ড্রাকুলা? ভুরু কোঁচকালেন লেখক। ওই কাহিনী নিয়ে আর কত ছবি। বানাবে? বানিয়ে বানিয়ে পচিয়ে ফেলা হয়েছে।
হাসল মুসা। সে জন্যেই কেউ ওদেরকে টাকা দিতে রাজি হয়নি।
বাই চান্স, আগের কথার খেই ধরল কিশোর, মিস্টার জেনসেনের খেলনার কোম্পানিতে শিপিং ক্লার্কের একটা চাকরি পেয়ে গেল রোজার। খেলনার গুদামে তালা দেয়া ছোট একটা ঘর আছে, যেটাতে আমরা ঢুকতে পারিনি। ওটার প্রতি কৌতূহল বাড়তে লাগল ওর। একদিন জিনসেনের ড্রয়ার থেকে চাবি চুরি করে। ঢুকে পড়ল ওই ঘরে। দেখে আলমারিতে অনেক টাকা। বেশ কিছু বাণ্ডিল হাতিয়ে নিল সে। কিন্তু সরায় কি করে? শেষে এক বুদ্ধি করল। বড় দেখে একটা খেলনা ভালুকের ভেতরে ভরে ফেলল সেগুলো। ফারের পোশাক বিক্রি করে যে দোকানদার, তার দোকানে আরও খেলনার সঙ্গে চালান করে দিল বিশেষ ভালুকটা। এবং সেদিনই জেনসেনের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেল রোজার।
ফারের দোকানদারের কাছ থেকে ভালুকটা আবার হাতানো দরকার। তাই গিয়ে যেচে পড়ে জোরজার করেই তার দোকানে চাকরি নিল রোজার। কিন্তু সে এতই অকর্মা, ভালুকটা দোকানে পৌঁছার আগেই তাকে বের করে দিল মালিক। খেলনা ভালুকগুলো এল। দোকানে কাজ করে না তখন রোজার, বেছে বেছে যে বের করবে কোনটাতে টাকা ভরেছে, সেই সুযোগ নেই। কাজেই ওই চালানে যে কটা খেলনা এসেছিল সব চুরি করল রোজার আর রিভস। সাধারণ ছুরি হিসেবে দেখানোর জন্যে কয়েকটা ফারের কোটও চুরি করল।
এবারেও ভাগ্য ওদের বিপক্ষে গেল। ওরা চুরি করার আগেই বিশেষ ভালুকটা মিসেস লেসিংকে দিয়ে দিয়েছে দোকানদার। চুরি করা ভালুকগুলো সব খুলেও যখন টাকা পেল না রোজার, মাথায় হাত দিয়ে বসল। খুঁজতে শুরু করল কার কাছে গেছে ভালুকটা। সেটা জানার জন্যেই আরেকবার চুরি করতে ঢুকতে হল দোকানে, কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করার জন্যে।
কত টাকা ছিল ভেতরে? জানতে চাইলো সাইমন।
দশ হাজার ডলার। ওই টাকায় ছবিটা শুরু করতে চেয়েছিল ওরা, মুসা, বলল। ভেবেছিল, পরে যা টান পড়বে, কোনভাবে জোগাড় করে নিতে পারবে।
যাই হোক, আবার বলতে লাগল কিশোর। ওরা জেনে গেল ভালুকটা কোথায় আছে। মিসেস লেসিং তখন বিদেশে। আছে শুধু ডলি। তাকেই পটাতে শুরু করল দুজনে। জেনে গেছে ডলি, সিনেমায় অভিনয় করতে আগ্রহী। তার সঙ্গে খাতির করেছে আসলে মিসেস লেসিঙের বাড়িতে ঢোকার সুযোগের জন্যে, যাতে ভালুকটা বের করে নিয়ে যেতে পারে। ওখানে পেল না। জানতে পারল, ওটা আছে আমাদের কাছে। কাজেই ঢুকল গিয়ে আমাদের ইয়ার্ডে।
দানবের সাজে সেজে আমাদের হেডকোয়ার্টার থেকে ওটা কেড়ে নিয়ে এল,. তিক্ত কণ্ঠে বলল মুসা।
ওরকম সাজা ওদের জন্যে কিছুই না, সাইমন বললেন। বিশেষ করে রোজারের জন্যে। হরর ছবিতে এক্সট্রার অভিনয় করেছে সে। দৈত্যদানবই সেজেছে বেশি। তাই না?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকাল রবিন।
বন্ধকীর দোকানে কেন গিয়েছিল? আরও টাকা লুট করতে?
না, ওরা যায়নি। গেছে আরেকটা পাগল। এই হলিউডে যে কত রকম পাগল আছে। হাত নেড়ে মুসা বলল, আমার তো একেক সময় মনে হয় এখানকার বেশির ভাগ মানুষেরই মাথায় ছিট। লোকটা ছদ্মবেশে গিয়েছিল ভয় দেখিয়ে মজা পেতে। যখন দেখল, লোকে সিটিয়ে যায়, টাকা লুট করার বুদ্ধিটা তখনই মাথায়। এল ওর। কয়েকটা করেছে ওভাবে। রোজার আর রিভস যেদিন ধরা পড়ল, তার পরদিনই ওই ব্যাটাকেও ধরে ফেলেছে পুলিশ।
হাসলেন লেখক। এক মুহূর্ত চুপ করে থাকলেন। তারপর বললেন, আসল কথায় আসি এবার। জেনসেন এত টাকা পেল কোথায়? তোমাদেরকেই বা অনুসরণ করেছে কেন?
পিজা শ্যাকে আমাদেরকে ভালুকটার কথা বলতে শুনেছে, রবিন জানাল। ব্যাপারটা কি ঘটেছে, আন্দাজ করে ফেলল। কারণ আলমারি থেকে যে টাকা চুরি গিয়েছিল, জেনে গেছে তখন সে। কে, কিভাবে চুরি করেছে, বুঝতে পেরেছে আমাদের আলোচনা শুনেই।
পুলিশকে জানাল না কেন?
জানাবে কি করে? সে নিজেই তো চোর, কিশোর বলল।
আমিও সে রকমই কিছু আন্দাজ করছিলাম। তা কোত্থেকে চুরি করেছিল?
গত বছর নভেম্বর মাসে ট্রেজারি থেকে পঞ্চাশ হাজার ডলার চুরি হয়েছিল, জানেন আপনি? কাগজে বেরিয়েছিল।
মাথা ঝাঁকালেন সাইমন।
জেনসেনই সেই টাকা চুরি করেছিল। পুলিশ এতদিন ধরতে পারেনি। সেই টাকা পুঁজি খাঁটিয়ে ড্রাগ আর নানা রকম অবৈধ জিনিসের ব্যবসা করে অনেক কামিয়ে ফেলেছিল। সেগুলো ভরে রেখেছিল আলমারিতে।
হুঁ। তাহলে এই ব্যাপার। তোমাদের পিছু নিয়েছিল নিশ্চয় ভালুকটা কোথায় আছে জানার জন্যে?
হ্যাঁ।
কোথায় এখন? ধরেছে পুলিশ?
না। পালিয়েছে।
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন লেখক। তারপর মুখ তুলে বললেন, রোজার আর রিভসের জন্যে খারাপই লাগছে। বেচারারা! ছবি আর বানাতে পারল না…
দরজা খুলে ঘরে ঢুকল কিম। হাতে বিশাল এক ট্রে। সামনের টেবিলে এনে
নামিয়ে রেখে হেসে বলল, খাঁটি ইংরেজি চা, মিস্টার হ্যানসন। আশা করি আপনার ভাল লাগবে।
প্লেটগুলোর দিকে তাকিয়ে রয়েছে মুসা। বড় বড় কেক, আর একটা বিরাট প্লেটে পুডিং। জিজ্ঞেস করল, এগুলোও কি ইংরেজি?
নিশ্চয়ই। খেয়ে দেখতে পার। ভাল হয়েছে।
হাসল মুসা।
কিশোর আর রবিন হাসতে পারল না। ভয় কাটেনি। কিমকে বিশ্বাস নেই। বলা যায় না, এগুলো খাওয়া শেষ হলেই হয়ত ইঁদুর কিংবা পোকা নিয়ে এসে হাজির হয়ে বলবে, এগুলো যেদেশের খবরই হোক, খাঁটি ইংরেজি পদ্ধতিতে কাবাব করা।