খেলনা ভালুক! আচমকা বলে উঠল কিশোর।
ওর দিকে তাকিয়ে রইল রবিন আর মুসা।
ওটার আবার কি হলো? জিজ্ঞেস করল মুসা।
ওটাই চায় তথাকথিত দানবটা, কিশোর বলল। সাধারণ খেলনা নয় ওটা। অন্যান্য টেডি বিয়ারগুলো বানানো হয় তুলো দিয়ে, কিন্তু ওটা আসল রোম।
তাতেই বা কি? যদি সবচেয়ে দামি মিংক দিয়েও বানানো হত, তাতেই বা কি হত? এমন কিছু দাম হত না যার জন্যে এতসব ঝামেলা করতে চাইবে কেউ।
হয়ত ভালুকটার ভেতর কিছু আছে।
এইবার বলেছ একটা কথা প্রায় চেঁচিয়ে উঠল রবিন। তাই হবে। রত্ন! অলঙ্কার। ড্রাগ! যেকোন জিনিস হতে পারে। রোজার আর রিভস জানে, একটা খেলনা ভালুকের ভেতরে সাংঘাতিক দামি কিছু লুকানো রয়েছে। সেটা খুঁজতে লেসিং হাউসেও গিয়েছিল, ডলির জন্যে পারেনি। সে দেখে ফেলে পুলিশে খবর দিয়েছিল। তারপর অন্যভাবে ঢুকেছে ওই বাড়িতে। খুঁজেছে, পায়নি। তখন ধরে। নিয়ে গেছে ওকে জিজ্ঞেস করার জন্যে। ও বলেছে ওটা আমাদের কাছে থাকতে পারে। তখন এসেছে ইয়ার্ডে। আমাদের অনুসরণ করেই এখানকার ঠিকানা বের করেছে ওরা।
ওদিকে ডলিকে আটকে রেখেছে, যোগ করল মুসা। যাতে সে পুলিসকে বলে দিতে না পারে।
চমৎকার থিওরি, কিশোর বলল। সব খাপে খাপে মিলে যাচ্ছে। এখন। বাথরুমের তোয়ালেতে রক্তের কথাটায় আসা যাক।
হ্যাঁ। ওটাও সহজ। জোরাজুরি করতে গিয়ে কেউ জখম হয়েছিল। কেটে গিয়ে রক্ত বেরিয়েছে। তোয়ালে দিয়ে মুছেছে তখন।
টগবগ করে ফুটতে আরম্ভ করেছে কিশোর। রিসিভার তুলে নিল। চকচক করছে চোখ। আমাদের এখন জানতে হবে খেলনাটা ডলির হাতে এল কিভাবে? এটা জানা জরুরী। হয়ত এর সাহায্যেই ওই রহস্যময় দানবকে ধরতে পারব। আমরা।
দ্রুত ডিরেক্টরির পাতা ওল্টাল কিপোর। এই যে, পেয়েছি। রকি বীচ ইন।
ওপাশ থেকে রিসিভার তুলতেই মিস্টার ডিকসনকে চাইল সে। তিনি ধরতে বললেন, কিশোর পাশা বলছি। একটা সূত্র বোধহয় পেয়েছি, যেটা কাজে লাগতে পারে। ডলির ব্যাগের খেলনা ভালুকটার কথা মনে আছে? ফ্রেনসো থেকে আসার সময় কি ওটা সঙ্গে নিয়েছিল? ভালুকটা আসল রোম দিয়ে তৈরি।
কি ভালুক?
টেডি বিয়ার।
এক মিনিট। নরিয়াকে জিজ্ঞেস করে দেখি।
ওপাশে আলোচনা চলছে, কথাগুলো বুঝতে পারল না কিশোর। একটু পরেই লাইনে ফিরে এলেন ডিকসন। না, সে-ও বলতে পারছে না। যতদূর জানি, কাপড় আর মেকআপের জিনিসগুলো ব্যাগে ভরেই বাড়ি ছেড়েছে ও। কেন?
আমরাও শিওর নই, মিস্টার ডিকসন। তবে ভালুকের ব্যাপারে জানাটা জরুরী হয়ে পড়েছে। যাই হোক, নতুন কিছু জানতে পারলে জানাব।
লাইন কেটে দিল কিশোর। সহকারীদেরকে বলল, ভালুকটা এখান থেকেই জোগাড় করেছে ও। কোত্থেকে, সেটা বের করব কিভাবে?
পিজা শ্যাক! রবিন বলল। ওখানকার ওরা কিছু জানতে পারে।
ঠিক বলেছ। ওখান থেকেই শুরু করতে পারি।
কয়েক মিনিট পরেই কোস্ট হাইওয়ে ধরে সাইকেল চালিয়ে চলল তিন। গোয়েন্দা। পিজা শ্যাকে ঢুকে কয়েকজন পরিচিতকে দেখল। ওরা হাত নাড়ল। কাউন্টারের ওপাশের মহিলা হাসল।
ওরা এলে খুব একটা খায়টায় না, হেসে মিস্টার জেনসেনকে বলল মহিলা। তবে ভাল ছেলে। ভদ্র।
মন্তব্য করলেন না ম্যানেজার। নজর রাখলেন তিন গোয়েন্দার দিকে। ওরা। ছেলেমেয়েদেরকে খেলনা ভালুকটার কথা জিজ্ঞেস করছে যে, সেটাও শুনলেন।
টেডি বিয়ার? একটা ছেলে বলল, কি বল! অতবড় একটা মেয়ে ব্যাগের ভেতর খেলনা বয়ে বেড়াবে?
এতে অবাকের কি আছে? গাঢ় লাল লিপস্টিক লাগানো একটা মেয়ে বলল। অনেকেই বয়েস হলেও বাচ্চাই থেকে যায়। অন্তত ছোটদের কিছু কিছু স্বভাব থেকে যায়। বেটিটা একটু পাগলাটে ধরনেরই। ওর পক্ষে সব সম্ভব। আমি দেখেছি ব্যাগে। জিজ্ঞেস করেছিলাম কোথায় পেয়েছে। বলেনি।
অনেক দিন ধরে ছিল তার কাছে? জানতে চাইল কিশোর।
শ্রাগ করল মেয়েটা। দুএক দিন হবে।
আর কেউ কিছু বলতে পারল না। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে পিজা শপ থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা।
এবার? বেরিয়েই প্রশ্ন করল মুসা, আর কাকে জিজ্ঞেস করব?
খেলনার দোকানে যাওয়াই তো উচিত, জবাব দিল কিশোর।
গুঙিয়ে উঠল মুসা। জানো, কটা দোকান আছে?
জানি। গোয়েন্দাদের কাজটাই কঠিন।
পিজা শপ থেকে কোয়ার্টার মাইল দূরেই পাওয়া গেল প্রথম খেলনার দোকানটা। ওখান থেকেই শুরু করল তিন গোয়েন্দা। ওখানে ভালুকের সমাহার দেখে আরেকবার গোঙাল মুসা। খাইছে! কি করে জানব? এত ভালুক যারা বিক্রি করে তাদের কি আর মনে থাকবে?
দেখাই যাক না, কিশোর বলল। তবে এখানে জিজ্ঞেস করে লাভ হবে না। একটাও রোমশ ভালুক নেই। রোম দিয়ে তৈরি নয়, সব তুলো।
তবু, এসেছি যখন জিজ্ঞেস করেই যাই, রবিন বলল।
দোকানের মালিক এক মহিলা। একটা খেলনা ভালুকের খোঁজে বেরিয়েছে ওরা শুনে একটু অবাকই হল। কিশোর বলল, আসল রোম। মিংক হতে পারে।
এতটাই দামি?
কি জানি, বুঝতে পারছি না। গাঢ় রঙের রোম। আমাদের এক বন্ধুর কাছে। দেখেছি। এখান থেকেই কিনে নিল কিনা জানতে এসেছিলাম।
না। এখানে ওরকম জিনিস পাবে না। সান্তা মনিকায় চলে যাও। বন্দরের ধারে কয়েকটা বড় বড় দোকান আছে। দামি খেলনা বিক্রি করে একমাত্র ওরাই। আর ওদের কাছে যদি না থাকে, বলে দিতে পারবে কোথায় পাওয়া যাবে।
সাইকেল রেখে বাসে করে সান্তা মনিকায় এল তিন গোয়েন্দা। বন্দরের কাছে প্রথম যে দোকানটা দেখল, ওটাতেই ঢুকল। পরে এক এক করে বাকিগুলোতে ঘুরবে। অনেক ধরনের খেলনা ভালুক দেখতে পেল ওখানে। মিংকের তৈরি টেডি বিয়ার অবশ্য পেল না।