশোর। হাতে হাতে ঘুরতে লাগল ওটা। বলল, ওর বাবা দিয়েছেন ছবিটা। খুঁজে বের করতে অনুরোধ করেছেন। ফ্রেনসোতে বাড়ি। দুই মাস আগে বেরিয়েছে, আর ফিরে যায়নি।
কিন্তু ওর বাবার নাম তো ডিকসন নয়, বলল আরেকটা ছেলে। ওর নামও ডলি নয়।
হয়ত বানিয়ে অন্য নাম বলেছে, রবিন বলল।
অনেক বেশি ডিটেকটিভ ছবি দেখো তোমরা, বলল একটা মেয়ে।
গরম হয়ে বলল মুসা, ছবি দেখলেই ডিটেকটিভ হয়ে যায় নাকি! খালি : এককথা। বোঝে না শোঝে না, একটা বলে দিলেই হলো।
তার ধমকে কাজ হলো। অস্বস্তিতে পড়ে গেল ছেলেমেয়েরা। আরেকটা মেয়ে বলল, ওই মেয়েটা বাড়ি থেকে পালায়নি। এদিকেই থাকে।
চেনো?
চিনি।
দুই মাসের বেশি? কিশোর জানতে চাইল
জবাব দিতে পারল না মেয়েটা।
ঘন ঘন পোশাক পাল্টায়, তাই না? আবার বলল কিশোর। চুলের রঙও বদলায়।
চুপ হয়ে গেছে সবাই। একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে খেলোয়াড়েরা। জবাব দিতে চাইছে না। ভাবছে বোধহয়, এই তিনজন কারা?
তামাটে রঙের একটা গাড়ি এসে থামল বাইরে। ধূসর চুলওয়ালা একজন। লোক ঢুকলেন। কি ব্যাপার, সবাই এত চুপচাপ? কিছু হয়েছে নাকি?
না, মিস্টার জেনসেন, এগিয়ে এল ওয়েইট্রেস। এই ছেলেগুলো ওদের একজন বন্ধুকে খুঁজতে এসেছে।
ও, বলে কাউন্টারের ওপাশে চলে গেলেন মিস্টার জেনসেন। ক্যাশ রেজিস্টার খোলা এবং টাকা গোনা দেখেই বোঝা গেল তিনি ম্যানেজার।
অবশেষে কিশোরকে বলল একটা মেয়ে, ওই মেয়েটা কোথায় থাকে আমি জানি। মেইন রোড ধরে গেলে পুরানো একটা হাউজিং কমপ্লেক্স পাবে, চেশায়ার স্কোয়্যার, ওখানে। নাম বেটসি।
ভাল নাম? রবিন জানতে চাইল।
বেটসি অ্যারিয়াগো।
নাক টানল কিশোর। নামটা ঠিক তো?
না হওয়ার তো কোন কারণ দেখি না, জবাব দিল একটা ছেলে। আর বাড়ি থেকে পালালেই কেউ নাম বানিয়ে বলে না। কেন বলবে? বাড়ি থেকে বেরোনো অপরাধ না। বেরিয়েছে যে তারও নিশ্চয় কোন কারণ আছে। হয়ত ওর মা দুর্ব্যবহার করত…
ও অভিনেত্রী হতে চায়, বাধা দিয়ে বলল মুসা। পালিয়েছে সে জুন্যে। কেউ তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেনি। অন্তত আমাদের জানা নেই।
বেশ, ছেলেটা বলল। ওর সঙ্গে আবার দেখা হলে তোমাদের কথা বলব। ঠিক আছে?
দ্বিধা করল কিশোর। তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে দিয়ে বলল, এই নাম্বারে ফোন করতে বোলো, প্লীজ।
কার্ডের দিকে তাকিয়ে হাসল ছেলেটা। বাহু, গোয়েন্দা। জিনসের প্যান্টের পকেটে রাখতে রাখতে বলল, বলব।
ওদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে দুই সহকারীকে নিয়ে আবার কাউন্টারে ফিরে এল কিশোর।
রান্নাঘরের দিকে রওনা হলো ওয়েইট্রেস মহিলা। পেছনে চললেন ম্যানেজার। ছেলেমেয়েরা ফিরে গেল তাদের খেলায়।
কিশোরের দিকে কাত হয়ে নিচু স্বরে বলল রবিন, মেয়েটা ফোন করবে বলে মনে হয় তোমার?
না, পিজা চিবাতে চিবাতে জবাব দিল কিশোর। তার ফোনের অপেক্ষায় বসেও থাকব না। চেশায়ার স্কোয়্যার আমরাও চিনি। জলদি খাও।
.
চেহারা পুরানো হলেও এখন আর পুরানো নেই কমপ্লেক্সটা। অনেক সংস্কার করা। হয়েছে। পাহাড়ের ঢালে দাঁড়িয়ে আছে, সাগরের দিকে মুখ। নতুন করে রঙ করা হয়েছে। চকচক করছে পেতলের জিনিসগুলো। নতুন লনে নতুন ফুলের বেড তৈরি হয়েছে।
যে লোক সংস্কার করেছেন, তিনি নিজেকে অতিপ্রাকৃত ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করেন। রসিক লোক। সাংবাদিকদের কাছে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ভবিষ্যতের প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধাঁধায় ফেলার জন্যেই তিনি একাজ করেছেন। মাটি খুঁড়ে বের করবে ওরা আঠারোশো নব্বই সালের বাড়ি, তিনি বলেছেন। দেখবে ভেতরে বোঝাই হয়ে আছে উন্নত কারিগরির যন্ত্রপাতি, যেগুলো তৈরি হয়েছে। আরও একশো বছর পরে। দ্বিধায় পড়ে যাবে ওরা।
ডলি নামের কেউ থাকে না এখানে, পাহারাদার বলল।
তাহলে বেটসি অ্যারিয়াগো? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
সতর্ক হলো লোকটা। তোমাকে চেনে?
নিশ্চয়ই।
তোমার নাম?
কিশোর পাশা। ও রবিন মিলফোর্ড, আর ও মুসা আমান। ফ্রেনসোর মিস্টার ডিকসন পাঠিয়েছেন, আমাদেরকে। বেটসির সঙ্গে জরুরী কথা আছে আমাদের।
দ্বিধা করল প্রহরী। টেলিফোনে হাত।
বলেই দেখুন না, খুব খুশি হবে। মিস্টার ডিকসন, মনে রাখবেন। কিন্তু কিশোরের কথা শুনছে না লোকটা। নিচের মেন রোডে পুলিশের সাইরেন বাজছে। দ্রুত ছুটে আসছে।