থার্ড অ্যানুয়াল কনভেনশন! বিড়বিড় করে পড়ল রবিন, পোস্টারের ওপরের লেখাটা। হরর ফ্যান ক্লাব অভ নর্থ আমেরিকা। আগস্ট ফোরটিন অ্যাণ্ড ফিফটিন, সান্তা মনিকা সিভিক অডিটরিয়াম!
ফিরে তাকিয়ে বলল, ঠিক জায়গায় এসেছি আমরা!
অ্যাই, কি করছ? সামনের বাগানের কাছ থেকে বলে উঠল একটা কণ্ঠ।
ফিরে তাকাল ছেলেরা। লাল চুল এক মহিলা। মিস্টার রিভসকে খুঁজছ, না? লোকটার ম্যানেজার হবে মনে হয় মহিলা।
তার বন্ধু জ্যাক ব্রাউনকে হলেও চলবে, কিশোর, বলল। উত্তেজিত হয়ে উঠেছে।
ব্রাউন? চিনি না। তবে ওই নামটা নিজের লেটার বক্সে কদিন ধরে লাগিয়ে রেখেছেন মিস্টার রিভস। এখন তো বাড়ি নেই। ছুটিতে বেড়াতে গেছেন। কিছু বলতে হবে?
না। থ্যাঙ্ক ইউ। পকেট থেকে নোটবুক বের করল কিশোর। ব্রাউনের ব্যাপারে কিছুই জানেন না?
মাথা নাড়ল মহিলা। না। কখনও দেখিনি। হতে পারে, কিছু দিন ছিল মিস্টার রিভসের সঙ্গে। ওই মিস্টার কেইনের মত।
মিস্টার কেইন? উত্তেজনায় কাঁপতে আরম্ভ করেছে কিশোর। লম্বা চুলওয়ালা। সেই মানুষটা? চুলে কান ঢেকে যায় যে?
হ্যাঁ। ডেগি কেইন।
ডেগি!
হ্যাঁ। আমার কাজ আছে। মিস্টার রিভসকে কিছু বলতে হবে?
খসখস করে নোটবুকে ফোন নম্বর আর ঠিকানা লিখে বাড়িয়ে দিয়ে কিশোর বলল, আমার কাছে কিছু পুরানো সিনেমার পোস্টার আছে। কিনতে চাইলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলবেন মিস্টার রিভসকে। তার অফিসের নম্বর আছে?
না, নেই, এখন কোথাও কাজ করেন না। কয়েক হপ্তা আগে একটা স্টুডিওতে। করতেন, চোখে কৌতূহল নিয়ে কিশোরের দিকে তাকাল মহিলা। তাহলে তুমিও ওদেরই একজন?
মানে?
উদ্ভট জিনিস সংগ্রহ কর? মিস্টার রিভসের মত কি যে আজেবাজে জিনিস যোগাড় করে! ওসব কিনে পয়সা খরচ করে ফেলে। অনেক সময় না খেয়েও থাকে। তোমার বয়েস কম। ওসবে জড়িয়ে অহেতুক জীবনটা নষ্ট কোরো না।
বাড়ির ভেতরে টেলিফোন বাজল। জবাব দিতে গেল মহিলা।
রিভস তাহলে একজন সংগ্রাহক, কিশোর বলল। আগেই বোঝা উচিত ছিল। ডেগি কেইন ছিল কিছুদিন ওর সঙ্গে। আর কেইন যদি রোজারের ছদ্মনাম হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে অগ্রগতি হচ্ছে আমাদের।
পুলিসকে জানাব? মুসার প্রশ্ন। নাকি বসে থাকব। রিভস ফিরতে পারে। সংগ্রাহকরা তাদের জিনিসের জন্যে ফিরে আসে, তাই না?
আসে। ইউ অক্ষরের আকৃতিতে তৈরি বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। ঢোকার জায়গা খুজছে মনে হয়। এগিয়ে গিয়ে একটা দরজার ফাঁকে সবে চোখ রাখতে যাবে, এই সময় একটা লোককে আসতে দেখল।
মুসা বলল, আরে! ওই তো, মিস্টার রিভস!
কালো কোঁকড়া চুলওয়ালা একজন লোক, রোজারের সঙ্গে ছিল ডলির। পার্টিতে। তিন গোয়েন্দাকে দেখেই চিনল। থমকে গেল মুহূর্তের জন্যে। তারপর এগিয়ে এল। বাহ, আবার দেখা হয়ে গেল। তা কি জন্যে এসেছ?
ডলি ডিকসনের জন্যে, শান্ত কণ্ঠে বলল কিশোর। কিংবা বলতে পারেন। বেটসি আরিয়াগোর জন্যে।
ওর..ওর কি হলো?
হারিয়ে গেছে। আপনি ভাল করেই জানেন। ইয়ান রোজার নামের লোকটা…
রোজার? ওর আবার কি হল?
ওর নাম রোজার নয়। কোথায় আছে দয়া করে যদি বলেন গিয়ে কথা বলে। দেখতে পারি। আর
কিশোরের এসব নরম কথা ভাল লাগল না মুসার। খপ করে লোকটার হাত চেপে ধরে বলল, লোকটা কোথায়? ডলি ডিকসন কোথায়? ভাল চাইলে জলদি বলুন!,
কি বলছ তাই তো বুঝতে পারছি না। ঘামতে শুরু করেছে লোকটা। দেখো, হাত ছাড় বলছি। নইলে পুলিশ ডাকব।
ডাকুন। আমরা তো সেটাই চাই।
ইয়ে…মানে… রিভসের কতকতে চোখে অস্বস্তি দেখা দিল। শোন… হাতটা ছাড় না, বলছি। ডলির ট্যালেন্ট আছে। কিছুদিন ট্রেনিং দিলেই হয়ে যাবে। সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। আচমকা কণ্ঠস্বর বদলে গেল লোকটার। বলল, এসো, দেখাচ্ছি একটা জিনিস।
একে অন্যের দিকে তাকাল ছেলেরা।
পকেট থেকে চাবি বের করে গ্যারেজের দরজা খুলল রিভস। ওই দেখ! এমন ভঙ্গিতে বলল লোকটা। যেন পবিত্র কোন কিছু সম্বন্ধে বলছে। দেখে চোখ সার্থক কর। পুরানো দুর্গে যে জোম্বি ঢুকেছিল ব্লাড হারভেস্ট ছবিতে, মনে আছে? তারই দৃশ্য। আর ওই কফিনটা ভিলেজ অভ কার্ড থেকে নেয়া। ওটা লন চ্যানি অভিনীত ফ্যান্টম অভ অপেরা থেকে…
এ তো হরর ছবির একটা মিউজিয়ম! হাঁ করে তাকিয়ে দেখছে রবিন।
কিশোর তাকিয়ে রয়েছে বোরিস কারলফ অভিনীত ফ্রাঙ্কেনস্টাইন ছবির পোস্টারের দিকে। একভাবে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে রিভসকে কিছু বলার জন্যে ঘুরেই স্থির হয়ে গেল কিশোর। নেই লোকটা। ওদেরকে কায়দা করে এখানে ঢুকিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে।
মিস্টার রিভস? চেঁচিয়ে ডাকল সে।
জবাবে ঝটকা দিয়ে লেগে গেল গ্যারেজের দরজা। অন্ধকার হয়ে গেল ঘর।
খাইছে! অ্যাইই! চিৎকার করে ডাকল মুসা।
বাইরে তালা লাগানোর শব্দ হল। চেঁচামেচি জুড়ে দিল তিন গোয়েন্দা। লাভ হল না। কেউ সাড়া দিল না। আটকা পড়ল ওরা।
.
কয়েক মিনিট চিৎকার চেঁচামেচি করে ক্ষান্ত দিল ছেলেরা।
হ্যানসন কতক্ষণ অপেক্ষা করবে? মুসা বলল। বেশি দেরি দেখলে নিশ্চয় খুঁজতে আসবে আমাদের। কিন্তু গ্যারেজে দেখার কথা কি ভাববে?
ওর জন্যে বসে থাকতে পারি না আমরা, কিশোর বলল। রিভস তার সঙ্গীকে নিয়ে ফিরে আসতে পারে। পিস্তল-টিস্তল নিয়ে।
তাই তো!
বোরোনোর চেষ্টা করতে হবে আমাদের। জানালা থাকতে পারে। শেষ মাথায়।