পিজা শ্যাকে পৌঁছল দুজনে।
একই রকম ভাবে মিউজিক বাজছে, জোরে জোরে। ভিডিও গেম খেলছে ছেলেমেয়েরা। হৈ চৈ করছে। ছোট ছোট টেবিল ঘিরে বসে খাচ্ছে অনেকে। অর্থহীন কথার ফুলঝুরি ছোটাচ্ছে।
সেদিন পার্টিতে গিয়েছিল এরকম একটা ছেলে কিশোর আর মুসাকে দেখেই চিনল।
অ্যাই! হাত নেড়ে ডাকল সে। হাসল। তার কাছে গিয়ে বসতে বলল। চিনতে পার? সেদিন পার্টিতে দেখা হয়েছিল। তো, আছ কেমন?
আছি একরকম, জবাব দিল কিশোর। ডলিকে খুঁজতে এলাম।
ডলি? ও আচ্ছা, বেটির কথা বলছ। কি হয় তোমার? বোন?
না। কিছু হয় না।
ও, কিছুটা অবাকই হলো যেন ছেলেটা।
তার পাশের চেয়ারটায় বসল কিশোর। মুসা বসল উল্টো দিকে, ওদের দিকে মুখ করে।
চেশায়ার স্কোয়্যার থেকে নিখোঁজ হয়েছে ভলি, ছেলেটাকে জানাল কিশোর। আমাদের ধারণা, কিডন্যাপ করা হয়েছে।
হাঁ হয়ে গেল ছেলেটা। যাহ,ঠাট্টা করছ।
মাথা নাড়ল কিশোর। আজ সকালেও লেসিং হাউসে ছিল ডলি। দারোয়ানের সঙ্গে কথা বলেছে। রোজার দেখা করতে এল তার সঙ্গে। সাথে করে রিভসকেও এনেছিল। তারপর থেকে আর পাওয়া যাচ্ছে না মেয়েটাকে।
এক সেকেণ্ড চুপ করে রইল ছেলেটা। তারপর চেঁচিয়ে ডাকল, অ্যাই, শুনে যাও তোমরা। এরা কি বলছে শুনে যাও।
বন্ধ হয়ে গেল ভিডিও মেশিন। সরাই এসে ঘিরে দাঁড়াল কিশোরদেরকে, গল্প শোনার জন্যে। কাউন্টারের ওপাশে ওয়েইট্রেস মহিলাও গলা বাড়াল।
ডলির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটা খুলে বলল কিশোর। খুঁটিনাটি কিছুই বাদ না দিয়ে। শেষে বলল, রোজার আর রিভস তাকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যেতে পারে। রোজারের সঙ্গে নিশ্চয় তোমাদের কারও কারও পরিচয় হয়েছে। লোকটা একটা ভুয়া। নামটাও আসল কিনা সন্দেহ আছে। ফলে তাকে ধরাটাও মুশকিল। তোমাদের কারও কি কিছু জানা আছে?
চুপ করে আছে সবাই।
দরজা খুলে ঢুকলেন ধূসর চুলওয়ালা লোকটা। ম্যানেজার। কিশোর আর মুসাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন ছেলেমেয়েদেরকে।
কি হয়েছে? ওয়েইট্রেসকে জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
ওদের বন্ধুর কথা আলোচনা করছে, মিস্টার জেনসেন, মহিলা বলল। এত সুন্দর একটা মেয়ে, হারিয়ে গেল। কত আসত এখানে। ভিডিও গেম খেলত। সবার সঙ্গে হাসিঠাট্টা করত। ওরা বলছে, ওকে নাকি তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কিডন্যাপ? ভুরু কুঁচকে গেল ম্যানেজারের।
তাই তো বলছে।
মহিলার দিকে ঘুরে তাকাল কিশোর। রোজার সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন? এখান থেকে অনেক পিজা নিয়েছিল।
মাথা ঝাঁকাল মহিলা। বিশেষ কিছু জানি না। তবে ওকে পছন্দ হয়নি আমার। এদের বন্ধু হওয়ার বয়েস নয় ওর।
হলিউডের অনেক বড় প্রযোজক ও, একটা ছেলে বলল। ও নিজেই বলেছে। বেটির অনেক প্রশংসা করে বলেছে, ও নাকি অভিনয়ে সাড়া জাগাতে পারবে।
এখানেই দেখা করেছে? কিশোর জানতে চাইল।
হ্যাঁ। সাথে করে নিয়ে এসেছে বোকা লোকটাকে। আলাদা হয়ে গিয়ে ফিসফাস করে কথা বলেছে রেটির সঙ্গে। এমন ভান করেছে যেন বেটিকে পেয়ে হাতে সোনার বার পেয়ে গেছে।
ভিড় সরিয়ে এগিয়ে এল একটা মেয়ে। একটা চেয়ার খালি রয়েছে, তাতে বসল।
বেটির মাথায়ও বোধহয় ছিটটিট আছে। বাস্তবতা বোঝে না, কল্পনার রাজ্যে ঘুরে বেড়ায়। কি বলছি বুঝতে পারছ? ওর ধারণা, ও ভাল অভিনেত্রী হতে পারবে। কাজেই লোকটা এসে যখন বলল, লাফিয়ে উঠল একেবারে। তারপর আর কি? লোকগুলোর সঙ্গে খাতির করে ফেলল। একসাথে বসে পিজা খেতে লাগল। লোকগুলো অনেকক্ষণ কথাটথা বলার পর আমাদের সবাইকে ডেকে বলল, বেটসির নতুন কাজটাকে সেলিব্রেট করার জন্যে একটা পার্টি দেবে।
বুঝলাম না,মুসা বলল। সবাইকে দাওয়াত করতে গেল কেন?
ওসব এক ধরনের চালিয়াতি। হয়ত ভেবেছে, এরকম ধুমধাম করলে বেটি তাকে বিশ্বাস করবে। কোন সন্দেহ থাকবে না। সবাইকে নিয়ে হৈ-হুঁল্লোড় করলে। তাড়াতাড়ি সহজ হয়ে আসবে বেটি।
কিশোর আর মুসার মুখের দিকে তাকাল মেয়েটা। কেন যেন মনে হচ্ছে, মিস লেসিঙের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্যেই ওকাজ করেছে লোকটা। একা নিয়ে যেতে চাইলে নতুন পরিচিত একজনের সঙ্গে যেতে যদি রাজি না হয় বেটি, সে জন্যেই সবাইকে নিয়ে গেছে। পঞ্চাশ জনের কম ছিল না।…ইয়ে, সত্যিই হারিয়ে। গেছে বেটি?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
চিন্তিত দেখাল মেয়েটাকে। বিউটি পারলারে, যেখানে সে কাজ করে, টেলিফোন করেছিলাম। ওরা জানাল, আজ নাকি যায়নি। আর বেশ গরম গরম কথাই শুনিয়ে দিল। ওর বাবা-মা কোথায় এখন?
তারা ফ্রেনসোতে ফিরে গিয়েছিলেন, কিশোর বলল। আবার হয়ত রওনা হয়ে পড়েছেন এখানে আসার জন্যে। বাড়িতে ফোন করেছিলাম। পাইনি।
লোকটার নাম রোজার নয় কেন মনে হলো তোমার? ভিড়ের মধ্য থেকে জিজ্ঞেস করল একটা ছেলে।
কারণ আজ সকালে আসল ইয়ান রোজারের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমাদের।
রোজার? লোকটা তার নাম রোজার বলেছে? কিন্তু তার দোস্ত তো অন্য নামে। ডাকছিল। অদ্ভুত একটা নাম!
ডেগি, বলল আরেকটা মেয়ে। হ্যাঁ, ডেগি বলেই ডাকছিল।
ডেগি? কাউন্টারের ওপাশ থেকে বলে উঠলেন ম্যানেজার।
সবাই ফিরে তাকাল তার দিকে।
ডেগি! গম্ভীর হয়ে গেছেন মিস্টার জেনসেন। এটা কি রকম নাম হলো? মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, ওরকম নামের একটা লোক ভাল হতেই পারে না। খারাপ লোক। খুব খারাপ। এত সুন্দর মেয়েটাকে ধরে নিয়ে গেল! কোন্ দুনিয়ায় বাস করছি আমরা।