নোংরা স্বভাবের মেয়ে, মন্তব্য করল রবিন।
জিনিসগুলোর দিকে তাকিয়ে রয়েছে কিশোর। চোখ বোলাল পুরো বাথরুমে। ও বাথরুমে থাকতে ফোন বেজেছে। উঠে গিয়ে ধরেছে। জানল, গেটে দাঁড়িয়ে আছে রোজার। তাকে ছাড়তে বলল দারোয়ানকে। গায়ে কাপড় জড়িয়ে নিচে নামল দরজা খোলার জন্যে। তারপরই কিছু ঘটেছে। বিপজ্জনক কিছু। ফিরে এসে আর বাথরুমটা পরিষ্কার করতে পারেনি।
না, আমার মনে হয় ফিরে এসেছিল। লোকটার তাড়া খেয়ে এখানে এসে ঢুকেছিল। ধস্তাধস্তি হয়েছিল হয়ত। হাত লেগে উল্টে পড়েছে বোতলটা।
অতি কল্পনা করছ তোমরা, দারোয়ান বলল। অস্বস্তি বাড়ছে তার। আসলে অন্য কিছু ঘটেছে। স্বাভাবিক কিছু। মেয়েটা নোংরা। ফলে গোসল করার পর বাথরুম পরিষ্কার করেনি। পারফিউম ব্যবহার করে বোতলটা রেখেছে। উল্টে যে গিয়েছে খেয়ালই করেনি। বাথরুম এভাবে রেখেই মিস্টার রোজারকে দরজা খুলে দেয়ার জন্যে নিচে নেমে গিয়েছিল তারপর..তারপর…
তারপর কি? ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল কিশোর। তারপর কোথায় গেল? রোজারের সঙ্গেও যায়নি, পাশের বাড়িতেও যায়নি, তাহলে গেলটা কোথায়? কি হয়েছে তার?
ছোট তোয়ালেটা নজরে পড়ল রবিনের। ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে। দাঁড়িয়েছে। পায়ের কাছে রয়েছে ওয়েস্টবাস্কেটটা। তাকিয়ে রয়েছে ওটার দিকে।
এই, দেখে যাও! নিচু হয়ে তোয়ালেটা বের করে আনল সে। সাদা রঙের। এককোণে এমব্রয়ডারি করা একটা প্রজাপতি। মরচে-লাল দাগ লেগে রয়েছে।
এটার কি কোন গুরুত্ব আছে? প্রশ্ন করল রবিন যেন নিজেকেই।
একবার তাকিয়েই চোখ বড় বড় হয়ে গেল গনজাগার। রক্ত! দুই লাফে এগিয়ে এসে হাত বাড়াল তোয়ালেটার জন্যে। এখনও ভেজা। কিছু একটা ঘটেছে আজ সকালে এখানে। পুলিশে খবর দেয়া দরকার।
.
১০.
খবর পেয়ে চীফ ইয়ান ফ্লেচার নিজে এসে হাজির হলেন। অগোছালো নোংরা হয়ে থাকা বাথরুমে একবার চোখ বুলিয়েই গম্ভীর হয়ে গেলেন।
ভুরু কুঁচকে তাকালেন দারোয়ানের দিকে। সকালে একজন লোক দেখা করতে এসেছিল বলছ। গাড়ির নম্বর রেখেছ?
রেখেছি। গাডহাউসের লগবুকে লেখা আছে। কসম খেয়ে বলতে পারি, মেয়েটা ওই গাড়িতে করে বেরোয়নি।
কিন্তু কোন ভাবে তো নিশ্চয় বেরিয়েছে। নাহলে নেই কেন? নিচতলায় চললেন চীফ।
পড়শীদের সঙ্গে কথা বলব, আবার বললেন চীফ। কেউ না কেউ কিছু দেখে থাকবেই। এই, তিন গোয়েন্দাকে বললেন, তোমরা বাড়ি চলে যাও।
স্যার…বলতে গেল কিশোর।
চলে যাও। এখন আর কিছু করার নেই তোমাদের। যা করার পুলিশ করবে।
নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ফিরতে হলো তিন গোয়েন্দাকে, বিশেষ করে গোয়েন্দাপ্রধানকে। তাদেরকে ইয়ার্ডে ফিরিয়ে নিয়ে চলল হ্যানসন। কিছুক্ষণ থমথমে নীরবতা বিরাজ করল গাড়ির ভেতরে।
অবশেষে আর থাকতে না পেরে মুখ খুলল মুসা, রহস্যটা ঘোরালো হয়ে উঠছে।
কি বলতে চাও? রবিনের প্রশ্ন।
প্রথমে সৈকতে একটা ব্যাগ কুড়িয়ে পেলাম। মালিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করলাম। সহজেই হয়ে গেল কাজটা, লাইব্রেরিতে ফোন করে। কি জানলাম? ব্যাগের মালিকই হারিয়ে গেছে। তখন আবার তাকে খুঁজে বের করতে হল। করে। দিলাম। সন্তুষ্ট হতে পারলেন না বাবা-মা। আমাদেরকে তদন্ত চালিয়েই যেতে বললেন। যে লোকটা ওদের মেয়েকে কাজ দিয়েছে, তার সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে হবে। নিতে গিয়ে দেখলাম ভুয়া। গেলাম তখন মেয়েটাকে সতর্ক করতে। পারলাম না। কারণ, এখন মেয়েটাই গায়েব।
এবং এই প্রথম, যোগ করল কিশোর। রহস্যটা জমতে আরম্ভ করেছে। আরও মজা হল, পুলিশ, আমাদের বের করে দিয়েছে। নাক গলাতে নিষেধ করেছে।
করে তো ভালই করেছে। এই রহস্যের সমাধান করতে গেলে মাথাই খারাপ হয়ে যাবে।
এর চেয়ে জটিল রহস্যের সমাধান আমরা করেছি। বলে চুপ হয়ে গেল কিশোর।
আবার নীরবতা।
ছেলেদেরকে ইয়ার্ডে পৌঁছে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে গেল হ্যানসন। ইয়ার্ডের গেটের দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। বন্ধ করে রাখা হয়েছে পাল্লা। দিনের এই সময়ে, দুপুরবেলা ইয়ার্ডের গেট কখনও বন্ধ থাকে না।
চাচা-চাচী নেই নাকি? নিজেকেই প্রশ্নটা করল কিশোর।
আমি বলি কি হয়েছে, আগ বাড়িয়ে জবাব দিল রবিন। নোমে কতগুলো পুরানো বাড়ি ভেঙে ফেলার খবর পেয়েছেন রাশেদ আংকেল। ছুটে গেছেন দেখার জন্যে পুরানো পাইপ আর সিংক পাওয়া যায় কিনা।
রবিনের অনুমান ঠিক হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ এরকমই করেন রাশেদ পাশা। তবে জায়গার ব্যাপারে ভুল করেছে সে। নোম যাননি তিনি। ডাক শুনে জঞ্জালের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল দুই বেভারিয়ান ভাইয়ের একজন, রোভার। জানাল, লস অ্যাঞ্জেলেসে গেছেন একটা ভাঙা বাড়ির পুরানো মাল কিনে আনতে।
ম্যাম গেছেন রান্নাঘরে, হাত তুলে দেখাল রোভার। ঢুকেছেন অনেকক্ষণ। আমি একা। চোরের তো অভাব নেই। কখন ঢুকে কি হাতে তুলে নিয়ে যায়। কাজ। করছি। দেখতেও পারব না। তাই লাগিয়ে রেখেছি।
গেট খুলে দিল সে। জিজ্ঞেস করল, তোমরা থাকবে তো? না, আবার। বেরোবে?
থাকবে, জানাল কিশোর।
গেট আর বন্ধ করার প্রয়োজন বোধ করল না রোভার। চলে গেল নিজের। কাজে।
রবিন আর মুসা বাড়ি চলে গেল। কিশোর রইল একা। অফিসের বারান্দায়। ওঠার সিঁড়িতে বসে গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগল ডালিয়া ডিকসনের কথা। কল্পনায় ভাসছে অগোছালো বাথরুম। কি ঘটেছিল? চেশায়ার স্কোয়্যার থেকে মেয়েটাকে বেরিয়ে যেতে দেখেনি দারোয়ান। রোজারের গাড়ির বুটে লুকিয়ে থাকেনি তো? নাকি একাই কোনভাবে বেরিয়ে পালিয়েছে আবার? ভোয়ালেতে রক্তের দাগের কি অর্থ?