যদি না থাকে? রবিনের প্রশ্ন।
আবার এসে দরজায় ধাক্কা দেব আর চিৎকার করতে থাকব।
অনেক লম্বা ঘরটা। নানা রকম উদ্ভট জিনিসে বোঝাই। হরর ছবি তৈরি করার মালমশলার একটা গুদাম যেন। গন্ধটাও পুরানো কবরস্থানের কফিনের কথা মনে করিয়ে দেয়। অনেক দিন পর পুরানো কবর খুললে যেমন বোটকা গন্ধ বেরোয়, অনেকটা তেমনি।
নরম কিছুতে পা পড়তে কিচ করে উঠল ওটা।
বাবারে! ভূত! বলে চিৎকার করে উঠল মুসা।
দূর! কি কর, ও তো ইঁদুর! রবিন বলল।
অনেক খোঁজাখুঁজি করল ওরা। অবশেষে দেয়ালের এক জায়গায় দেখল হার্ডবোর্ড লাগানো রয়েছে। একধার ধরে হ্যাঁচকা টান মারল মুসা। নড়ে উঠল, বোর্ডটা। আরেকটু জোরে. টানতেই খুলে চলে এল হাতে। বেরিয়ে পড়ল একটা জানালা।
ঠেলা দিতেই খুলে গেল পাল্লা। মাথা বের করল মুসা। পাশে তাকাতেই চোখে পড়ল পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে আছে একজন পুলিশ অফিসার।
বেরিয়ে এস, বলল অফিসার। শয়তানীর চেষ্টা করবে না একদম। এস।
মুসা বেরোল। তারপর বেরোল রবিন। সব শেষে কিশোর।
অফিসারের কাছেই দাঁড়িয়ে রয়েছে লালচুল মহিলা। বলল, হ্যাঁ, এই ছেলেগুলোই। মিস্টার রিভসকে খুঁজতে এসেছিল। একটু পরে গ্যারেজে চেঁচামেচি শুনলাম। ভাবলাম ওরাই হবে।
আমাদের আটকে রেখে পালিয়েছে হ্যারিসন রিভস, অভিযোগের সুরে অফিসারকে বলল কিশোর।
তাই? পাথরের মত কঠিন হয়ে আছে অফিসারের মুখ।
কদিন ধরেই মিস্টার রিভস বাড়িতে নেই, মহিলা বলল। কি করে আটকাল। তোমাদের?
শান্ত কণ্ঠে বিশেষ একটা ভঙ্গি নিয়ে কিশোর বলতে লাগল, একটা মেয়ে। হারিয়ে গেছে। ওর নাম ডালিয়া ডিকসন। রিভস আর তার এক সঙ্গী শেষবার দেখা করেছে মেয়েটার সঙ্গে। গতকাল, চেশায়ার স্কোয়্যারে। আমাদের সন্দেহ, ওরা দুজনই মেয়েটাকে নিয়ে গেছে।
বড় বেশি টিভি দেখ তুমি, গম্ভীর কণ্ঠে বলল অফিসার।
বিশ্বাস না করলে পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে জিজ্ঞেস করতে পারেন।
বাড়ির কোণ ঘুরে এগিয়ে এল দুজন লোক। একজন বয়স্ক। পরনে ইউনিফর্ম। নেই, কিন্তু ভাবভঙ্গি আর পুলিশ অফিসারের সম্মান দেখানো থেকেই আন্দাজ করা গেল, ওই দুজনও পুলিশের লোক। সাদা পোশাকে এসেছে। ডিটেকটিভ।
কিশোরের কথা মন দিয়ে শুনল ওরা। তারপর বয়স্ক লোকটা ওদেরকে ওখানে থাকতে বলে চলে গেল। ইউনিফর্ম পরা অফিসার লাল চুল মহিলার সঙ্গে বাড়ির ভেতরে গেল, নিশ্চিত হয়ে আসার জন্যে যে রিভস বাড়িতে নেই। ফিরে এল খানিক বাদেই। তিন গোয়েন্দাকে তিরস্কার করে বলল সিনিয়র অফিসার, অন্যের ব্যাপারে নাক গলানো উচিত নয়। তিন গোয়েন্দার নাম-ঠিকানা লিখে নিতে লাগল।
উঁকিঝুঁকি দিতে আরম্ভ করেছে কৌতূহলী পড়শীরা।
অ্যাই! ট্রাইসাইকেলে বসা একজন জিজ্ঞেস করল পুলিশকে, চোর ধরলেন। নাকি?
না। গম্ভীর হয়ে জবাব দিল অফিসার। আপনারা যান।
তিন গোয়েন্দাকে ছেড়ে দেয়া হলো। দ্রুতপায়ে ওখান থেকে সরে চলে এল। ওরা। আরও লোক জড়ো হওয়ার আগেই। অপমানকর কথা শুনতে ভাল লাগে না। অর্ধেক পথ আসতেই চোখে পড়ল, মোড়ের কাছে দাঁড়িয়ে আছে মেরুন অডি গাড়ি, সেই গাড়িটা, যেটা আরও দুবার দেখেছে। ওটার পাশে চলে এল তিন গোয়েন্দা। মুখ ফিরিয়ে তাকাল আরোহী, যেন প্যাসেঞ্জার সীটে পড়ে থাকা কিছু দেখছে।
এই! কিশোর বলল ফিসফিস করে।
কী? রবিন জানতে চাইল।
পেছনে তাকাবে না। কোন দিকেই তাকাবে না। গাড়ির ভেতরে যে লোকটা বসে আছে, এখান থেকে সে রিভসের বাড়ির ওপর চোখ রাখতে পারে। রেখেছিল। বলেই মনে হয় আমার।
তাতে কি? মুসার প্রশ্ন। অনেকেই তো এখন রিভসের বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে।
এই গাড়িটা আজকে আরও দেখেছি। আর ভেতরের লোকটা মিস্টার জেনসেন, পিজা শ্যাকের ম্যানেজার। আমাদেরকে না দেখার ভান করছে। ও এখানে কি করছে?
১৬.
তিন গোয়েন্দা গাড়িতে উঠলে হ্যানসন জিজ্ঞেস করল, কোথায় যাব?
একটা টেলিফোন বক্সের কাছে, কিশোর জবাব দিল।
একটা পেট্রল স্টেশনে গাড়ি ঢোকাল হ্যানসন।
টেলিফোন ডিরেক্টরি ঘেঁটে বের করল কিশোরআর জে. ইম্পোরটারসের ঠিকানা। লং বীচে। দক্ষিণে পয়তাল্লিশ মিনিটের পথ।
রিভসের সঙ্গে ফারের পোশাকের দোকানদারের যোগাযোগ আছে, দোকানদারের সঙ্গে ভালুকটার যোগাযোগ আছে, এবং ভালুকটার সঙ্গে ডলির। যোগাযোগ আছে, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। সুতরাং, যে কোম্পানি ভালুকটা সাপ্লাই করেছে, তাদের সঙ্গে দেখা করা দরকার।
অনেক দূরে, হ্যানসন বলল। ম্যাপ অবশ্য আছে গাড়িতে। ঠিকানাটা বের করে ফেলতে পারব।
ঠিকানা জেনে নিয়ে আবার গাড়িতে উঠল তিন গোয়েন্দা। লং বীচে চলল। হ্যানসন। পেছনে উত্তেজিত হয়ে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আলোচনা করতে লাগল। ছেলেরা।
লং বীচে সাগরের কিনারে বাড়িটা। কেমন বিষণ্ণ আর নির্জন মনে হচ্ছে জানালায় আলো নেই। বাড়ির সামনে ট্রাক-লড়ি কিছু নেই, কোম্পানিগুলোর সামনে সাধারণত যেমন থাকে।
এবারেও বাড়ি থেকে দূরে গাড়ি রাখল হানসন। বাড়িতে লোক থাকলে যাতে দেখতে না পায়।
সামনে দাঁড়িয়ে ভুরু কুঁচকে বাড়িটার দিকে তাকাল রবিন। পশ্চিমে সাগরের দিকে মুখ করা। ভেতরে কেউ আছে বলে তো মনে হচ্ছে না।
দেখি, দরজায় টোকা দিয়ে, কিশোর বলল।
দুই ধাপ সিঁড়ি উঠে দরজায় থাবা দিল সে। কেউ সাড়াও দিল না, বেরোলও না। দরজার পাল্লার ওপর দিকটায় কাঁচের প্যানেল লাগানো। সেখানে চোখ রেখে ভেতরে ছোট একটা অফিস দেখতে পেল। ঘরটা শূন্য।