জীপে চড়ে বসল তিন গোয়েন্দা। রওনা হল হ্যানসন। প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে ধরে কিছুক্ষণ চলে মোড় নিয়ে একটা সরু পথে পড়ল জীপ। পথটার নাম কটনউডক্রীক রোড। পাহাড়ী পথ ধরে ওপরে উঠে চলল।
ডানে-বাঁয়ে চোখ রেখেছে ছেলেরা।
পনেরো মিনিটের মাথায় পৌঁছে গেল মুলোল্যাণ্ড হাইওয়েতে। পাহাড়ের ভেতর দিয়ে হলিউড পার হয়ে ভেনচুরায় চলে গেছে পথটা।
কিশোরের হাতে বিনকিউলার। আতিপাতি করে দেখছে পথের পাশের। পাহাড়ী অঞ্চল। পাহাড়ের ঢালে মাঠ আর চারণভূমি যেখানেই আছে ভাল করে দেখছে ভেড়া দেখা যায় কিনা। সাইকেল নিয়ে ঘামতে ঘামতে চলেছে একজন লোক। কিশোরের নির্দেশে তার কাছে এনে গাড়ি থামাল হ্যানসন।
এই যে ভাই, কিশোর বলল। এখানে আমার এক বন্ধু ভেড়া পালে। ডারমট নাম। কোথায় থাকে বলতে পারেন?
সরি, হাঁপাতে হাঁপাতে জবাব দিল লোকটা। ও নামে কাউকে চিনি না।
আবার এগিয়ে চলা।
কিছুদূর গিয়ে পাহাড়ের ঢালে কিছু ধূসর জিনিস চোখে পড়ল কিশোরের। প্রথমে ভাবল পাথর, পরে দেখে নড়ছে। ভেড়া! সেদিকে এগিয়ে যেতে বলল। হ্যানসনকে।
আরেকটু কাছে গেলে দেখা গেল, পুরানো একটা ঝরঝরে ভ্যানের পাশে। ফোল্ডিং চেয়ার পেতে বসে রয়েছে একজন লোক। মাউথ অর্গান বাজাচ্ছে আপনমনে।
গাড়ি রাখতে বলল কিশোর।
বড় একটা পাথরের চাঙড়ের পাশে এনে জীপ থামাল হ্যানসন। নেমে পড়ল তিন গোয়েন্দা। লোকটার দিকে চলল।
কাছে এসে কিশোর বলল, কয়েকজন বন্ধুকে খুঁজছি। দুজন লোক, ডারমট আর তার ভাই। আর একটা মেয়ে। পাহাড়ের এদিকটাতেই কোথাও থাকে। ঠিকানা ঠিকমত বলতে পারব না। জানেন, কোথায় থাকে?
চারপাশে চোখ বোলাল রবিন। যতদূর চোখ যায়, কোন বাড়িঘর চোখে পড়ল না।
আমাদেরকে বলা হয়েছে, আবার বলল কিশোর। যেখানে ওরা থাকে, তার পেছনে ভেড়া থাকে। কই, এখানে তো বাড়িঘর দেখছি না। আর কোথাও ভেড়া পালে নাকি?
কাঁধ ঝাঁকাল লোকটা। কি জানি, বলতে পারব না তো। তবে পশ্চিমে গিয়ে দেখতে পার। থাকতেও পারে। এখানে এসেছি আমি কাল রাতে। পথের ওদিকটায় থাকতেও পারে। ভেড়ার ডাক শুনেছি আসার সময়।
লোকটাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার এসে গাড়িতে উঠল ছেলেরা।
পশ্চিমে, নির্দেশ দিল কিশোর। রাস্তার যা অবস্থা দেখছি, উঠতে গিয়ে না পড়ে মরি।
কিচ্ছু ভেব না। গাড়ি তো চালাব আমি।
রাস্তার এই অংশটা একেবারে নির্জন। যানবাহন চোখে পড়ছে না, মানুষজন নেই। রকি বীচের এত কাছে যে এরকম একটা জায়গা থাকতে পারে না দেখলে বিশ্বাস হয় না।
মাইল খানেক এগোনোর পর দুভাগ হয়ে গেছে পথ। ধূসর একটা পাথরের টাওয়ার চোখে পড়ল। একঝাঁক গাছের মাথার ওপরে বেরিয়ে আছে।
সেদিকে এগোতে লাগল হ্যানসন।
আরি! মুসা বলল। দুর্গটুর্গ না তো?
একটা কাঁচা রাস্তায় পড়ল গাড়ি। আর এগোনোর দরকার নেই, কিশোর বলল। জীপ থামাল হ্যানসন।
দুর্গের মতই লাগছে, রবিন বলল। একপাশে কয়েকটা কাঠের কেবিন রয়েছে। উঁচু বেড়া দিয়ে ঘেরা।
পুরানো ওয়েস্টার্ন শহরের মত লাগছে, মুসা বলল।
এটাই জায়গা! চোখ চকচক করছে কিশোরের।
আমার কাছে তো ছবির লোকেশনের মত লাগছে।
ঠিক! এরকম জায়গাতেই তো লুকিয়ে থাকতে চাইবে কেইনের মত লোক। এখন ওই ধোঁকাবাজ প্রযোজক আর ডলিকে এখানে পেলেই হয়!
.
১৯.
হ্যানসন, কিশোর বলল। আপনি থাকুন এখানে। যদি মনে হয় আমরা বিপদে পড়েছি, সাহায্য করতে যাবেন। ঠিক আছে?
নিশ্চয়ই।
অন্যান্য মুভি লোকেশনের মত এই জায়গাটারও অনেক পরিবর্তন হয়েছে, বার বার নতুন করে সাজানো হয়েছে। বড় বেশি চুপচাপ।
কোনখান থেকে শুরু করব? ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করল রবিন। জোরে বলতে ভয় পাচ্ছে যেন।
কিশোরও ভাবছে সে কথা। বাড়িগুলোর ওপর নড়েচড়ে বেড়াচ্ছে তার দৃষ্টি। কোথায় থাকতে পারে? কোনখানে? শেষে দুৰ্গটাকেই বেছে নিল সে।
অনেক দিনের অযত্নে ধুলো জমে আছে পুরু হয়ে, প্রতিটি ঘরে। কিন্তু ডলি কোথায়? খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একটা দরজার সামনে এসে থামল তিনজনে। নতুন করে খিল লাগানো হয়েছে।
এইটাই! নিচু গলায় বলল রবিন।
ঠোঁটে আঙুল রেখে কথা বলতে নিষেধ করল কিশোর।
ভেতরে কি করে দেখা যায়? একটা জানালা চোখে পড়ল। ওটার কাছে চলে এল ওরা। উঁকি দিল ভিতরে। কাঠের পাটাতনের ওপর জড়সড় হয়ে পড়ে আছে। যেন একগাদা কম্বল। কেউ অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেছে নষ্ট হওয়ার জন্যে, দেখে সে রকমই মনে হয়।
ডলি? নরম গলায় ডাকল কিশোর। ডলি, আপনি আছেন ওখানে?
নড়ে উঠল কম্বলের দলাটা। উঠে বসল ডলি ডিকসন। আবছা অন্ধকারেও দেখা যাচ্ছে ফ্যাকাসে হয়ে আছে ওর চেহারা।
ডলি, আমি। আমি কিশোর পাশা। রবিন আর মুসাও এসেছে। ওরা। কোথায়? রিভস আর কেইন? মানে, রোজার?
মূককীটের মত যেন গুটি থেকে বেরোল ডলি, তেমনি করে কম্বল সরিয়ে বেরিয়ে উঠে এল। পরনে কালো স্কার্ট, সাদা ব্লাউজ। সব কিছুতে ময়লা। হাতে ময়লা, মুখে ময়লা। পা খালি।
আপনাকে বের করে নিয়ে যেতে এসেছি, কিশোর বলল।
সাবধান! ফিসফিস করে বলল ডলি। লোকগুলো ভীষণ পাজি! অনেক চেষ্টা করেছি। কিছুতেই বেরোতে পারিনি। সব সময় পিস্তল নিয়ে পাহারা দেয়।
কোথায় ওরা?
ওদিকে। একটা জেনারেল স্টোর আছে না, ওটাতে।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। জানালায় কাঠ আটকে দেয়া হয়েছে, গরাদের মত করে। সেগুলো খুলতে চেষ্টা করল সে আর মুসা। রবিন বেরিয়ে গেল হ্যানসনকে বলার জন্যে, যাতে পুলিশকে খবর দেয়।