সামনের ঘরে আবার চেয়ার টানার শব্দ হল। তারপর পদশব্দ। আসছে লোকটা। এ ঘরে ঢুকলেই ছাতের ফোকরটা দেখে ফেলবে। তারপর?
খুলে গেল অফিস ঘরের দরজা। অনেকগুলো খেলনা বোঝাই একটা তাকের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল কিশোর। ফাঁক দিয়ে দেখতে পেল লোকটার শরীর, মুখটা চোখে পড়ছে না।
কয়েক কদম এগিয়েই থমকে দাঁড়াল লোকটা। নিশ্চয় ফোকরটা চোখে পড়েছে। মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙা তক্তাও নজর এড়ানোর কথা নয়।
পকেটে হাত ঢুকে গেল জেনসেনের। বের করে আনল পিস্তল। এই ভয়ই করছিল কিশোর। আগ্নেয়াস্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু করার নেই। আরও গুটিসুটি হয়ে দেয়ালের সঙ্গে মিশে যেতে চাইল সে।
পালানোর চেষ্টা করবে? একদৌড়ে অফিসের দরজার কাছে যেতে সময় লাগবে না। কিন্তু তার আগেই যদি গুলি করে বসে লোকটা?
এই সময় নিতান্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই শোনা গেল পুলিশের সাইরেন। এগিয়ে আসছে। দ্বিধায় পড়ে গেছে লোকটা। নড়ছে না। হাতে উদ্যত পিস্তল। আস্তে আস্তে আবার সরে যেতে শুরু করল সাইরেন।
নড়ে উঠল জেনসেন। পা বাড়াল সামনে। এগিয়ে আসছে কিশোর যে র্যাকের আড়ালে লুকিয়েছে ওটার দিকে।
ধকধক করছে কিশোরের বুক। এই সময় ঘটল যেন অলৌকিক ঘটনা। সামনের দরজায় থাবা দিতে লাগল কেউ।
চমকে গেল জেনসেন।
থাবা পড়ছেই। ডেকে জিজ্ঞেস করল একটা কণ্ঠ, এই, ভেতরে কে আছেন? আছেন কেউ? আমাকে সাহায্য করতে পারবেন?
ঘুরে অফিসের দিকে রওনা হয়ে গেল জেনসেন। দরজার ওপাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করল, কে?
বাইরে থেকে জবাব এল, ফেরারস মেশিন পার্টসের অফিসটা কোথায় বলতে পারেন?
রাস্তার ওপারে। এক ব্লক পরে।
কিন্তু সাইনবোর্ড তো দেখছি না।
আর দেরি করল না কিশোর। বেরিয়ে সোজা এগোল ডাবলডোরটার দিকে। ছিটকানি লাগানো আছে। টান দিতেই খুলে গেল। পাল্লা খুলে বেরোনোর আগের মুহূর্তেও কানে এল সামনের দরজার কাছে লোকটার কথা, যে মেশিন পার্টসের অফিস খুঁজছে। মুচকি হাসল কিশোর। বুদ্ধিটা ভালই বের করেছে হ্যানসন। কায়দা করে তাকে সুযোগ করে দিল বেরোনোর।
বেরিয়ে এসে আস্তে করে আবার পেছনে দরজাটা লাগিয়ে দিল কিলোর।
.
উত্তরে চলল রোলস রয়েস। রকি বীচে ফিরে চলেছে।
মুসা বলছে কিশোরকে, ছাত থেকে নেমে পড়লাম আমি আর রবিন। ভাবলাম, আমরা গিয়ে ডাকাডাকি করলে চিনে ফেলবে জেনসেন। সে জন্যেই হ্যানসনকে পাঠিয়েছি।
ভাল বুদ্ধি করেছ।
হাতের ভালুকটা টিপেটুপে দেখল কিশোর। বিড়বিড় করল, অদ্ভুত! সাধারণত খেলনা, যে রকম হয় সে রকম নরম নয়। ভেতরটা শক্ত।
কেটে দেখলেই হয়, রবিন পরামর্শ দিল।
পকেট নাইফ বের করে কাটতে শুরু করল কিশোর। দুপাশ থেকে ঝুঁকে এল। অন্য দুজন। নিরাশ হতে হল তিনজনকেই। ভেতরটা প্ল্যাস্টিকে তৈরি। ফাপা। কিছু নেই। প্ল্যাস্টিকের ওপরে রোমশ চামড়া পরিয়ে দেয়া হয়েছে।
দূর! নিরাশ হয়ে হেলান দিল মুসা। এত কিছু করেও কোনই লাভ হল না। একটা কথাই শুধু জানতে পারলাম, ওই রিভসটা শয়তানীতে জড়িত।
পুলিশের কাছে যাব? হ্যানসন জিজ্ঞেস করল।
গিয়ে কি বলব? জেনসেনের কথা বলতে পারি। কিন্তু কি প্রমাণ আছে আমাদের হাতে? কেন বিশ্বাস করবে পুলিশ?
জবাব দিতে না পেরে চুপ হয়ে গেল হ্যানসন।
.
১৮.
গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল কিশোরের। কার একটা ভেড়া যেন ছুটে গিয়েছে। বাড়ির কাছে এসে ব্যা ব্যা করে ডেকে চলেছে।
বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবছে কিশোর, ভেড়াটাকে তাড়াবে? না শব্দ উপেক্ষা করে বালিশে কান ঢেকে আবার ঘুমিয়ে পড়বে?
হঠাৎ বিছানায় উঠে বসল সে। ভেড়া! ঠিক! এই তো পাওয়া গেছে ডলির কিডন্যাপারদের!
ঘড়ির দিকে তাকাল। তিনটে বাজে। এই অসময়ে হ্যানসনকে পাওয়া যাবে। না। রবিন আর মুসাও ঘুমিয়ে। ওদেরকেও ডাকা যাবে না। তার মানে সকালের আগে কিছুই করতে পারছে না।
অন্ধকারে শুয়ে রইল সে। চুপ করে থেকে ভাবছে। ঘুম আসছে, পরক্ষণেই টুটে যাচ্ছে। উত্তেজনার সময় এ রকম হয়। ভোরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে বিছানা ছাড়ল সে। হাতমুখ ধুয়ে কাপড় পরে নিচে নামল নাস্তা করার জন্যে।
সাড়ে সাতটায় রবিনকে ফোন করল।
ডলির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় কি বলেছিল রোজার মনে আছে? কিশোর জিজ্ঞেস করল।
বলেছিল ডলিকে ছবিতে নামাতে চায়।
তা তো বলেইছিল। আরও বলেছিল ক্রুগার মনটাগোর বাড়িতে থাকে ওরা। বাড়ির পেছনে ভেড়া চড়ে।
কিছু বলল না রবিন। তাকে হাই তুলতে শোনা গেল ফোনে।
বল তো লস অ্যাঞ্জেলেসের কোন এলাকায় ভেড়া দেখা যায়?
অনেকের বাড়িতেই…আচ্ছা, দাঁড়াও। বসন্তের শুরুতে উপকূলের ধারে পাহাড়ের ঢালে চড়ে বেড়ায় ভেড়ার পাল। তরপর সিয়েরা আর অন্যান্য জায়গায়। রপ্তানি করা হয় ওগুলো।
ঠিক। এমন সব জায়গায় পাঠানো হয়, যেখানে শীত বেশি পড়ে, উলের দরকার হয়। তবে সব তো আর পাঠানো যায় না, কিছু না কিছু থেকেই যায়। সেগুলোকে কোথায় রাখা হয়? পাহাড়ের ওপরেই কোথাও। ওখানে যদি ভেড়া থাকতে পারে, দুতিনজন লোকও তো সহজেই লুকিয়ে থাকতে পারে। পারে না?
তাই তো! সজাগ হয়ে গেছে রবিন।
সেখানেই যাব আমরা। আমি হ্যানসনকে ফোন করছি।
করো। আমি মুসাকে করছি।
.
নটার কয়েক মিনিট আগে হাজির হল হ্যানসন। তবে রোলস রয়েস নিয়ে নয়। এক জীপ নিয়ে। যেখানে যাচ্ছে সেখানে রোলস রয়েসের চেয়ে এ ধরনের জীপই বেশি উপযোগী। বলেই দিয়েছিল কিশোর।