পরদিন সকালে বাসে করে হলিউডে চলে এল তিনজনে। একটা তালিকা তৈরি করে নিয়ে এসেছে কিশোর। এক নম্বর নামটা থেকে শুরু করল। প্রথমেই রিসিপশনিস্টের সঙ্গে দেখা। রোগাটে এক মহিলা। ওদের কথা শুনতেই চাইল না। অবশেষে জানিয়ে দিল, মক্কেলদের কথা বাইরের লোকের কাছে বলার নিয়ম নেই।
সে আপনাদের মক্কেল না-ও হতে পারে, মরিয়া হয়ে বলল মুসা।
তাহলে আমাদের কাছে এসেছ কেন? আবার টাইপিঙে মন দিল মহিলা।
দ্বিতীয় এজেন্সীটাতে গোমড়ামুখো মহিলা কড়া গলায় বলল, জানলেও বলতাম না। লজ্জা করে না? এই বয়সেই অভিনেত্রীদের পিছে লেগেছ?
লাল হয়ে গেল কিশোরের মুখ। পিছে লাগিনি। তার বাবা-মা আমাদেরকে পাঠিয়েছেন তাকে খুঁজে বের করতে…
ও, বাড়ি থেকে পালিয়েছে। তাহলে পুলিশের কাছে যায় না কেন? তিনটে ছেলেকে পাঠায়। যত্তসব! ওসব শয়তান ছেলেমেয়ের খোঁজ রাখার দায়িত্ব নিইনি আমরা। যেতে পার।
তৃতীয় এজেন্সীটাতে অতটা খারাপ ব্যবহার করল না রিসিপশনিস্ট। কিশোরকে চিনতে পেরে চিৎকার করে উঠল, আরে, মোটুরাম না! কি কাণ্ড দেখো
ছেলেবেলায় একটা কমেডি সিরিজে অভিনয় করেছিল কিশোর। সেটাতে তার। নাম ছিল বেবি ফ্যাট সো। নামটাকে ঘৃণা করে সে। এবং যে ওই নামে তাকে ভাকে, তাকেও।
ডলির ছবির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল মহিলা। ও রকম চেহারার অনেকেই আছে। কে ও? বোন? বন্ধু?
তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড মহিলাকে দিয়ে কিশোর জানাল, ওর নাম ডালিয়া ডিকসন। ওকে খুঁজে বের করে দেয়ার জন্যে আমাদেরকে অনুরোধ করেছে। ওর বাবা-মা। দুমাস আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছে।
মনে হয় অহেতুক সময় নষ্ট করছ। ওর মত আরও হাজার হাজার ছেলেমেয়ে আছে। তবে সিনেমায় ঢোকার চেষ্টা করে থাকলে খোঁজ মিলতেও পারে। টেলিভিশনের জন্যে একটা সিরিজ হচ্ছে, রিচ ফর আ স্টার। তার অডিশনে যোগ দিতে পারে। ওখানে অ্যামেচারদেরকে ডাকা হয়েছে।
যে স্টুডিওতে অডিশন হবে তার ঠিকানাটা দিল মহিলা। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এল ছেলেরা। স্টুডিওতে পৌঁছে দেখল গেটের সামনে লাইন, লম্বা হয়ে চলে গেছে, সেই ব্লক পেরিয়ে তার পরের ব্লকের কাছে গিয়ে শেষ হয়েছে।
সোজা গেটের দিকে এগোল কিশোর। চিৎকার করে উঠল লাইনে দাঁড়ানো ছেলেমেয়েরা। প্রতিবাদের ঝড় উঠল।
কিশোরের হাত চেপে ধরল মুসা। এভাবে পারবে না। অন্য কোন উপায় বের করতে হবে। এ লাইনে দাঁড়ালে এ জনমে কোনদিন ঢুকতে পারব না।
বাস স্টপেজের একটা বেঞ্চে বসে পড়ল কিশোর। উপায় তো একটা বের করতেই হবে।
তিনজনেই ভাবছে। উজ্জ্বল হলো রবিনের মুখ। এখানে ঢোকা যাবে না। তার চেয়ে আরেক কাজ করতে পারি আমরা। ট্যালেন্ট এজেন্টদের সাহায্য নিতে পারি। ডলির ছবি দিয়ে হ্যাঁন্ডবিল ছেপে ডাকে পাঠিয়ে দেব ওদের কাছে। এ শহরে যতগুলো স্টুডিও আর এজেন্ট আছে সবার কাছে পাঠাব। অনুরোধ থাকবে, এই মেয়েটিকে কেউ দেখে থাকলে দয়া করে তিন গোয়েন্দাকে একটা ফোন করবেন। ঠিকানা এবং ফোন নম্বর দিয়ে দেব আমাদের।
সাড়া দিল না কিশোর।
আমার কিন্তু বেশ ভাল মনে হচ্ছে, আবার বলল রবিন।
আমারও, তার সঙ্গে একমত হলো মুসা। সারা হলিউড চষে বেড়াতে হবে না। যে সব লোক আমাদের সঙ্গে কথাই বলতে চায় না তাদের কাছে গিয়ে ধরনা। দিতে হবে না।
এর চেয়ে ভাল আর কোন উপায় আপাতত কিশোরেরও মাথায় এল না। অগত্যা আবার কি বীচে ফিরে চলল বাসে করে। ইয়ার্ডে ফিরে দেখল, রোভার একা। ভেনচুরাতে মাল কিনতে গেছেন রাশেদ পাশা আর মেরিচাচী। বোরিসকেও নিয়ে গেছেন। কিশোরকে দেখেই রোভার বলল, বাজারে যেতে পারেননি আজ ম্যাম। ফ্রিজে কিছু নেই, বলে গেছেন, খিদে পেলে পয়সা বের করে নিয়ে গিয়ে পিজাটিজা কিছু কিনে খেতে।
খুব ভাল, খুব ভাল, খুশি হয়ে উঠল মুসা। তাই খাব। দেরি করছি কেন?
দাঁড়াও, টাকা নিয়ে আসি, কিশোর বলল। ভালই হল। খেতে খেতে হ্যাঁণ্ডবিলে কি লিখতে হবে সেটার একটা খসড়া করে ফেলতে পারব।
সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল তিনজনে। রকি বীচে কোস্ট, হাইওয়ের পাশের পিজা শ্যাকটা বেশ জনপ্রিয়। ওখানে গিয়ে ভিড় করে কিশোর আর তরুণেরা। পিজা খায়, ভিডিও গেম খেলে, মিউজিক শোনে, আর বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ জমায়।
তিন গোয়েন্দা ঢুকে দেখল, ভিডিও গেম খেলছে কয়েকজন। কালো চুলওয়ালা হাসিখুশি একটা মেয়ে খেলছে আর মাথা ঝাঁকিয়ে খিলখিল করে হাসছে।
বড় সাইজের তিনটে পিজার অর্ডার দিয়ে কাউন্টারের সামনে বসে অপেক্ষা করতে লাগল ওরা। হুল্লোড় করে উঠল ভিডিও গেম প্লেয়াররা।
মেয়েটা মনে হয় ভাল খেলে, রবিন মন্তব্য করল।
খেলা শেষ। ফিরে তাকাল মেয়েটা। তারপর উঠে এল টুল থেকে। দরজার দিকে এগোল। তাকিয়ে রয়েছে তিন গোয়েন্দা। মেয়েটার স্কার্টের ঝুল এত বেশি। প্রায় মাটি ছুঁই ছুঁই করছে। পুরানো ছাটের একটা ব্রাউজ পরেছে, সামনের দিকটা দোমড়ানো। খুদে একটা ঘড়ি বসানো রয়েছে বুকের একপাশে। কানে দুল। সব কিছু মিলিয়ে তাকে এ যুগের মেয়ে লাগছে না, মনে হচ্ছে একশো বছর আগের। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওদের দিকে তাকিয়ে হাসল সে। বেরিয়ে গেল।
এ রকম পোশাক পরেছে কেন? অবাক হয়ে বলল রবিন।
কুমড়োর মত মোটা এক মহিলা বেরিয়ে এল রান্নাঘর থেকে। হাতে ট্রে। খাবারে বোঝাই। তিনটে পিজা ছেলেদের সামনে নামিয়ে রেখে কোকা কোলা। আনতে গেল।