ব্যাগের ভেতরে আবার জিনিসগুলো ভরতে আরম্ভ করল সে।
হঠাৎ ট্রেলারের বাইরে কি যেন নড়ে উঠল।
থমকে গেল সে। কান পাতল। কি নড়ছে? জঞ্জালের ভেতর কোন ছোট জানোয়ার ঢুকল?
আবার শোনা গেল শব্দটা। এতই মৃদু, বাতাসের ফিসফিসানি বলেই মনে হয়। কিংবা কেউ রোধহয় নিঃশ্বাস ফেলল জোরে। ঘাপটি মেরে রয়েছে কিশোরের বেরোনোর অপেক্ষায়।
নাহ, দেখতে হচ্ছে।
আস্তে করে উঠে দাঁড়াল সে। ধাক্কা লেগে চেয়ারটা যাতে সরে গিয়ে শব্দ না হয়ে যায়, খেয়াল রাখল। ঘুরে চলে এল ডেস্কের আরেক পাশে। আবার কান পাতল।
নীরব হয়ে আছে। আর হচ্ছে না শব্দটা।
কোন জানোয়ারই হবে। ইঁদুর, বেড়াল, কিংবা ছুঁচো। কাঠবেরালিও হতে পারে। মাঝে মাঝেই ওগুলোকে ইয়ার্ডে ঢুকতে দেখেছে সে।
হেডকোয়ার্টার থেকে সব চেয়ে তাড়াতাড়ি বেরোনোর পথটা হল সহজ তিন। সেই পথ ধরে চত্বরে বোরোল সে। ছোট জানোয়ার কিংবা রহস্যময় অনুপ্রবেশকারীকে দেখার আশায় তাকাল এদিক ওদিক। দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে আবার এসে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে। প্রথমেই তাকাল টেবিলের দিকে, যেখানে ব্যাগটা রেখে গিয়েছে।
ওটা আছে জায়গামতই। কিন্তু একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে ডেস্কের ওপর। টেলিফোনের কাছে খুলে রয়েছে একটা নোটপ্যাড। তারমানে সে যখন বাইরে বেরিয়েছিল, চুপ করে এখানে ঢুকে পড়েছিল কেউ। নোটপ্যাডটা খুলে দেখেছে ওটাতে কি লেখা রয়েছে। শিরশির করে উঠল মেরুদণ্ডের ভেতর।
তেমন জরুরী কিছু লেখা নেই। তবে কেউ একজন ঢুকেছিল এটা স্পষ্ট। হঠাৎ করেই টের পেয়ে গেল, যে ঢুকেছে, সে এখনও ভেতরেই রয়েছে।
স্থির হয়ে গেল কিশোর। বুঝতে পারছে, পেছনেই রয়েছে অনুপ্রবেশকারী। ছোট ডার্করুমটার দিকে পেছন করে আছে সে। দরজায় পর্দা ঝুলছে। তার ওপাশেই রয়েছে কেউ অপেক্ষা করছে..নিঃশ্বাস ফেলছে…
নিঃশ্বাসটা এতই ধীর, প্রথমে বুঝতেই পারেনি কিছু সে। আস্তে আস্তে জোরাল হয়েছে। শব্দটা অদ্ভুত। খসখসে। হালকা ভাবে কোন জিনিস সিরিশ কাগজে ঘষা হচ্ছে যেন।
খলখল করে একটা শয়তানী হাসি যেন ফেটে পড়ল ঘরের ভেতরে।
লাফ দিয়ে পর্দার কাছ থেকে সরে গেল কিশোর। চরকির মত পাক খেয়ে ঘুরে তাকাল।
টান দিয়ে সরিয়ে দেয়া হয়েছে পর্দা।
ভয়ঙ্কর একটা জিনিসের ওপর চোখ পড়ল তার। আঁশে ঢাকা শরীর। চোখা। দাঁত। চেহারার কোন আকৃতি নেই। গলে গলে পড়ছে মাংস। যেন হরর ছবি থেকে উঠে আসা জীবন্ত এক আতঙ্ক।
আবার হেসে উঠল ওটা। ঈগলের মত বাঁকা আঙুলওয়ালা একটা থাবা। বাড়িয়ে দিল কিশোরকে ধরার জন্যে।
সরার চেষ্টা করতে গিয়ে ডেস্কের সঙ্গে বাড়ি খেল সে। ঝট করে মাথা নামিয়ে ফেলল।
হাসতে হাসতেই আঘাত হানল বীভৎস প্রাণীটা।
আঘাতটা লাগল কিশোরের গায়ে। মনে হল, ধাতব ফাইলিং কেবিনেটটা ছুটে আসছে তার সঙ্গে মোলাকাত করার জন্যে।
-কপাল ঠুকে গেল ওটাতে। এরপর সব অন্ধকার।
.
১৩.
ব্যাগটার জন্যেই এসেছিল, কিশোর বলল। হুঁশ ফিরতে দেখি ওটা নেই। চাচীকে যেদিন আলমারির ভেতরে আটক করেছিল, সেদিনও ওটা খুঁজতেই এসেছিল, ব্যাগটা নেই দেখে বুঝলাম। ওটার জন্যেই কিডন্যাপ করা হয়েছে ভলিকে। তারপর, আমাদের হেডকোয়ার্টারে ঢুকে ওটা পেয়ে নিয়ে চলে গেছে।
হুঁশ ফিরে পেয়েই দুই সহকারীকে ফোন করেছে গোয়েন্দাপ্রধান। ছুটে চলে এসেছে ওরা। বসে আছে এখন কিশোরের মুখোমুখি।
চেহারা এখনও ফ্যাকাসে হয়ে আছে কিশোরের। ধাক্কাটা পুরোপুরি. সামলে। উঠতে পারেনি। আর আমি গাধা, আবার বলল সে। কাজটা সহজ করে দিলাম তার জন্যে। সহজ তিনের পথ খুলে দিয়ে। ঘরে ঢুকে লুকিয়ে ছিল ওটা।
ভয়ানক কুৎসিত চেহারাটার কথা মনে হতেই গায়ে কাঁটা দিল তার।
মুসার মনে পড়ল বন্ধকী দোকানের সেই মায়ানেকড়ের চেহারার কথা। জিজ্ঞেস করল, একই চেহারার? ওই যে, সেদিন দেখেছিলাম, মায়ানেকড়ে?
না। অনেকটা শান্ত হয়ে এসেছে কিশোর। তবে একই লোক হতে পারে। মুখের রং ফিরতে শুরু করেছে তার। রোজার আর রিভস হরর ছবির ছাত্র। অন্তত ওদের কথাবার্তায় সে রকমই মনে হয়েছে। সুতরাং ছদ্মবেশে অপরাধ যদি করতেই আসে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
তবে, রবিন বলল। লেসিং হাউসে যে চোরটা ঢুকেছিল, সে আর দশটা চোরের মতই সাধারণ। মোজা মাথায় গলিয়ে চেহারা ঢেকে অনেক চোরই চুরি করতে আসে।
ওই চোরটাকে সাধারণ ভাবতে পারছি না ডলির জন্যে। তার সঙ্গে কোনভাবে যোগাযোগ থাকতে পারে। কাজেই চোরটাও একই লোক হতে পারে।
ঠিক! একমত হল মুসা। কিন্তু দানবটা ব্যাগ নিল কেন? কি চায়? বন্ধকীর দোকানের রশিদগুলো?
যেগুলো বইয়ের ভেতরে রেখে দিয়েছিল ডলি? ভ্রূকুটি করল কিশোর। আমার তা মনে হয় না। যেসব জিনিস বন্ধক রেখেছে, একেবারেই সাধারণ। দাম আর কত। একটা আংটি, একটা মেডেল, আর একটা সোনার পিন। ওগুলো রেখে মাত্র কয়েকটা ডলার পেয়েছে ডলি। নাহ, ওই রশিদের পেছনে কেউ লাগেনি।
তাহলে কিসের জন্যে? বইটার জন্যে? উফ, মাথাই ধরে যাচ্ছে আমার।
ওই বই যে কোন লাইব্রেরিতে গেলেই মেলে, রবিন বলল। তবে বিশেষ ওই বইটাতে যদি কিছু লেখা থাকে তাহলে আলাদা কথা। নোটফোট লিখে থাকতে পারে ডলি। কিন্তু কিসের নোট? বয়েস কম। কোন অপরাধ করেছে বলে মনে হয় না। লুকানোর নিশ্চয় কিছু নেই। বাড়ি থেকে ওরকম অনেকেই পালায়। সে-ও পালিয়েছে। একটা উদ্দেশ্যও আছে তার। ছবিতে কাজ করতে চায়।