দুমাস আগে। এর দুদিন আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল। ফোন করে আমাদেরকে চিন্তা করতে মানা করল। আমরা তাকে বোঝাতে যেতেই কেটে দিল লাইন।
মাথা ঝাঁকালেন চীফ। ডিকসনদের ফোন নম্বর আর ঠিকানা লিখে নিয়ে বললেন, আমার লোকদের জানিয়ে দেব। খেয়াল রাখবে। ইয়ে, ছেলেগুলোকে কাজে লাগাচ্ছেন না কেন?
ছেলেগুলো? বুঝতে পারলেন না মিসেস ডিকসন।
হ্যাঁ, ওরা। তিন গোয়েন্দাকে দেখালেন চীফ। ওরা গোয়েন্দা। ভাল কাজ করে। বহুবার সাহায্য করেছে পুলিশকে।
এই সুযোগটারই যেন অপেক্ষায় ছিল কিশোর। চীফ বলেও সারতে পারলেন না, পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার কার্ড বের করে বাড়িয়ে ধরল সে।
কার্ডটা পড়লেন ডিকসন। বললেন, চীফ যখন সুপারিশ করছেন, কোন প্রশ্ন আর করতে চাই না। বুঝতে পারছি তোমরা ভাল কাজ করো। ঠিক আছে, ভাড়া করলাম। চেক লিখে দেব?
না, মাথা নাড়ল কিশোর। টাকা নিই না আমরা। শখে কাজ করি। তবে ডলিকে আগে পেয়ে নিই, খরচাপাতি যা হবে, বিল পাঠিয়ে দেব, দিয়ে দেবেন। এখন আপনার মেয়ের একটা ছবি দরকার আমাদের।
যা চাও, পুরো খামটাই কিশোরকে দিয়ে দিলেন ডিকসন। যখন যা দরকার হবে, শুধু একটা ফোন করবে আমাকে। পেয়ে যাবে।
তো, আমরা এখন কি করব? চীফকে জিজ্ঞেস করলেন মিসেস।
বাড়ি ফিরে যান। টেলিফোনের কাছে বসে থাকবেন। আমরা কিছু জানতে পারলে জানাব।
হায়রে, মেয়েটাকে কত মানা করলাম বেরোতে, গলা ধরে এল মিসেস ডিকসনের, শুনল না। আর দেখব কিনা কে জানে!
.
০৩.
কাজটা আসলে আমাদেরকে গছিয়ে দিলেন চীফ, মুসা বলল।
তা তো দিলেন, টেবিলে বিছানো ছবির দিকে তাকিয়ে রবিন বলল, কিন্তু শুরু করব কোত্থেকে?
হাসল কিশোর। বন্ধকীর দোকানগুলো থেকে করতে পারি।
হেডকোয়ার্টারে বসে কথা বলছে ওরা।
সোজা হল রবিন। ঠিক।
ওসব জায়গা থেকে টাকা ধার করতে হলে, কিশোর বলল। কোন মূল্যবান জিনিস জমা রাখতে হয়। নাম-ঠিকানা দিতে হয়।
তাহলে তো পেয়েই গেলাম! নিশ্চিন্ত হলো মুসা।
পাব, সব সময় নিরাশ করার প্রবণতা কিশোরের, খারাপ দিকটা চিন্তা করে, যদি রশিদগুলো ডলির হয়। অন্য কারুরটাও রাখতে পারে। দুই সহকারীর মুখের দিকে তাকাল, গোয়েন্দাপ্রধান। রশিদে হলিউডের ঠিকানা দেখা যাচ্ছে। একটু পরেই পিকআপ নিয়ে হলিউডে যাবে বোরিস। লিফট নিতে পারি আমরা।
একমত হয়ে ট্রেলার থেকে বেরিয়ে এল তিনজনে।
হাতের কাজ শেষ করে গাড়ি বের করল বোরিস। মেয়েটা যে বাড়ি থেকে পালিয়েছে, একথা শুনেছে। রাশেদ পাশার কিনে রেখে আসা পুরনো মাল আনতে হলিউডে যাচ্ছে সে। তিন গোয়েন্দাকে নিতে অসুবিধে নেই।
পেছনে উঠে বসল তিন কিশোর। রশিদের ঠিকানা মোতাবেক প্রথম দোকানটার সামনে নামল। ভেতরে আলো খুব সামান্য। কেমন ছাতলা পড়া গন্ধ। কিশোরের বাড়িয়ে দেয়া রশিদটার দিকে গম্ভীর মুখে তাকাল মালিক, তারপর নীরবে খুলল একটা আলমারির তালা। নীল ফিতে লাগানো রূপার একটা মেডেল বের করে আনল। ফেরত নেবে?
হাতে নিয়ে জিনিসটা দেখতে লাগল কিশোর। স্ট্যাচু অভ লিবার্টির মত দেখতে একটা মূর্তি আঁকা রয়েছে মেডেলের একপিঠে। আরেক পিঠে লেখা রয়েছেঃ ফ্রেনসো জেসিজ স্পেলিং বী প্রতিযোগিতায় তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে। ডালিয়া ডিকসন।
মেয়েটা ঠিকানা রেখে গেছে? জিজ্ঞেস করল কিশোর। আমরা তার বন্ধু।
বাড়ি থেকে পালিয়েছে নিশ্চয়?
হ্যাঁ। মাস দুই আগে…
হাত তুলে থামিয়ে দিল কিশোরকে দোকানি। আর বোলো না। ওসব পুরানো কেচ্ছা। শুনতে ভাল লাগে না।
একটা রেজিস্টার বের করে কাউন্টারে বিছিয়ে পাতা ওল্টাতে শুরু করল সে। কি নাম বললে?
ডালিয়া ডিকসন।
মাথা নাড়ল লোকটা। না। জিনিসটা বন্ধক রেখে গেছে এলিজা পিলচার।
ঠিক বলছেন তো? রবিনের কণ্ঠে সন্দেহ।
চোখ ভালই আছে আমার।
ঠিকানা আছে? জানতে চাইল কিশোর।
আবার খাতার দিকে তাকাল লোকটা। পশ্চিম লস অ্যাঞ্জেলেস। তেরোশো বিরাশি রিভারসাইড ড্রাইভ।
কিন্তু পশ্চিম লস অ্যাঞ্জেলেসে তো কোন রিভারসাইড ড্রাইভ নেই? রবিনের প্রশ্ন।
মিথ্যে ঠিকানা অনেকেই দিয়ে থাকে, অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিশোরের বাড়িয়ে ধরা ছবিটা হাতে নিয়ে দেখল দোকানি। কিছুটা নরম হয়ে বলল, দেখতে তো ভালই। ও মেডেল নিয়ে আসেনি। যে এসেছিল তার চুল সোনালি, গালে একটা তিল আছে। ট্রায়াফে অভিনয় করে যে মেয়েটা তার মত। প্রতি সোমবার টিভিতে দেখে আমার স্ত্রী।
ওই অভিনেত্রীর নাম এলিজা পিলচার, কিশোর বলল।
মাথা ঝাঁকাল দোকানি। কি জানি, অন্য কেউও এসে তার নামে মেডেলটা দিয়ে টাকা নিতে পারে। ছদ্মবেশ ধরাটা তো কঠিন কিছু না। শোনো, এটা কি নেবে তোমরা? আট ডলার পঁচাত্তর সেন্ট লাগবে।
টাকা দিয়ে মেডেলটা নিয়ে নিল কিশোর।
বাইরে বেরিয়ে পিকআপে এসে উঠল তিন গোয়েন্দা।
কেসটা বিশেষ সুবিধের মনে হচ্ছে না আমার, অভিযোগের সুরে বলল মুসা।
খুব তাড়াতাড়ি হতাশ হয়ে যাও তুমি, কিশোর বলল। তদন্ত চালিয়ে যেতে হবে। কোন দোকানে খোঁজ পেয়েও যেতে পারি।
দ্বিতীয় দোকানের মালিক ততটা নিরস নয়। তবে তেমন তথ্যও দিতে পারল। শুধু বলতে পারল, সোনার একটা আংটি নিয়ে এসেছিল একটা মেয়ে। পরনে টিউনিক, পায়ে হাঁটু সমান উঁচু বুট। মহাকাশের গল্প নিয়ে করা ছবি। সার্চ ফর এরিওয়ান-এর অভিনেত্রীর মত পোশাক।