অল্প বয়েসী একটা সুন্দরী মেয়ে কাউন্টারে রয়েছে। সে ওদেরকে বলল, বেভারলি হিলের খেলনার দোকানগুলোতে খোঁজ নিতে। ওখানে নাকি মিংকের তৈরি টেডি ভালুক বিক্রি হয়। কয়েকটা দোকানের নাম ঠিকানাও দিল।
তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার রাস্তায় বেরোল ছেলেরা। একটা অডি গাড়ি চলে গেল সামনে দিয়ে। তারপর রাস্তা পেরিয়ে বাসস্টপে চলে এল ওরা। ধপাস করে বেঞ্চের ওপর বসে পড়ল মুসা। হতাশ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল, হবে না এভাবে। বুঝলে, হবে না। সারা জীবন ধরে খুঁজলেও পাব না।
হবে, কিশোর, অতটা নিরাশ হতে পারল না। তবে বাসে করে ঘুরে কূল করতে পারব না। একটা গাড়ি লাগবে।
.
১৪.
রোলস রয়েস নিয়ে হাজির হয়ে গেল হ্যানসন। তিন গোয়েন্দাকে বেভারলি হিলে নিয়ে গেল। পার্ক করল বেভারলি ড্রাইভের একটা লোডিং জোনে।
আমি এখানেই থাকি, বলল সে। দরকার হলে ডাকবে। বাড়িটা ঘুরেই গাড়ি বের করে নিয়ে যেতে পারব।
দুজন মহিলা হেঁটে চলল। একজনের হাতে একটা গাইডবুক। অন্যজনকে বলল, এই, শোন, এখানকার সব চেয়ে সম্ভ্রান্ত অঞ্চল বেভারলি হিল। অনেক দামি দামি ফিল স্টারের বাড়ি এখানে। দোকানপাটগুলো… সাড়া না পেয়ে পেছনে তাকিয়ে মাঝ পথে কথা থামিয়ে দিল সে।
ইরিনা! চিৎকার করে উঠল সে। গাড়িটা কি দেখেছ! তোলো তোলো, ছবি তোলো।
দেখেও না দেখার ভান করল হ্যানসন। হেঁটে যাচ্ছে তিন গোয়েন্দা। ঝট করে ক্যামেরা তুলে রোলস রয়েসটার একটা ছবি তুলে ফেলল ইরিনা।
যেখানে গাড়িটা পার্ক করা হয়েছে তার কাছেই পাওয়া গেল দুটো খেলনার দোকান। প্রথমটাতে খুঁজে কিছু পেল না গোয়েন্দারা। পরেরটাতে চামড়ার প্যান্ট পরা একজন লম্বা লোক জানাল একটা মিংকের তৈরি টেডি বিয়ার দেখেছে।
বিক্রির জন্যে ছিল না অবশ্য ওটা, লোকটা বলল। আমাদের একজন। কাস্টোমার বোনাস হিসেবে পেয়েছে ওটা। উইলশায়ারের কোণের একটা দোকান। থেকে একটা ফারের জ্যাকেট কিনেছিল। জ্যাকেটটা তার বাড়িতে ডেলিভারি। দেয়ার সময় ভালুকটা চলে গেছে ওটার সঙ্গে। দোকানের তরফ থেকে উপহার।
ও, কিশোর বলল।
ওখান থেকে ইচ্ছে করলে ওরকম ভালুক কিনতে পারো। যদি আরও থাকে।
থ্যাঙ্ক ইউ।
অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস আমাদের কাছেও আছে। দরকার হলে চলে। এসো। এই ধরো না মাউজ হাউসের কথাই। অনেক আছে আমাদের।
কেন? মুসা জানতে চাইল, ইঁদুর পোষার জন্যে?
খেলনা ইঁদুর। বেভারলি হিলে জ্যান্ত ইঁদুর রাখা নিষিদ্ধ।
নাক মুখ কুঁচকে এমন একটা ভঙ্গি করল মুসা, যেন বোঝাতে চাইল, সবখানেই পাগল থাকে। নইলে খেলনা ইঁদুরের আবার বাড়ি কেন?
গাড়িতে ফিরে এল ওরা। একজন পথচারীকে বোঝাচ্ছে হ্যানসন, গাড়িটা, ছবিতে ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়নি। বিশ্বাস করাতে পারছে না লোকটাকে। তিন গোয়েন্দাকে দেখে হাঁপ ছেড়ে বাচল। তাড়াতাড়ি ওদেরকে তুলে নিয়ে ছেড়ে দিল। গাড়ি। উইলশায়ারের দিকে যেতে যেতে বলল, বেভারলি ড্রাইভ আস্তে আস্তে পর্যটন কেন্দ্র হয়ে যাচ্ছে। ট্যুরিস্টদের উৎপাত বাড়ছে।
কয়েকবার করে আমাকে সহ গাড়িটার ছবি তুলে নিয়ে গেছে কয়েকজনে, জানাল সে। লোকের ধারণা, আমি ফিল্ম স্টার।
লোকের দোষ নেই, রবিন বলল। গাড়িটা যেমন চোখে পড়ার মত। আপনার ইউনিফর্ম তেমনি। এমনকি বেভারলি হিলের জন্যেও অস্বাভাবিক।
অস্বীকার করছি না, হেসে বলল হ্যানসন।
উইলশায়ারের কোণের দোকানটার নাম উচ্চারণ করাই কঠিনঃ, অনস্কি ফ্রেরিজ। সাদাটে ধূসর দেয়াল, ধূসর কার্পেটে গোড়ালি দেবে যায়। ছেলেরা ঢুকে দেখল, গলায় দরজির ফিতে ঝোলানো একজন লোক যুবক বয়েসী একজনকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। কিছুতেই বুঝতে চাইছে না যুবক। মুখ গোমড়া করে একনাগাড়ে অভিযোগ করে চলেছে। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ভাল না হলে সে কিভাবে। কাজ করবে?
টেডি বিয়ার? কিশোরের প্রশ্ন শুনে লোকটা বলল। কিছু ভালুক ছিল আমার কাছে। তবে এখন একটাও নেই। সব নিয়ে গেছে।
নিয়ে গেছে?
চুরি। ও জানো না? জানবেই বা কি করে। পত্রিকায় ছাপা হয়নি। চুরিদারি আজকাল আর কোন ব্যাপারই না।
উত্তেজিত হলো কিশোর। চুরি? কবে?
প্রথমে কিছু ফরি চুরি করেছে। হপ্তাখানেক আগে। তারপর চারদিন আগে কিছু রেকর্ড চুরি করে নিয়ে গেছে। কেন? তোমার এসব জানার আগ্রহ কেন? খেলনা ভালুক চাও তো? খেলনার দোকানে চলে গেলেই পারো।
কিন্তু আমার বন্ধুরটা ছিল ফারের ভালুক। আসল রোমের তৈরি, বুঝতেই পারছেন। আমার কাছে রেখে গিয়েছিল। কে জানি আমাদের বাড়িতে ঢুকে নিয়ে গেছে।
মাথা ঝাঁকাল লোকটা। ঠিক আমার দোকানে যা ঘটেছে। পয়লা বার যখন চুরি করল, ফারের সঙ্গে খেলনাগুলোও নিয়ে গেল। তারপর এল আমার ফাইল ঘাঁটাঘাঁটি করতে। সারা মেঝেতে ছড়িয়ে ফেলে গেল। কিছু কাগজ এখনও পাচ্ছি না। ফারগুলো ভাগ্যিস বীমা করানো ছিল। ওগুলো নিয়েছে, নাহয় বুঝলাম দামি জিনিস বলে। কাগজপত্র ঘাটল কেন? সব শয়তানী। আসলে কাজের লোকের ওপর বোধহয় রাগ আছে। ফলে যারা কাজ করে খেতে চায় তাদের সঙ্গে নষ্টামি শুরু করেছে।
এটা যুক্তির কথা নয়। তবু কিশোর বলল, হবে হয়ত।
সকেট থেকে প্লাগ খুলে যন্ত্র নিয়ে পেছনের ঘরে চলে গেল যুবক।
ওই যে দেখ না, যুবকের কথা বলল লোকটা। এর কথাই ধরো। সে সৎও। হতে পারে আবার অসৎও হতে পারে, কি করে বুঝবে? কেবল অনুমান করতে পার। আর কিছু করার নেই। এ তো কাজটা অন্তত ঠিকভাবে করে, আগেরটা তা ও করত না। ওকে কাজ করতে বলতাম, চুপ করে থাকত। যা-ই বলতাম, কিছুই বলত না। এর চেয়ে কবর থেকে একটা লাশকে তুলে নিয়ে এসে যদি বকাঝকা কুরতাম, কাজ হত। তবে সিনেমার ব্যাপারে বেশ ভাল জ্ঞান ছিল। আমি সিনেমা দিয়ে কি করব, বল?