আলমারির কাছে একটা পুরানো বালিশ দেখতে পেল অফিসার। ওটাই মেরিচাচীর মুখে চেপে ধরা হয়েছিল বলে অনুমান করা হল। জিজ্ঞেস করল, লোকটা কতক্ষণ ছিল, আন্দাজ করতে পারবেন? ক্যাশবাক্স ছোয়নি সে। দামী আরও অনেক জিনিস আছে, ইচ্ছে করলে নিতে পারত। নেয়নি। যেন কোন কারণে ভয় পেয়ে পালিয়েছে।
ভয়! ভয় তো কাকে বলে জানেই না সে! জানাব! একবার ধরতে পারলে হয়!–ঘোষণা করে দিলেন মেরিচাচী। ঠিক বলতে পারব না, তবে মনে হয় বেশ কিছুক্ষণ ছিল। কিশোর আসার একটু আগে গেছে। কিশোর যে ঢুকেছে, টের পেয়েছি আমি। ভেবেছি, চোরটাই। সে না ডাকলে বুঝতে পারতাম না।
অফিসার আর তার সহকারী সূত্র খুঁজতে শুরু করল। ডাইনিং রুমের জানালার একটা পর্দা খুলে নিচে পড়ে আছে।
এদিক দিয়েই ঢুকেছে মনে হয়, কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল একজন অফিসার। চুরি করতে যা যা সরাতে চেয়েছিল সরানোর আগেই ঢুকে পড়েছিলেন তোমার চাচী। তাকে আটকে ফেলার পরেও আর বেশি সময় পায়নি। কিংবা এত বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিল, কাজটা আর ঠিকমত সারতে পারেনি। চুরি করতে ঢুকলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে এমনিতেই চোরের কলজে কাপে। অনেক সময় অকারণেই ভয় পেয়ে পালায়।
চোরাই ডেকসেটটা উদ্ধারের ভরসা দিতে পারল না পুলিশ। তবু মেরিচাচীকে বলল, সাধ্যমত চেষ্টা করবে বের করার। বলে চলে গেল। ওরা যাওয়ার একটু পরেই রাশেদ পাশা এসে ঢুকলেন। কিশোর তখন অগোছাল জিনিসগুলো গুছিয়ে শেষ করেছে। পর্দাটা লাগাচ্ছে রোভার।
কাজ শেষ করে ওয়ার্কশপে চলল কিশোর। ঢুকে দেখল, মুসা এসেছে। সাইকেলটা স্ট্যাণ্ডে তুলে রাখছে।
পুলিশকে যেতে দেখলাম, মুসা বলল। এখানেই এসেছিল নাকি?
হ্যাঁ। রকি বীচে মনে হয় চোরের উপদ্রব বেড়েই গেল। দুদিন আগে মিস লেসিঙের বাড়িতে ঢুকেছিল। আজকে ঢুকেছে আমাদের বাড়িতে। মেরিচাচীকে আলমারিতে আটকে রেখেছিল।
কি বললে?
সংক্ষেপে জানাল কিশোর।
হা হা করে হাসতে লাগল মুসা। আল্লাহ না করুক, চোরটা যদি ধরা পড়ে তবে ওর কপালে দুঃখ আছে। হা হা! আর লোক পায়নি, শেষকালে মেরিচাচীকে..হাহ হা!
কিশোরও হাসল।
তা মেরিচাচীর চোরটাকে খুঁজতে বেরোবে নাকি?
না। পুলিশই যা করে করুক। মনে হচ্ছে সাধারণ চোর।
তার মানে ডালিয়া ডিকসনের কেসেই শুধু আপাতত মাথা ঘামার আমরা?
জবাব দেয়ার আগে ভাবল কিশোর। সেটাও পারব কিনা বুঝতে পারছি না। চীফ তো আমাদেরকে প্রায় তাড়িয়েই দিলেন। তার মানে তিনি চান না ডলিকে নিয়ে মাথা ঘামাই আমরা। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার সে। উজ্জ্বল হলো মুখ। তবে, তার বাবা-মাকে ফোন করতে পারি আমরা। যা যা ঘটেছে, জানাতে পারি।
আমরা মানে কি? আমাকে এসব থেকে বাদ দিতে পার তুমি। একা পারলে করগে। ডিকসনদেরকে অপছন্দ করি আমি, তা নয়। মিস্টার ডিকসন ঠিকই আছেন, তবে মিসেস একটু বেশি লাই দেন মেয়েকে। আমার মনে হয় তার। জন্যেই খারাপ হয়েছে মেয়েটা। ভাগ্যিস আমার মায়ের ঘরে জন্মায়নি। পিটিয়ে। পিঠের ছাল তুলে ফেলত।
হাসল কিশোর। দুই সুড়ঙ্গের ঢাকনা সরাল। এসো, ভেতরে গিয়ে কথা বলি।
হেডকোয়ার্টারে ঢুকল দুজনে। ডেস্কে বসেই আগে ফ্রেনসোতে ডিকসনদের নম্বরে ডায়াল করল কিশোর। ওপাশে বেজেই চলল ফোন। রিং হচ্ছে… হচ্ছে…দশবার পর্যন্ত গুনল সে। তারপর রিসিভার নামিয়ে রেখে বলল, বাড়ি নেই। কেউ ধরছে না।
চীফ হয়ত ফোন করেছিলেন, মুসা বলল। রওনা হয়ে গেছেন ওরা। রকি বীচে আসার জন্যে।
হতে পারে।…এখন ভেবে দেখা দরকার, কি কি সূত্র আছে আমাদের হাতে? রোজারের কার্ডটা ভুয়া। প্রমাণ হয়ে গেছে। আর তার সহকারী:সহ…
চুপ হয়ে গেলে কিশোর। হাত এখনও রিসিভারে।
কি হল? কিছু ভাবছ মনে হয়?
হ্যারিসন রিভস! রোজার বলেছে, টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চুরি ফক্সে কাজ করেছে নাকি লোকটা। সত্যি বলেছে?
কিশোরের কথা শেষ হওয়ার আগেই টেলিফোন ডিরেক্টরি টেনে নিল মুসা। খুঁজতে শুরু করল। ফিল্ম স্টুডিওর নামটা বের করতে সময় লাগল না। দেখাল। সেটা কিশোরকে।
ডায়াল করল কিশোর। অপারেটরকে জিজ্ঞেস করল হ্যারিসন রিভসের নাম। কিছুক্ষণ খাতা ঘাটাঘাটি করে অপারেটর জানাল, ওই নামে, কেউ নেই। কিশোরকে জিজ্ঞেস করা হল সে কে বলছে। বানিয়ে বলে দিল কিশোর, সে রিভসের খালাত ভাই। লস অ্যাঞ্জেলেসে বেড়াতে এসেছে। ভাইয়ের ঠিকানাটা খুব দরকার।
এত মিথ্যে বলতে পারো! বিড়বিড় করে বলল মুসা।
মাউথপীসে হাত রেখে তার দিকে তাকিয়ে কিশোর জিজ্ঞেস করল, কি বললে?
জবাব শোনার আগেই ওপাশ থেকে মহিলা বলল, আরেকটা রেজিস্টার খুঁজে দেখলাম। নেই। ওই নামের কেউ নেই টোয়েন্টিয়েথ সেঞ্চরি ফক্সে।
তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাইন কেটে দিল কিশোর।
নেই। কোন সূত্রও পেলাম না, যা দিয়ে শুরু করতে পারি। দুজন লোক যেমন রহস্যজনক ভাবে দেখা দিল, তেমনি ভাবেই গায়েব হয়ে গেল আবার। সেই সঙ্গে ডলিও গায়েব।
ওই পিজা শ্যাকে আরেকবার গেলে কেমন হয়? খাওয়াও যাবে, শোনাও যাবে। ডলির পার্টিতে যারা গিয়েছিল তাদের কাউকে পেলে জিজ্ঞেস করতে পারতাম, ডলির খোঁজ জানে কিনা। রোজার আর তার হাঁদা সহকারীটার কথাও কিছু জানতে পারে।
সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তবে একেবারে কিছু না পাওয়ার চেয়ে রাজি হয়ে গেল কিশোর। বেরিয়ে এল দুজনে। সাইকেল নিয়ে চলল পিজা শ্যাকে। রবিনকে ফোন করল না ইচ্ছে করেই। জানে, করলেও লাভ হবে না। কারণ অনেক দিন পর লাইব্রেরিতে গেছে রবিন। সেখান থেকে যাবে তার চাকরির জায়গায়, মিউজিক কোম্পানিতে।