লিখে নিন।
ঠিকানা লিখে নিয়ে কিশোরকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাইন কেটে দিলেন মিস্টার ডিকসন।
মেয়ে হারিয়েছে। প্রায় চিৎকার করে বলল মুসা। চমৎকার আরেকটা কেস পেয়ে গেল বোধহয় তিন গোয়েন্দা, কি বলো?
বইটার পাতা ওল্টাতে আরম্ভ করেছে কিশোর। জানি না। কয়েকটা রশিদ বেরোল ভেতর থেকে। দেখে নিয়ে মাথা দোলাল সে, এটা হাই-লো লোন জুয়েলারি কোম্পানির। আর এটা ক্যাশ-ইন-আ-ফ্ল্যাশ, ইক। বন্ধকী কারবার করে। মনে হচ্ছে মেয়েটার টাকার খুব দরকার পড়েছিল।
রশিদগুলো ভেতরে রেখে বইটা বন্ধ করে নামটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। সাকসেস গ্রু ইমেজিং। নাম শুনেছি বইটার। লেখক বলতে চান, শুধু কল্পনা করেই মনের জোরে তুমি যা চাইবে তাই পেয়ে যাবে। মনের মত কাজ চাও? পেয়ে যাবে। বাড়ি চাও..
কিংবা সিনেমার অভিনেত্রী হতে চাইলেও হয়ে যাবে, রবিন বলল।
তাই। আবার বইটা খুলল কিলোর। একটা বিশেষ অধ্যায়ের বিশেষ জায়গা পড়তে শুরু করল, কি ভাবে উন্নতি করা যায়। ইচ্ছে শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যা ইচ্ছে তাই পাওয়া যায়।
খাইছে! হেসে ফেলল মুসা। এ তো দেখছি আলাউদ্দিনের আশ্চর্য চেরাগ। উইল পাওয়ার খাটাতে খাটাতে বাড়ি যাই। দেখব, একটা আস্ত কেক দিয়ে ফেলে নাকি মা।
.
০২.
পরদিন সকালে ইয়ার্ডের অফিসের সামনে জটলা করছে তিন গোয়েন্দা। গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকল একটা টয়োটা। ড্রাইভিং সিট থেকে বেরিয়ে এসে কিশোর পাশাকে খুঁজলেন এক ভদ্রলোক। লম্বা, মাথায় বাদামী চুল পাতলা হয়ে আসছে, চেহারায়। বুদ্ধির ছাপ। পাশের প্যাসেঞ্জার সিট থেকে নামলেন এক মহিলা। কালো চুল। চোখেমুখে প্রচণ্ড উদ্বেগের ছাপ।
মিস্টার ডিকসন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
হ্যাঁ। তুমিই ডলির ব্যাগটা পেয়েছিলে তো?
আমি না, রবিন পেয়েছে। দুই সহকারীর পরিচয় করিয়ে দিল, কিশোর। অফিস থেকে বেরিয়ে এলেন মেরিচাচা। ডিকসনদের মেয়ে হারিয়েছে শুনে তাদেরকে ভেতরে ডেকে নিয়ে গেলেন বসে কথা বলার জন্যে।
টেবিলে ব্যাগটা রেখে দিয়েছে কিশোর। মিসেস ডিকসন দেখে চিনতে পেরে মাথা ঝাঁকালেন। ও রকম ব্যাগ পছন্দ করে ডলি। হালকা। ভেতরের জিনিসগুলো ঢেলে দিলেন টেবিলে। খেলনা ভালুকটার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকালেন। এটা কিছু বলতে পারবে না।
লাইব্রেরির বইটা তুলে নিলেন তিনি। ভেতর থেকে বের করলেন রশিদগুলো। একবার দেখেই চেঁচিয়ে উঠলেন, পিটার, ও না খেয়ে আছে! পথেঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে ভিখিরি আর চোর-বদমাশদের সঙ্গে! মরবে তো!
রশিদগুলো দেখে ডিকসনও গম্ভীর হয়ে গেলেন। বললেন, অনেক কারণেই মানুষ জিনিস বন্ধক রেখে টাকা ধার নেয়। না খেয়ে আছে, এটা জোর দিয়ে বলতে পারো না।
হাতে করে একটা খাম নিয়ে এসেছেন তিনি। টেবিলের ওপর উপুড় করে ঢেলে দিলেন। একগাদা ফটোগ্রাফ। ডলির ছবি। আঠারো বছর বয়েস। সৈকতে বেশি যাওয়ার অভ্যেস থাকলে নিশ্চয় তাকে দেখেছ।
তিন গোয়েন্দার হাতে হাতে ছবিগুলো ঘুরতে থাকল। সুন্দর চেহারার কালো চুল আর সবুজ চোখওয়ালা একটা মেয়ের ছবি। একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে বাজিয়ে দলের ড্রামবাদকের পোশাক পরা। কড়া করে লিপস্টিক লাগিয়েছে। কোনটাতে ব্যালে ড্যান্সার, কোনটাতে তীর্থযাত্রী। দশ বছর বয়েসে তোলা ছবি আছে, আছে তের বছর বয়েসে তোলা মিস টিন ফ্রেনসো প্রতিযোগিতায় রানার্স আপ হওয়ার ছবি।
ছবিগুলো অবাক করল ছেলেদের।
একেক ছবিতে একেক রকম লাগছে, মুসা বলল। কোনটা যে ওর আসল চেহারা বোঝাই মুশকিল।
চুলের কারণে লাগছে এরকম, বুঝিয়ে দিলেন মিসেস ডিকসন। কখনও লম্বা, কখনও ছোট। কখনও সাদা লিপস্টিক, কখনও গাঢ় লাল, কখনও কমলা। তবে সবুজ আর নীল কখনও লাগাতে দেখিনি। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে চুলেও রঙ লাগায়নি।
কাঁদতে শুরু করলেন মিসেস ডিকসন।
পুলিশকে জানিয়েছি, ডিকসন বললেন। কিছুই করতে পারছে না। সৈকতে যে জায়গায় ব্যাগটা পেয়েছ, সে জায়গাটা দেখতে চাই। তারপর লাইফগার্ডদের সঙ্গে কথা বলব।
মাথা ঝাঁকাল কিশোর। সার বেঁধে গিয়ে উঠল ডিকসনের গাড়িতে। সারাটা সকাল তিনজনেই বসে বসে দেখল সৈকতময় ঘুরে বেড়াচ্ছেন ডিকসন দম্পতি। লাইফগার্ড আর অল্প বয়েসী রৌদ্র স্নানার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। বেলা একটা নাগাদ হতাশ এবং ক্লান্ত হয়ে পড়লেন দুজনে।
ছবিটা কেউ চিনতে পারল না, ডিকসন বললেন।
ছবিতে যা দেখাচ্ছে মেয়েটা তার চেয়ে সুন্দর, মিসেস বললেন। গোলমালটা বোধহয় সেখানেই। আবার কাঁদতে শুরু করলেন তিনি।
খুঁজে ওকে বের করবই, বললেন ডিকসন। ছেলেদের দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, এ শহরে খুঁজতে কতটা সময় লাগবে, বলতে পার? বাড়ি বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞেস করব। সুপারমার্কেটগুলোতে খোঁজ নেব। হ্যাণ্ডবিল বিলি করব। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেব।
এখানকার পুলিশ চীফ ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন, পরামর্শ দিল রবিন। খুব ভাল লোক।
সুতরাং থানায় চললেন ডিকসন দম্পতি। ফ্লেচারের সঙ্গে দেখা করে মেয়ে হারানোর কথা জানালেন।
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে ক্যাপ্টেন বললেন, আজকালকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে এই হলো সমস্যা। একটা ছবিতে টোকা দিয়ে বললেন, এটা রাখতে পারি?
নিশ্চয়ই, মিসেস বললেন।
শেষ কবে তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে? জানতে চাইলেন ফ্লেচার।