সে ফিরে এসে দেখল, একটা কাঠ খুলে ফেলেছে কিশোর আর মুসা। জায়গাটা সিনেমার শুটিঙের জন্যে তৈরি হয়েছে। তাই সব কিছুতেই আসলের চেয়ে নকলের ছড়াছড়িই বেশি। জানালার শিকগুলোকে শিকের মত দেখতে হলেও আসলে কাঠের তৈরি।
ঘরের ভেতরে বসে কাঁদতে আরম্ভ করেছে ডলি।
পাগল! ওরা পাগল! সব বদ্ধ উন্মাদ! একটা খেলনার জন্যে এত কিছু করছে!
ভালুকটা তো? কিশোর জিজ্ঞেস করল। পেয়ে গেছে। কেন চেয়েছে, জানেন?
না।
আপনাকে আনল কিভাবে এখানে?
বাথরুম থেকে সবে বেরিয়েছি, এই সময় এল ওরা। বলল, আমার সঙ্গে ভাকুলার ব্যাপারে কথা বলতে চায়। লিভিং রুমে বসে রিভসের সঙ্গে কথা বলছি। আমি, রোজার উঠে গেল ওপরে। আমাকে বলল, রান্নাঘরে যাবে পানি খেতে, অথচ গেল ওপরতলায়। অবাক লাগল। কি করছে ওখানে? শেষে আর থাকতে না। পেরে আমিও গেলাম ওখানে। আমাকে থামানোর চেষ্টা করেছে রিভস, পারেনি। গিয়ে দেখি, মিসেস লেসিঙের ঘরে আলমারি, ড্রয়ারে খোঁজাখুঁজি করছে রোজার। ভালুকটার কথা জিজ্ঞেস করল আমাকে। শেষে খপ করে এসে আমার হাত চেপে ধরে ঝাঁকাতে লাগল। চেঁচিয়ে বলতে লাগল, ভালুকটা কোথায় আছে তাকে বলতেই হবে!
আবার ফুঁপিয়ে উঠল ডলি। হ্যাঁচকা টানে হাত দুটিয়ে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে ঢুকলাম। ছিটকানি লাগিয়ে দেয়ার আগেই সে-ও ঢুকে পড়ল। থাবড়া মারল আমার নাকেমুখে। নাক থেকে রক্ত বেরোতে শুরু করল আমার। আমার হাত মুচড়ে ধরে শাসাতে লাগল, ভালকুটার কথা না বললে না বললে..
হয়েছে, থাক, বুঝতে পেরেছি। কাঠের আরেকটা শিক খুলে ফেলল কিশোর।
ভাবলাম, ডলি বলল। ভালুকটা পেয়ে গেলেই আমাকে ছেড়ে দেবে। দিল না।
দেয়নি, কারণ যদি পুলিশকে বলে দেন। গাড়ির বুটে ভরে আপনাকে এনেছে, না?
হ্যাঁ। রিভসের কাছে পিস্তল ছিল। আমাকে ভয় দেখাল, টু শব্দ করলেই গুলি করে মারবে। ভয়ে কিছু করলাম না।
শেষ শিকটা খুলে ফেলল মুসা। আসুন। বেরিয়ে আসুন। আমরা আপনাকে সাহায্য করছি।
মুসা আর কিশোরের সাহায্যে জানালা গলে বেরিয়ে এল ডলি। একটা পেরেকে লেগে ছিঁড়ে গেল স্কার্টের কিছুটা। বেরিয়ে এল চারজনে। রওনা হলো জীপের দিকে।
ঠিক এই সময় খুলে গেল জেনারেল স্টোরের দরজা। বেরিয়ে এল হ্যারিসন রিভস। হাতে একটা কাগজের প্লেটে খাবার। স্তব্ধ হয়ে রইল একটা মুহূর্ত। তার পর ঘরের দিকে ফিরে চিৎকার করে ডাকতে শুরু করল, ডেগি! ডেগি!
দৌড় দিতে বলল কিশোর। ভলির হাত ধরে টেনে নিয়ে ছুটল মুসা। হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল ডলি। ব্যথায় কাতরে উঠল। বুড়ো আঙুল মুচড়ে গেছে। টেনেটুনে তাকে তুলল আবার মুসা।
বেরিয়ে পড়েছে রিভস আর রোজার। দুজনের হাতেই পিস্তল। দৌড়ে গাড়ির কাছে পৌঁছতে পারবে না, বুঝতে পেরে পাশের একটা বাড়ির দিকে ঘুরে গেল কিশোর। সবাইকে বলল বাড়িটাতে ঢুকে পড়তে।
কতদিন ওটাতে মানুষ ঢোকে না কে জানে! ভেতরে বাদুড়ের বাসা। ফড়ফড় করতে লাগল ওগুলো, সেই সঙ্গে কিচিক কিচিক করে বিচিত্র ডাক ছাড়তে লাগল।
অন্ধকার একটা ঘরে ঢুকে বসে রইল চারজনে।
রিভস ঢুকে পড়েছে। বাইরের ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলল, জলদি বেরিয়ে এসো। যদি গুলি খেতে না চাও!
চুপ করে রইল কিশোর। সবাইকে চুপ থাকতে বলল।
বেরোতে বললাম না! আবার ধমক দিয়ে বলল রিভস। আমি জানি তোমরা। ওখানেই আছ!
ফিসফিসিয়ে মুসা বলল, ব্যাটা ঢুকতে দেখেনি আমাদের! বোধহয় গাছের জন্যে! নইলে ওরকম করে বলত না। সোজা ঢুকে পড়ত।
বাদুড়গুলোই বাঁচিয়ে দিল আমাদের, রবিন বলল।
রোজারও এসে ঢুকল ঘরে। রিভসকে জিজ্ঞেস করল, কোথায়?
কি জানি, বুঝতে পারছি না…
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইঞ্জিনের শব্দ হলো। জীপের ইঞ্জিন। নিশ্চয়। পুলিশকে ফোন করে ফিরে এসেছে হ্যানসন। করল কোথা থেকে? পথের পাশের কোন ফোনবক্স থেকে হবে, ভাবল কিশোর।
ঘরের বাইরে জীপ থামল। রোজারকে বোধহয় ঢুকতে দেখেছে হ্যানসন। অনুমান করল তিন গোয়েন্দা। ভেতরে ঢুকে পড়ল হ্যানসন। ধস্তাধস্তি শোনা গেল।
আর চুপ থাকতে পারল না মুসা। কারাতে ব্যবহারের এরকম একটা মোক্ষম। সুযোগ ছাড়তে রাজি নয় সে। এক লাফে উঠে বেরিয়ে গেল।
কিশোর আর রবিনও বসে থাকল না। মুসা আর হ্যানসনকে সাহায্য করতে গেল।
রোজারের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে হ্যানসন। আর পিস্তল উচিয়ে বার বার তাকে শাসাচ্ছে রিভস। গুলি করছে না।
তবে কি!…চট করে ভাবনাটা খেলে গেল কিশোরের মাথায়। এখানকার সব কিছুই তো নকল। ওদের পিস্তলগুলোও নকল নয় তো? নইলে গুলি করছে না। কেন?
পেছন থেকে পা টিপে টিপে গিয়ে এক থাবায় রিভসের পিস্তলটা কেড়ে নিল কিশোর। ওজন দেখেই বুঝে গেল, নকল।
দুটো মিনিটও আর টিকল না এরপর রোজার আর রিভস। কাবু করে ফেলল। হ্যানসন আর তিন গোয়েন্দা মিলে। সাহস বেড়ে গেছে ডলির! খুঁজেপেতে দড়ি বের করে নিয়ে এল। বেঁধে ফেলল দুই শয়তানকে।
.
২০.
কেসের রিপোর্ট লিখে তৈরি হয়ে রয়েছে রবিন। কিন্তু বিখ্যাত চিত্র পরিচালক ডেভিস ক্রিস্টোফার বিদেশ থেকে ফিরলেন না।
ডালিয়া ডিকসনকে উদ্ধারের এক হপ্তা পরে ইডাহো থেকে ফিরে এলেন ভিকটর সাইমন। কিশোরকে ফোন করলেন। কিশোর যে খোঁজ করেছিল, একথা তাকে জানিয়েছে কিম।
একটা কেস শেষ করেছি, কিশোর জানাল। শুনতে চান?
ফ্রেনসোর সেই মেয়েটার ব্যাপার তো?