তার সঙ্গে একমত হলো অনেকেই।
কিশোর আর মুসা অপেক্ষা করতে লাগল। ভুয়া চিত্র প্রযোজকের সম্পর্কে আর কেউ কিছু মনে করতে পারে কিনা সে সুযোগ দিল।
কেউই কিছু বলতে পারল না আর।
.
১২.
রাতেই রকি বীচে পৌঁছলেন ডিকসনরা। ইয়ার্ডে এলেন সকাল আটটায়। বিধ্বস্ত চেহারা। চোখ লাল। চীফ ইয়ান ফ্লেচারের সঙ্গে দেখা করেই এসেছেন।
তাদের অবস্থাটা বুঝতে পারলেন মেরিচাচী। আদর করে বসিয়ে নাস্তা-টাস্তা এনে দিলেন। তবে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলেন না। মেয়েকে ফিরে না পেলে অহেতুক সান্ত্বনা দিয়ে মা-বাবার মন শান্ত করা যাবে না।
কেউ কিছুই দেখেনি এটা বিশ্বাসই করতে পারছি না, ডিকসন বললেন। পড়শীদের সঙ্গে কথা বলেছেন চীফ। ওই লোকদুটোর সঙ্গে ডলিকে বেরোতে দেখেনি কেউ। রোজার যে গাড়িটা নিয়ে এসেছিল সেটা রেজিস্ট্রি করা হয়েছে জনৈক ডক সাইমারের নামে। সাইমার আবার বিক্রি করে দিয়েছে পিটারের কাছে। পিটার আর নিজের নামে রেজিস্ট্রি করায়নি। কাজেই লাইসেন্স নম্বরে সুবিধে হয়নি। গাড়িটা ধূসর রঙের, এটুকুই জানি আমরা। ডলি যেখানে চাকরি করত সেখানেও খোঁজ নিয়েছি। যে বুড়িটা জবাব দিল, সে ভাল করে কথাও বলতে চায়নি।
শেষ দিকের কথাগুলো তিক্ত শোনাল তাঁর।
মিস্টার ডিকসন, মেরিচাচী বললেন। আপনারা দুজনেই ক্লান্ত। কয়েকদিন এখানেই থেকে যান না? আমাদের ঘর আছে। থাকতে অসুবিধে হবে না। এ
ধন্যবাদ। তার দরকার হবে না, জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেন ডিকসন। রকি বীচ ইনে ঘর ভাড়া করেছি আমরা। ওখানেই থাকতে পারব। চীফের ফোনের অপেক্ষা করব। বাড়িতে একজনকে রেখে এসেছি ফোন ধরার জন্যে। কিছু জানলে সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবে। কিডন্যাপাররা যদি ফোন করে, খবর দেবে। হয়ত মেয়েকে ছেড়ে দেয়ার বিনিময়ে কিছু টাকাটুকা চাইবে।
ঘোরের মধ্যে রয়েছেন যেন, এমন ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালেন মিসেস।
তুমি আর তোমার বন্ধুরা অনেক করেছ আমাদের জন্যে, কিশোরকে বললেন। ডিকসন। থ্যাঙ্কস।
স্ত্রীর হাত ধরে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন তিনি।
ওয়ার্কশপে চলে এল কিশোর। দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে। মুসা আর রবিন এসে বসে আছে।
ফাইলিং কেবিনেটে পিঠ দিয়ে মেঝেতে বসেছে মুসা। চোখে ঘুম। ডিকসনদের গাড়িটা দেখলাম অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। রবিনকে ফোন করলাম সে জন্যেই। আর কিছু ঘটেছে?
না, নিজের ডেস্কের ওপাশে গিয়ে বসল কিশোর। রকি বীচ ইনে উঠেছেন। ডিকসনরা। ডলির খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত যাবেন না।
খোঁজটা পেয়ে গেলেই ভাল, রবিন বলল। নোটবুক বের করল। দেখে নিয়ে। বলল, এ যাবৎ যা যা করেছি আমরা, কোনটাতেই ফল হয়নি। যেখানে শুরু সেখানেই শেষ, এই হয়ে যাচ্ছে অবস্থা।
অনেক কিছুই মিলছে না, কিশোর বলল। ওই লোকদুটো ডলিকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারে। ঠিক। কিন্তু সব কিছুর জন্যেই একটা মোটিভ লাগে। কেন নিল? উদ্দেশ্যটা কি? কিডন্যাপিং হলে মুক্তিপণ চাইছে না কেন? আর যদি নিয়েই থাকে নেয়ার অনেক সুযোগ পেয়েছে আগেই। কেন একটা পার্টি দিয়ে, লোক জানাজানি করে এরকম একটা কাজ করতে গেল?
দুহাতের আঙুলের মাথা এক করে ছোট একটা খাঁচার মত তৈরি করল সে। তারপর রয়েছে সেই রহস্যময় চোরটা। যে লেসিং হাউসে ঢুকেছিল, ডলির সঙ্গে রোজার আর রিভস দেখা করার আগেই। ওই দুজনেরই একজন চোরটা ছিল কিনা। কে জানে। তাহলে প্রশ্নঃ কেন ঢুকেছিল? ডলির জন্যে? নাকি লেসিং হাউস থেকে কিছু চুরি করতে?
কাকতালীয় না তো? রবিন বলল। সেই বন্ধকী দোকানের মায়ানেকড়েটার মত??
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল মুসা। সারা দিন ধরে চিবালেও এই রহস্যের মধ্যে ছিবড়ে ছাড়া আর কিছু মিলবে না।
প্ল্যাস্টিকের সেই ব্যাগ, যেটা সৈকতে কুড়িয়ে পেয়েছিল ওরা, এখনও অফিসেই রয়েছে। চেশায়ার স্কোয়ারে ডলির সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময় ওটা নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিল। ফাইলিং কেবিনেটের ওপর থেকে নামিয়ে এনে ভেতরের জিনিসগুলো টেবিলে ঢেলে দিল রবিন। মেকাপের সরঞ্জাম, লাইব্রেরির বই আর খেলনা ভালুকটার দিকে এমন ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল, যেন ওগুলো কোন সূত্র বলে দেবে। কিংবা বলবে ডলি এখন কোথায় আছে। কালো নিপ্রাণ দৃষ্টি মেলে ভালকটা তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে।
বইটা তুলে নিয়ে আনমনে পাতা ওল্টাতে লাগল কিশোর। কিছু কিছু পৃষ্ঠায় লেখার নিচে দাগ দেয়া রয়েছে। বিড়বিড় করে ইংরেজিতে যা পড়ল সে, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়, প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে সাফল্য, ভালবাসা, ধনী এই শব্দগুলো ঘন ঘন আওড়াবে। সূর্য যেমন উঠবেই, তেমনি নিশ্চিত করে জেনে রাখো, সাফল্য, ভালবাসা আর অগাধ সম্পদের মালিক হয়ে যাবে তুমি।
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসল ওরা।
ভালুকটাকে চোখের সামনে নিয়ে এল মুসা। বলল, তুমিও এই বইয়ের কথা মেনে চলতে পার। ভাবতে থাকো, কাল থেকে গভীর বনের বাতাসে শ্বাস নেবে। বুক ভরে। কে জানে, কাল সকালেই হয়ত খেলনা ভালুক থেকে জ্যান্ত ভালুকে পরিণত হবে তুমি।
আরেকবার হেসে উঠল ওরা।
বাড়ি রওনা হয়ে গেল রবিন আর মুসা।
কিশোর বসেই রইল। বসে বসে ভাবতে লাগল। তাকিয়ে রয়েছে ভালুকটার। দিকে। তার মনে হচ্ছে, কোথাও কিছু একটা সূত্র অবশ্যই রয়েছে, যেটা চোখ। এড়িয়ে যাচ্ছে ওদের। ওটা পেয়ে গেলেই ডলিকে বের করার ব্যবস্থা করতে পারবে।