.
০৯.
চেশায়ার স্কোয়্যারের গেটে এসে থামল রোলস রয়েস। ডিউটিতে রয়েছে লুই গনজাগা। তার ছোট্ট ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রইল বিশাল গাড়িটার দিকে।
ছেলেদের ওপর চোখ পড়তেই প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, আরিব্বাপরে, কি গাড়ি নিয়ে এসেছ! সত্যি বলছি, অবাক করেছ আমাকে! বেটসি জানে এটার কথা? নাকি সারপ্রাইজ দিতে এসেছ?
সারপ্রাইজ তো বটেই, মুসা বলল। আমরা যা বলতে এসেছি, শুনলে রীতিমত ভরকে যাবে। কারেন্টের শক খেলেও অতটা চমকাবে না।
ঘরে আছে? জানতে চাইল কিশোর।
আছে। লম্বা চুলওয়ালা লোকটা আর তার উজবুক সহকারীটা এসেছিল খানিক আগে। চলে গেছে। দাঁড়াও, ডাকছি।
ছোট ঘরে ফিরে গেল দারোয়ান। জানালা দিয়ে দেখা গেল, টেলিফোন করছে। কানে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ। আছে তো আছেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অবশেষে নামিয়ে রাখল।
ধরছে না কেউ, জানাল দারোয়ান।
বাইরে-টাইরে যায়নি তো? রবিনের প্রশ্ন।
মাথা নাড়ল গনজাগা। গেলে দেখতাম।
সতর্ক হয়ে উঠল কিশোর। মিস্টার রোজারের সঙ্গে বেরোয়নি তো? ঠিক দেখেছেন?
না, বেরোয়নি। রোজারের সঙ্গে গেছে হাঁদাটা। মোটকা, কোকড়াচুলো। বেটি যায়নি।
উদ্বিগ্ন হলো দারোয়ান। তার ওপর আদেশ রয়েছে, ভালমত না জেনে, না চিনে যাতে স্কোয়্যারে কাউকে ঢুকতে না দেয়। দেখি, আবার চেষ্টা করি।
আবার গিয়ে ঘরে ঢুকল সে। রিসিভার তুলে বোতাম টিপল। কানে ঠেকিয়ে অপেক্ষা করল। এবারেও সেই একই ব্যাপার। ধরল না কেউ। হাত নেড়ে রোলস রয়েসটাকে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিল সে। কিশোররা নিজেই গিয়ে যাতে দেখতে পারে।
দরজায় ধাক্কা দেবে, বলে দিল সে। না খুললে গিয়ে দেখবে সুইমিং পুলে। কোথাও না পেলে সোজা চলে আসবে আমার কাছে। তারপর দেখব কি করা যায়।
ছোট পার্কটার কাছে এনে গাড়ি রাখল হ্যানসন। নীরব হয়ে আছে লেসিং হাউস। আগের সন্ধ্যার মত সরব নয়। তবে পাটি যে একটা হয়েছিল, তার চিহ্ন এখনও রয়েছে। কাগজের কাপ, প্লেট, মোড়ক আর নানারকম জঞ্জাল পড়ে রয়েছে। এখানে ওখানে, ঝোপঝাড়ের নিচে। হাঁটার সময় পায়ের নিচে পড়ছে।
প্রথমে কলিংবেলের বোতাম টিপল কিশোর। কয়েকবার টিপেও কারও সাড়া পেল না। দরজা খুলতে এল না কেউ।
ডলি নেই, রবিন বলল।
কিছু একটা গোলমাল হয়েছে, বলল কিশোর। আমি শিওর।
আমি গেটে যাচ্ছি, মুসা বলল। দারোয়ানের কাছে নিশ্চয় মাস্টার কী আছে।
দৌড় দিল সে। রোলস রয়েসটার পাশ কাটাল। ভেতরে অপেক্ষা করছে হ্যানসন।
কিশোর আর রবিন বাড়ির পাশ ঘুরে এগোল। দেখল, বাইরে কোথাও আছে কিনা ডলি। পেল না।
আবার সামনের চত্বরে ফিরে এসে দেখল দারোয়ানকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুসা। হ্যানসনও নেমে এসেছে গাড়ি থেকে। সবাই উৎকণ্ঠিত। মাস্টার কী আছে দারোয়ানের কাছে। দরজার তালা খুলল। হলে ঢুকল সবাই। আগের সন্ধ্যার পার্টির চিহ্ন এখানেও রয়েছে।
ডলি! চিৎকার করে ডাকল কিশোর।
জবাব দিল না কেউ।
খুঁজতে আরম্ভ করল ছেলেরা। নিচতলাটা দেখতে বেশি সময় লাগল না। তারপর ওপরতলায় চলল ওরা। তাদের সঙ্গে চলল লুই গনজাগা। হ্যানসন। নিচতলায় পাহারায় রইল।
ওপরতলার দরজাগুলো বন্ধ। একের পর এক খুলতে লাগল দারোয়ান। ভেতরে উঁকি দিল ছেলেরা। আবছা অন্ধকার, অব্যবহৃত বেডরুমগুলোর পর্দা টানা। হলের শেষ মাথায় একটা ঘর দেখা গেল, যেটা হরদম ব্যবহৃত হয় বলে। মনে হল। বেশ বড় একটা বিছানা। লাল রঙের চাঁদরের একটা ধার ওল্টানো। একজোড়া চপ্পল যেন ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে চেয়ারের নিচে। বিছানার পায়ের কাছটায়। পড়ে রয়েছে একটা মখমলের আলখেল্লা।
একটা জানালার পর্দা টেনে দিল গজাগা। রোদ এসে পড়ল ভেতরে। আলোকিত হয়ে গেল ঘরটা।
মনে হচ্ছে এটাই মিসেস লেসিঙের ঘর, দারোয়ান অনুমান করল। এই বেডরুমটাই ব্যবহার করেন। ড্রেসিং টেবিলের দিকে তাকাল। ছোট একটা ট্রেতে সাজানো রয়েছে নানারকম পারফিউমের শিশি। বেটি মেয়েটা ভাল। এঘরে নিশ্চয় ঢোকে না সে। জিনিসপত্র ব্যবহার করে না। করে থাকলে ঠিক করেনি।
ঘুরতে শুরু করল মুসা। টান দিয়ে একটা দেয়াল আলমারির পাল্লা খুলল। ভেতরে এত জায়গা, ছোটখাট একটা বেডরুমই বলা চলে। কাপড় বোঝাই
মিসেস লেসিং না ইউরোপে চলে গেছেন? ভুরু কুঁচকে বলল মুসা। কি নিয়ে। গেলেন তাহলে? সবই তো ফেলে গেছেন মনে হচ্ছে?
তার কথার জবাব দিল না কেউ। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটছে কিশোর। তাকিয়ে রয়েছে কার্পেটের দিকে। হঠাৎ জিজ্ঞেস করল দারোয়ানকে, আর কোন গেট আছে? স্কোয়্যার থেকে বেরোনোর?
আছে। আবর্জনার গাড়ি আর ডেলিভারি ভ্যানগুলো ঢোকে ও পথে। সব সময় তালা দেয়া থাকে। প্রয়োজনের সময় খুলে দেয়া হয়।
চাবি কার কাছে?
চাবি নেই। ঢোকার দরকার হলে আমাকে খবর পাঠায়। গার্ডহাউসে বসে সুইচ টিপে খুলে দিই।
পাশের বাড়ির কারও সঙ্গে দেখা করতে গেছে হয়ত ডলি, রবিন বলল।
মনে হয় না। এখানে কারও সঙ্গে মেলামেশা নেই ওর।
আরেকটা দরজা খুলল মুসা। আশা করেছিল আরেকটা আলমারি দেখবে। তা। নয়। ওটা বাথরুম। মার্বেল পাথরে তৈরি বাথটাবে উপচে পড়ছে সাবানের ফেনা। সাবানের গন্ধে বাতাস ভারি। মার্বেল পাথরে তৈরি একটা কাউন্টারের ওপর বসানো হয়েছে দুটো সিংক, ওগুলোতে নানারকম শিশিবোতল আর জার। উল্টে রয়েছে একটা বোতল। মার্বেলের কাউন্টারে পড়েছে হলদেটে তরল, সেখান থেকে ফোঁটা ফোঁটা ঝরছে মেঝেতে।