কি নাম বলল? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
শেলি টেনার।
হু। ছবিটার নায়িকার নাম।
আংটিটা নেয়ার প্রয়োজন বোধ করল না কিশোর। নিল না। পিকআপে ফিরে এসে দেখল অস্থির হয়ে উঠেছে বোরিস। বার বার ঘড়ি দেখছে। দেরি হয়ে যাচ্ছে বোধহয়।
তোমাদের হলো? জিজ্ঞেস করল সে।
আর একটা দোকান, জবাব দিল কিশোর। হলিউড বুলভারে যেতে হবে।
দেরি করলে রেগে যাবেন মিসেস পাশা, বলল বটে, তবে গাড়ি নিয়ে চলল বুলভারে। এই রাস্তাটা আমার পছন্দ না।
কেন, সেটা জানা আছে গোয়েন্দাদের। গলিটা নোংরা। দুধারের বাড়িগুলো জীর্ণ, মলিন। মানুষগুলোও তেমনি। হলিউডের চাকচিক্যের ছিটেফোঁটাও নেই এখানে।
যে দোকানটা খুঁজছে কিশোররা, তার এক ব্লক দূরে মোড়ের কাছে গাড়ি রাখার জায়গা আছে। নেমে গেল ছেলেরা। স্যুভনির আর হলিউডের ম্যাপ বিক্রি করে ওরকম একটা দোকান পার হয়ে আরও দুটো দরজার পর বন্ধকী দোকানটা। আগে আগে চলেছে মুসা।
অহেতুক সময় নষ্ট, বিড়বিড় করে বলল সে। দোকানের দরজায় পা দিল।
হঠাৎ চেঁচামেচি শোনা গেল দোকানের ভেতর। ছুটে বেরোল একটা লোক। মুসার গায়ে এসে পড়ল। কনুইয়ের গুঁতো মেরে তাকে ফেলে দিয়েছিল আরেকটু হলেই।
অ্যাই অ্যাই! করে চেঁচিয়ে উঠল মুসা।
ঘুরে দাঁড়াল লোকটা। তাকিয়ে রয়েছে মুসা। কালো মুখ ঠোঁটের দুই কোণ থেকে বেরিয়ে রয়েছে শ্বদন্ত। নাকের ফুটো বড় বড়। চোখ প্রায় দেখাই যায় না গভীর কোটরের অনেক ভেতরে যেন লুকিয়ে রয়েছে। শয়তানী ভরা চাহনি।
আবার চিৎকার করার জন্যে মুখ খুলল মুসা। শব্দ বেরোল না। লোকটার হাতের দিকে তাকাল। কালো, রোমশ থাবা। বড় বড় নখ বেরিয়ে আছে আঙুলের মাথা থেকে।
দোকানের ভেতরে চিৎকার শোনা গেল। ছুটতে শুরু করল অদ্ভুত লোকটা।
আবার চিৎকার করে উঠল দোকানের ভেতরের লোকটা, ধর! ধর!
গলির দিক থেকে চেঁচিয়ে উঠল এক মহিলা।
সুভনিরের দোকানের ভেতরে দুঃস্বপ্নের মত হারিয়ে গেল কিম্ভুত মানুষটা। আবার শোনা গেল চেঁচামেচি।
এতক্ষণে হুঁশ ফিরল যেন মুসার। দৌড়ে গেল স্যুভনিরের দোকানে। দেরি করে ফেলেছে। পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে চলে গেছে লোকটা।
বন্ধকীর দোকানে ফিরে এল তিন গোয়েন্দা। দোকানদার কাঁপছে এখনও। কিশোরের প্রশ্নের জবাবে সে বলল, ডাকাতি করতে এসেছিল! পালাল!
সাইরেন শোনা গেল গলির মাথায়। ভেতরে এসে ঢুকল একটা পুলিশের গাড়ি। ওটা দোকানের সামনে এসে থামতে না থামতেই পেছনে এসে দাঁড়াল, আরেকটা। ভিড় জমল। দোকানের মালিকের সঙ্গে বেরেলি তিন গোয়েন্দা। পাগলের মত হাত নাড়ছে লোকটা।
জনতাকে পিছে হটিয়ে দিল একজন পুলিশ অফিসার। আরেকজন জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেল দোকানদারকে। হাত তুলে মুসাকে দেখিয়ে দিল লোকটা। তৃতীয় আরেকজন অফিসার এসে প্রশ্ন করল মুসাকে, তুমিই লোকটাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলে?
মাথা ঝাঁকাল মুসা।
কি হয়েছিল?
দ্বিধা করল মুসা। বলল, বললে তো বিশ্বাস করতে চাইবেন না। পাগল ভাববেন আমাকে।
বলো।
লোকটা…লোকটাকে মানুষ মনে হল না। দানব!
ধৈর্য হারাল না অফিসার। গরিলা? না অন্য কোন ধরনের দানব?
গরিলা-টরিলা নয়। কি বলব?…মায়ানেকড়ের মত লাগল। সিনেমাতে যেগুলো দেখায়।
হুম! নোটবুক বের করল অফিসার। তা মায়ানেকড়েটা কতটা লম্বা হবে?
প্রায় আমার সমান।
কিশোরের দিকে ফিরল অফিসার। তুমি কি জিনিস দেখেছ?
কিশোর জানাল, সে-ও মায়ানেকড়েই দেখেছে। তারপর বলল, অবাক লাগছে না তো আপনার?
হাসল অফিসার। গত হপ্তায় একটা পেট্রল স্টেশনে এরকম ঘটনা ঘটেছে। গরিলা সেজে এসেছিল একজন।
হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে এতক্ষণে, বলে উঠল বন্ধকী দোকানের মালিক। কাগজে দেখেছি। সবুজ মুখওয়ালা মানুষের কথাও পড়েছি। ঘাড় থেকে নাকি কি একটী বেরিয়ে থাকে। সান্তা মনিকায় কি যেন করেছিল।
অফিসার হাসল। এ শহরে কোন কিছুই স্বাভাবিক নয়।
পুলিশ চলে গেলে তিন গোয়েন্দাকে বলল দোকানদার, আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলে?
ডলির কথা বলল তাকে কিশোর। দোকানে ঢুকে রেজিস্টার বের করল লোকটা। তারপর ড্রয়ার খুলে ধনুকের মত, দেখতে একটা সোনার পিন বের করল।
এ রকম একটা জিনিস বন্ধক রাখতে আসে কেউ, বল? লোকটা বলল। খারাপ লাগে না? ইস্কুল থেকে গ্র্যাজুয়েশন নেয়ার পর সাধারণত মানুষ এ ধরনের জিনিস উপহার পায়।
যে মেয়েটা বন্ধক রাখতে এসেছিল তার চেহারা মনে আছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর। দেখুন তো ও নাকি?
কিশোরের বারিয়ে ধরা ডালিয়া ডিকসনের ছবিটা দেখল দোকানি। হতে পারে। কড়া মেকআপ করে এসেছিল। চুলের রঙও আরেকটু হালকা ছিল। তবে এ-ই হতে পারে।
আরেকবার রেজিস্টার দেখল লোকটা। জানাল পিনটা বন্ধক রাখতে এসেছিল এনভি নিউম্যান নামে একটা মেয়ে।
আরেকজন অভিনেত্রীর নাম, গুঙিয়ে উঠল কিশোর। নাহ, কোন পথ দেখতে পাচ্ছি না।
.
০৪.
সেদিন বিকেলে হেডকোয়ার্টারে মিলিত হলো তিনজনে। হাত-পা ছড়িয়ে মেঝেতে বসে পড়েছে মুসা। প্রশ্ন তুলল, এ রকম বহুরূপী একটা মেয়েকে কি করে খুঁজে বের করব আমরা?
একটা মুহূর্ত কেউ কোন জবাব দিতে পারল না। তারপর কিশোর বলল, সিনেমায় ঢোকার চেষ্টা করছে ডলি। কাজেই দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকতে পারে। ওদের কাছে গিয়ে খোঁজ নিতে পারি আমরা।
হ্যাঁ, চেষ্টা করতে দোষ কি? খুব একটা আশাবাদী মনে হল না মুসাকে।