উত্তেজনা বাড়ল কিশোরের। এমনকি পেছনে মুসাও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। গলা বাড়িয়ে দিয়েছে রবিন, যাতে দোকানদারের একটা কথাও কান না এড়ায়।
সিনেমায় কাজ করত? কিশোর জিজ্ঞেস করল, হরর ছবির ব্যাপারে কিছু জানত কি?
তুমি কি করে বুঝলে? জানত! অবশ্যই জানত! ড্রাকুলা! মায়ানেকড়ে! কবর থেকে উঠে আসা নানারকম পিশাচ, যারা মানুষের কলজে খায়! বিচ্ছিরি সব ভাবনাচিন্তা!।
হঠাৎ ভুরু কুঁচকে ফেলল লোকটা। সন্দেহ দেখা দিল চোখে। লোকটাকে চেন নাকি? তোমরা কারা? কি চাও?
আমরা…আমরা আমাদের বন্ধুকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, সাবধানে বলল কিশোর। ভালুকটা তারই ছিল। হারিয়ে গেছে সে। তাকে উদ্ধার করা খুব। জরুরী। অনুরোধ করল সে। প্লীজ! একটা উপকার করুন। লোকটাকে কিভাবে জোগাড় করেছেন, বলবেন? কোন এজেন্সির মাধ্যমে?
ভ্রূকুটি করল লোকটা। এমনি এসে হাজির হলো একদিন। একটা চাকরি চাইল। খুব নাকি দরকার। যেকোন কাজ করতে রাজি।
চুরির আগে এসেছিল, না পরে? গেছে কবে? কতদিন কাজ করেছে?
দুদিনও করেনি। কোনমতে তাকে দিয়ে কাজ করাতে না পেরে শেষে বিদেয়। করে দিয়েছে। হপ্তা দুই আগের কথা সেটা। ওসব শুনে তোমার লাভ হবে না।
লোকটার ঠিকানা জানেন? চাপাচাপি শুরু করল কিশোর। কোথায় থাকে? কি নাম বলেছে? মিসেস লেসিংকে চেনেন? চেশায়ার স্কোয়্যারে থাকেন? তিনি আপনার কাস্টোমার?
বাহ! এবার আমার কাস্টোমারদের কথাও জানতে চায়? আরও সন্দিহান হয়ে। উঠল লোকটা। মতলবটা কি তোমার? যাবে, না পুলিশ ডাকব?
প্লীজ, আপনি বুঝতে পারছেন না! ব্যাপারটা জানা খুবই জরুরী। গড়গড় করে ডলির গল্প বলতে আরম্ভ করল কিশোর। কি করে বাড়ি থেকে পালিয়ে ছিল, কি করে ওরা খুঁজে বের করেছিল, কি করে লেসিং হাউসে চাকরি নিয়েছে, বলল। ওর ব্যাগের খেলনা ভালুকটার কথাও বলল। বলল তার উদ্বিগ্ন মা-বাবার কথা। শেষে বলল, মনে হয়, মেয়েটাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। আর এর সঙ্গে ভালুকটার যোগাযোগ থাকতে পারে।
পুরো গল্পটা শোনার পরেও সন্দেহ গেল না লোকটার। বলল, একজন মিস লেসিংকে চেনে। যে লোকটা দুদিন থেকে চলে গেছে তার নাম-ঠিকানা জানার জন্যে চাপাচাপি করতে লাগল কিশোর। কিছুতেই তাকে নিরস্ত করতে না পেরে রেগেমেগে শেষে গিয়ে পেছনের ঘর থেকে কতগুলো কাগজপত্র নিয়ে এল লোকটা।
একটা অফিশিয়াল ফর্ম রয়েছে ফাইলে, যেটা সরকারের কাছে জমা দেয় কর্মচারীরা। নাম আছে, সোশাল সিকিউরিটি নাম্বার আছে। জ্যাক ব্রাউন নামে ফর্ম পূরণ করেছে। আরেকটা কাগজ দেখাল দোকানদার, ওটাতে নিজের হাতে নাম ঠিকানা লিখেছে ব্রাউন।
টাকা নিয়ে যায়নি, লোকটা বলল। যে দুদিন কাজ করেছে, তার চেক ডাকে পাঠিয়ে দিয়েছি।
ফেরত এসেছে?
না।
এই ব্রাউন লোকটা দেখতে কেমন? রোগাপাতলা, কান ঢেকে ফেলা লম্বা। চুল। তাই না?
না। বেঁটে। পেটমোটা, হোঁকাই বলা চলে। ছোট করে হাঁটা কালো চুল। কোকড়া। দেখ, আমার এসব পছন্দ হচ্ছে না
আর একটা কথা, হাত তুলল কিশোর। টেডি বিয়ারটা কোথায় পেয়েছিলেন? আপনি তৈরি করেননি, তাই না?
না। একজন ডিলারের কাছ থেকে কিনেছি। এইচ. কে. ইমপোর্টারস।
সেটা মিসেস. লেসিংকে দিয়েছিলেন?
আর সহ্য করল না দোকানদার। বেরোও!
দোকান থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। বেরোনোর আগে লক্ষ্য করল, রিসিভার তুলে ডায়াল করছে লোকটা।
পুলিশকে ফোন করছে, অনুমান করল মুসা।
শুনলই না যেন কিশোর। মোড়ের কাছে পৌঁছল। মেরুন রঙের একটা অডি গাড়িকে দেখল সরে যাচ্ছে। রাস্তা পেরিয়ে অন্য পাশে এল ওরা। রোলস রয়েস। নিয়ে যেখানে অপেক্ষা করছে হ্যানসন।
কিশোর বলল, ফারের একটা পোশাক কিনেছিলেন মিস লেসিং। সেই সাথে গিয়েছিল মিংকের ভালুকটা। তিনি ইউরোপে চলে গেলে ভালুকটা পেয়েছিল ডলি। কিংবা হয়ত চেয়েছিল, দিয়ে দিয়েছেন মিস লেসিং। বিনে পয়সায় পেয়েছেন তিনি। ওটা। খেলনা দিয়ে কি করবেন? মেয়েটা যখন চেয়েছে, দিয়েই দিই, এরকম ভেবেই হয়ত দিয়েছেন। এইবার আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে দোকানদারের অলস কর্মচারীকে।
ঠিকানাটা মনে আছে তো? জিজ্ঞেস করল রবিন। যদিও জানে কিশোর। পাশা একবার কোন জিনিস পড়লে সহজে ভোলে না।
আছে। সান্তা মনিকার একটা গলিতে। একটা অ্যাপার্টমেন্ট নাম্বার রয়েছে। তার মানে কোন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিঙে তার বাসা।
নামটাও বানিয়ে লিখতে পারে, আশাবাদী হতে পারছে না মুসা, ঠিকানাটাও। অহেতুক গিয়ে ঘুরে আসব তাহলে।
হাসল কিশোর। একটা কথা ভুলে যাচ্ছ। বেতনের চেক পাঠিয়েছিল দোকানদার। সেটা ফেরত আসেনি। তারমানে সান্তা মনিকার ওই ঠিকানায় কেউ আছে যে ওটা গ্রহণ করেছে। হাত নেড়ে বলল, এখন আমাদের কাজ, চেকটা যে নিয়েছে, তাকে খুঁজে বের করা। হয়ত এর ওপর নির্ভর করছে ডলির বাঁচামরা!
.
১৫.
বাড়িটা খুঁজে বের করতে অসুবিধে হল না। সাগরের তীর থেকে দশ ব্লক দূরে। একটা অ্যাপার্টমেন্ট বাড়ির নিচতলায় জ্যাক ব্রাউনের ঘর।
দ্বিধা করল মুসা। কি করব?
বেল বাজাব, কিশোর বলল।
কিন্তু কলিং বেলের জবাব দিল না কেউ।
মিনিট দুই অপেক্ষা করে জানালার কাছে নাক চেপে ধরল রবিন। বই আর, কাগজপত্রে ঠাসা, গাদাগাদি করে রয়েছে মেঝেতে, পুরানো আসবাবপত্রের ওপরে। ছবির ফিল্ম রাখার কয়েকটা ক্যানূ পড়ে রয়েছে একধারে। বুককেসের ওপর একটা মানুষের খুলি। খুলির ওপরের দেয়ালে একটা পোস্টার। কালচে রঙের একটা কিম্ভুত জীবের ছবি, মুখটা সবুজ। কবর থেকে বেরিয়ে আসছে।