নেই তো কিছু। ফিরে তাকিয়ে বলল কিশোর।
বাড়ির উত্তর পাশে একটা কার পার্ক। ওখানে এসে আবার তাকাল বাড়ির দিকে। জানালাগুলোতে লোহার গ্রিল লাগানো। একটা কাঠের বাক্স পড়ে থাকতে দেখে সেটা এনে একটা জানালার নিচে রেখে তার ওপর উঠল মুসা। জানালা দিয়ে ভেতরে তাকাল।
কি দেখছ? জানতে চাইল রবিন।
স্টোর রুম মনে হচ্ছে। বেশ কিছু ভালুক দেখতে পাচ্ছি। আর প্যাকেট করার জিনিসপত্র। একধারে ছোট একটা ঘর আছে মনে হয়। দরজায় সাইন লাগানো। পড়তে পারছি না।
নেমে এল মুসা। অন্য পাশ দিয়ে গিয়ে দেখি।
কিন্তু অন্য পাশে এসে দেখল, জানালাই নেই।
কিভাবে ঢোকা যায় আলোচনা করছে তিনজনে, এই সময় একটা গাড়িকে থামতে শুনল।
চুপ! ঠোঁটে আঙুল রেখে ইশারা করল কিশোর।
দরজা খুলে নেমে এল কেউ। সিঁড়ি বেয়ে উঠল।
এইবার যাওয়া যাক, ফিসফিসিয়ে বলল রবিন। বলব, একটা ভালুক কিনতে চাই আমরা।
ঘুরে আবার বাড়ির কোণে এসেই থমকে দাঁড়াল তিনজনে। সেই মেরুন। অডি।
পিছিয়ে এল ওরা।
আশ্চর্য! আনমনেই বলল কিশোর। কার ওপর চোখ রাখছে? রিভস? না আমাদের ওপর?
নজর রাখব। দেখি কি করে? রবিন বলল।
অপেক্ষা করতে লাগল ওরা। পনেরো মিনিট গেল… বিশ…তারপর দরজা খুলল বাড়িটার। একটা ব্যাগ হাতে বেরিয়ে এল একজন লোক। গাড়ির বুটে নিয়ে গিয়ে তুলল। গাড়ি চালিয়ে নিয়ে চলে গেল।
জেনসেনই, মুসা বলল। সন্দেহ নেই। মনে হচ্ছে শয়তানের চেলা সে-ই। সব কিছুর হোতা, নাটের গুরু। গাধার মত পিজা শ্যাকে বসে আলোচনা করেছি। আমরা। সব সে শুনেছে। পিছু নিয়েছে আমাদের।
এ বাড়িতে আটকে রাখেনি তো ডলিকে! বলে উঠল রবিন।
জলদি চলো! পুলিশকে ফোন করি!
যদি ডলি ভেতরে, না থাকে, নিরাশ করল ওদেরকে কিশোর। তখন কি জবাব দেব? পুলিশকে খবর দেয়ার আগে শিওর হতে হবে আমাদের।
ওপর দিকে তাকাল মুসা। আচ্ছা, এক কাজ তো করতে পারি। ওখানে উঠে গিয়ে স্কাইলাইটের ভেতর দিয়ে দেখতে পারি আছে কিনা কেউ ভেতরে।
বলেই রওনা হয়ে গেল সে। পিছু নিল কিশোর আর রবিন। কোণের কাছে একটা পাইপ নেমে এসেছে ওপর থেকে। ওটা বেয়ে উঠতে শুরু করল।
জলদি কর! তাগাদা দিল রবিন। কেউ দেখে ফেললে পুলিশকে খবর দেবে। এখানেও কিছু করতে পারব না আমরা।
ছাতে উঠে গেল মুসা। ছটা স্কাইলাইট আছে মোট। ছোট যে ঘরটার কথা সে বলেছিল, বাক্সের ওপর দাঁড়িয়ে দেখেছিল, একটা স্কাইলাইট দিয়ে সেটার ভেতরটা। দেখা যায়। কাঁচে পুরু হয়ে ময়লা লেগে রয়েছে। হাত দিয়ে ডলে ডলে পরিষ্কার করল সে। তারপর ভেতরে উঁকি দিল।
কি দেখছ? নিচে থেকে জিজ্ঞেস করল কিশোর।
কিছুই তো বুঝতে পারছি না। অন্ধকার। কিছু বস্তাটস্তা আছে মনে হয়।
মাটিতে বসে পড়ল কিশোর। নাহ, মনে হয় এখানে নেই!
আরও কয়েক মিনিট চেষ্টা করে ফিরে এল মুসা।
তিনজনে বসে বসে আরও কিছুক্ষণ আলোচনা করল, সমস্যাটার সমাধান করা যায় কিনা। উপায় বের করতে পারল না।
শেষে কিশোর বলল, একটা স্কাইলাইট দিয়ে দেখেই নেমে এলে কেন? বাকিগুলো দেখা দরকার ছিল।
চল না, তিনজনেই উঠে যাই, রবিন প্রস্তাব দিল।
মন্দ বলনি। চলো, আরেকবার দেখি।
তিনজনেই ছাতে উঠে পড়ল। পুরানো ছাত। হঠাৎ এক জায়গায় মড়মড় করে। উঠল। তিনজনের ভার সইতে পারছে না।
খবরদার! নড়বে না! চিৎকার করে উঠল মুসা।
আবার গুঙিয়ে উঠল ছাতের তক্তা। মড়মড় করে উঠল জোরে। দেবে যেতে শুরু করল। থাবা দিয়ে কিছু একটা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করল কিশোর। পারল না। পড়ে যাচ্ছে নিচের দিকে।
.
১৭.
অন্ধকারে পড়ে আছে কিশোর। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কোনমতে উঠে বসল। অনেকটা সহজ হয়ে এল শ্বাস-প্রশ্বাস।
কিশোর? কিশোর, তুমি ঠিক আছ?
মুসা ডাকছে। যে ফোকরটা দিয়ে পড়েছে কিশোর, তার কিনারে গলা বাড়িয়ে দিয়েছে সে। আবার ডাকল, কিশোওর?
আমি ঠিকই আছি, গোঁ গোঁ করে জবাব দিল কিশোর। উঠে দাঁড়াল। ছোট ঘরের পাশের বড় ঘরটায় পড়েছে। নব ধরে মোচড় দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করল। নড়ল না নবটা। তালা দেয়া।
ঘরে অনেকগুলো ইস্পাতের র্যাক। তাকে সাজানো টেডি বিয়ার। আরও নানারকম খেলনা আর পুতুল রয়েছে। বাক্স, প্যাকেট করার কাগজ ছড়িয়ে রয়েছে মেঝেতে। কিছু খেলনা মেঝেতেও পড়ে আছে।
একটা ভালুক হাতে নিল কিশোর। ডলিরটা যেমন ছিল তেমনই দেখতে। নিয়ে এগোল আরেক দিকে। বাড়ির সামনের দিকে। আরেকটা দরজা চোখে পড়েছে। সহজেই খুলে গেল ওটা। ভেতরটা অফিসঘর। দুটো ডেস্ক আছে। ওপাশের দরজাটা খুলতে যাবে এই সময় আবার কানে এল গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ।
দরজার কাচের প্যানেল দিয়ে বাইরে তাকাল সে। ফিরে এসেছে মেরুন অডিটা। দ্রুত আবার স্টোররুমে ফিরে এল কিশোর। অফিসের দরজাটা লাগিয়ে দিল।
ছাতের ওপরে নড়েচড়ে উঠল মুসা। ডেকে জিজ্ঞেস করল, কিশোর, কি করছ?
আস্তে! সাবধান করল কিশোর। সরে যাও! ওই লোকটা ফিরে এসেছে!
কয়েকটা বাক্সের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল সে। দরজায় চাবি লাগানোর শব্দ শুনল। অফিসে ঢুকল কেউ। চেয়ার টানার শব্দ হল। ড্রয়ার খুলল; কাগজপত্রের খসখস হল, কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল লোকটা।
কি করছে জেনসেন?
বিশাল ঘরটায় চোখ বোলাল কিশোর। একটা ডাবলডোর দেখতে পাচ্ছে। ওটা খুলতে পারলে বেরিয়ে যেতে পারত। নেবে নাকি ঝুঁকিটা? বেরোতে, পারবেই, তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আওয়াজ করে ফেলতে পারে। শুনে ফেললে। দেখতে আসবে জেনসেন। তখন কি করবে কে জানে! লোকটার কাছে পিস্তল থাকতে পারে।