আপনি কি করে জানলেন?
অনুমান। এতদিন ধরে গোয়েন্দাগিরি করছি, হাসলেন লেখক এবং গোয়েন্দা। পেপারে হেডলাইন হয়ে খবর বেরিয়েছে। কাল বিকেল চারটে নাগাদ চলে এসো না? চা খেতে খেতে শোনা যাবে। আজকাল চা খেতে দিচ্ছে কিম।
দ্বিধা করছে কিশোর। কিমকে বিশ্বাস নেই, খাবারের ব্যাপারে।
সত্যি বলছি, কিশোরের ভাব বুঝে বললেন লেখক। চা-ই দেবে। বিশ্বাস। করো।
বেশ। আরও দুজন বন্ধুকে কি আনব?
একজন নিশ্চয় ডালিয়া ডিকসন?র
হ্যাঁ। তবে ডলি আমাকে কথা দিয়েছে, সিনেমায় যোগাযোগ করিয়ে দিতে অনুরোধ করবে না আপনাকে। শুধু দেখা করতে চায়। নাম শুনেছে তো অনেক। হ্যানসনও আপনার ভক্ত। আপনার সব বই পড়েছে।
তাই নাকি? হ্যানসনের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছেটা কিন্তু অনেক দিনের। তোমাদের প্রথম কেসের কাহিনীটা পড়ার পর থেকেই। হাসলেন তিনি। তা। তোমরা তাকে আনবে, না সে-ই তোমাদেরকে নিয়ে আসবে?
কিশোরও হাসল। লাইন কেটে দিয়ে প্রথমে লেসিং হাউসে ডলিকে ফোন। করল, তারপর করল হ্যানসনকে।
পরদিন বিকেলে কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে তিনটেয় হাজির হল হ্যানসন। অবশ্যই রোলস রয়েস নিয়ে। তবে শোফারের ইউনিফর্ম পরে আসেনি। তার বদলে পরেছে খাঁটি ইংরেজের পোশাক। অভিজাত ইংরেজের মত বেশ গম্ভীর চালে বলল, আজ আমি মেহমান। শোফার নই। তাই ভাবলাম, এই পোশাকটাই পরে যাই।
দারুণ লাগছে আপনাকে, হ্যানসন, উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল মুসা। সত্যি, তুলনা হয় না। ডলি কি পরে আসবে বুঝতে পারছি না।
পরবে হয়ত ড্রাকুলার বৌয়ের পোশাক, রবিন বলল। ভেলকি লাগিয়ে দেবে মিস্টার সাইমনকে।
কিন্তু ডলি অবাক করল ওদেরকে, নিরাশও করল। সাধারণ একটা জিনসের প্যান্ট আর সাদা শার্ট পরে এসেছে।
ডলি, ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল মুসা। আজকে আপনি কি সাজলেন?
যা সাজার সেজেছি। অতি সাধারণ আমি, নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল ডলি।
কোস্ট হাইওয়ে ধরে উত্তরে চলল রোলস রয়েস। ভিকটর সাইমনের বাড়িটা দেখা যেতেই সামনে ঝুঁকল ডলি। ভাল করে দেখার জন্যে।
আরে, সত্যিই তো বলেছ তোমরা! সরাইখানাকে বাড়ি বানানো হয়েছে তোমরা যখন বললে, আমি কিন্তু বিশ্বাস করিনি।
বাড়ির সামনে গাড়ি থামাল হ্যানসন। বারান্দায় বেরিয়ে এলেন সাইমন। পেছনে এসে দাঁড়াল কিম, একগাল হাসি নিয়ে। হ্যানসনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। সম্মান জানাল ব্রিটিশ কায়দায়। পরক্ষণেই ছুটে পালাল যেন লজ্জা পেয়ে।
কিম খুব উত্তেজিত হয়ে ছিল আপনার আসার কথা শুনে, মিস্টার হ্যানসন, সাইমন বললেন।
প্লীজ, স্যার, আমাকে মিস্টার বলার দরকার নেই, বিনীত কণ্ঠে বলল হ্যানসন। তিন গোয়েন্দা আমার বন্ধু। আপনাকেও বন্ধু হিসেবে পেলেই আমি খুশি হব।
নিশ্চয় নিশ্চয়, সাইমনও খুশি হলেন। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। টেলিভিশনে অসংখ্য ব্রিটিশ শো দেখেছে কিম। এখন একজন খাঁটি ইংরেজের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সারাদিন ধরেই তৈরি হচ্ছিল, আপনার সঙ্গে ইংরেজের মত আচরণ করার জন্যে।…রান্নাঘর থেকে চমৎকার গন্ধ আসছে, না?
হ্যাঁ।
ডলির দিকে তাকিয়ে হাসলেন সাইমন। একটা হাত বাড়িয়ে দিলেন। হাত ধরে মেয়েটাকে নিয়ে এলেন বসার ঘরে।
তিন গোয়েন্দা শেষবার দেখে যাওয়ার পর কিছু রদবদল করা হয়েছে লিভিং রুমটার। ঢুকতেই সেটা চোখে পড়ল ছেলেদের।
মেহমানদেরকে বসতে অনুরোধ করলেন সাইমন। তারপর তিন গোয়েন্দাকে। বললেন, হ্যাঁ, এবার শুরু করতে পার।
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিল রবিন। তারপর বলতে আরম্ভ করল। মাঝে মাঝে নোটবুক দেখে মিলিয়ে নিচ্ছে। কোথাও ঠেকে গেলে তাকে সাহায্য করছে মুসা আর কিশোর। হ্যানসনও করছে। কারণ সে-ও বেশিরভাগ সময়ই ওদের সঙ্গে ছিল এই কেসে।
রবিন থামলে সাইমন জিজ্ঞেস করলেন, ভালুকটার ব্যাপারটা কি? এমন কি জিনিস ছিল?
শুনলে অবাকই হবেন, ডলি বলল।
রিভস আর রোজারকে বেঁধে ফেলে রাখলাম, রবিন বলল। পুলিশের। অপেক্ষায়। কিশোরের মনে পড়ল ওই দুৰ্গটা আগেও দেখেছে।
একটা হরর ছবিতে ব্যবহার করা হয়েছিল, কিশোর জানাল। প্রিজনার অভ হন্টেড হিলের শুটিং করা হয়েছিল ওই দুর্গে। মনে পড়ল একটা দৃশ্যের কথা। দেয়ালের গায়ে একটা গোপন কুঠুরির দরজা খুলে রাজকুমারীর মুকুট বের করেছিল। দুর্গের মালিক। আমার মনে হল, এটা নিশ্চয় জানে রিভস আর রোজার।
সুতরাং সোজা হেঁটে গিয়ে আবার দুর্গে ঢুকল কিশোর, মুসা বলল। খুঁজে খুঁজে ঘরটা ঠিক বের করে ফেলল। তার অনুমান ঠিক। ওই কুঠুরিতেই পাওয়া গেল ভালুকটা।
কিশোর পাশার জন্যে এটা কোন ব্যাপার না, হাত নাড়লেন লেখক। তা ছিলটা কি ভেতরে? ড্রাগ? হীরা? রত্ন…
হাসল কিশোর। আপনাকে নিরাশ করতে হচ্ছে, স্যার। ওসব কিছুই ছিল। ছিল একগাদা টাকা।
টাকা! জালনোট?
না, তা-ও না! আসল টাকা। মিস্টার জেনসেনের কাছ থেকে চুরি করেছিল রোজার আর রিভস।
তার মানে তিনজনে একসঙ্গে কাজ করেনি? একদলের নয়?
না। রোজার আর রিভস সিনেমা পাগল লোক। ছবি বানানোর ভীষণ শখ। কিন্তু টাকা নেই। রিভস কিছুদিন একটা স্টুডিওতে কাজ করেছে। আর রোজার একস্ট্রা হিসেবে অভিনয় করেছে হরর ছবিতে। দুজনে বন্ধু। আলাপ আলোচনা করে ঠিক করল একদিন, ছবি বানাবে। কি ছবি? ড্রাকুলার গল্প নিয়ে কিছু। সব প্ল্যান প্রোগ্রাম ঠিকঠাক। বাকি রইল টাকার ব্যবস্থা করা।